ওয়ার্ল্ড ইনসাইড

জার্মানির নাগরিকত্ব পেতে ইসরায়েলকে সমর্থনের শর্ত নিয়ে বিতর্ক


প্রকাশ: 10/12/2023


Thumbnail

জার্মানির নাগরিকত্বের জন্য সাক্সনি-আনহাল্ট রাজ্যে নাগরিকত্বের আবেদনের ক্ষেত্রে নতুন শর্ত যুক্ত করা হয়েছে। কেউ আবেদন করলে তাকে ইসরায়েল রাষ্ট্রের অস্তীত্ব ও অধিকারকে স্বীকৃতি দিতে হবে। আবেদনকারীকে লিখিতভাবে জানাতে হবে যে তিনি ইসরায়েলের অস্তিত্বের অধিকার স্বীকার করেন। এমনটি না করলে নাগরিকত্ব দেওয়া হবে না। তবে শর্তের মধ্যেমে নাগরিকত্ব দেয়ার এ নিয়ম নিয়ে তৈরি হয়েছে বিতর্ক। 

সাক্সনি-আনহাল্টের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী তামারা জিশাং সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোকে এ নির্দেশনার বিষয়ে অবহিত করেছেন। বাকি ১৫টি রাজ্যের প্রতিও একই নিয়ম আরোপের জন্য গত বুধবার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। অন্য রাজ্যগুলোতেও এই নিয়ম চালুর ব্যাপারে আলোচনা চলছে।

প্রয়োজনীয় শর্ত পূরণ না করাসহ নানা কারণে জার্মানিতে বছরে দুই হাজারের বেশি নাগরিকত্বের আবেদন বাতিল হয়। সাক্সনি-আনহাল্টে এরই মধ্যে নাগরিকত্বের বিপুল আবেদন জমা রয়েছে। রাজ্যের কোনো কোনো জায়গায় আবেদনের প্রক্রিয়া শেষ করতে দুই বছর বা এর বেশি সময় লাগে। 

নাগরিকত্বের সিদ্ধান্ত রাজ্যের অধীন

জার্মানীর নাগরিকত্ব দেওয়ার অধিকার শুধুমাত্র রাজ্যের হাতে রয়েছে। তবে দেশটির নাগরিকত্ব আইন নির্ধারণ করে দেশটির কেন্দ্রীয় সরকার। জার্মানীর ১৬টি রাজ্য আলাদাভাবে নাগরিকত্ব প্রদান করে থাকে। ফলে নতুন এ শর্তের বিষয়টিও নির্ধারন করবে রাজ্যগুলো। 

জার্মানির নাগরিকত্ব আইন কেন্দ্রীয়ভাবে নির্ধারিত হলেও এর বাস্তবায়ন  নাগরিকত্বের ক্ষেত্রে ইসরায়েল–সংক্রান্ত একই ধরনের শর্ত আরোপের প্রস্তাব রয়েছে জার্মান পার্লামেন্ট বুন্দেসটাগেও। সেখানে সিদ্ধান্ত গৃহীত হলে পুরো জার্মানিতেই তখন নিয়মটি কার্যকর হবে।

জিশাং বলেছেন, ইহুদিদের প্রতি ঘৃণা এবং ইহুদিবিদ্বেষ বাদ দিয়ে মানুষের মর্যাদা ও স্বাধীনতার অধিকার নিশ্চিত করার জন্য এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ইসরায়েলের ওপর গুরুত্বারোপ কোনো চাপ নয়।

রাজ্যের এ নতুন নিয়মের প্রস্তাব এনেছে মধ্য ডানপন্থী খ্রিষ্টীয় গণতন্ত্রী দল সিডিইউ। তারা সাক্সনি-আনহাল্ট রাজ্যের নতুন ডিক্রি এবং ফেডারেল পর্যায়ে এ নিয়ে আলোচনা করতে চায় । ক্ষমতাসীনেরাসহ অন্য দলগুলোরও এতে সমর্থন রয়েছে।

তবে তিনদলীয় জোট সরকার এ প্রস্তবের কার্যকারিতা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছে। তাদের মত এটি  ইহুদিবিদ্বেষের (অ্যান্টিসেমিটিজম) বিরুদ্ধে লড়াইয়ে তেমন কাজে আসবে না। বরং সাক্সনি-আনহাল্টের পদক্ষেপ বিদ্যমান অস্থির পরিস্থিতিকে আরও জটিল করবে। 

তবে জিশাং এ ব্যাপারে দ্বিমত পোষণ করে বলেছেন, এটি তাঁর রাজ্যে ইহুদিদের জীবনের ‘বিকাশের জন্য আরও সুযোগ করে দেওয়ার’ একটি উপায়।

২০১৯ সালে সাক্সনি-আনহাল্ট রাজ্যে একজন উগ্র ডানপন্থী জার্মানের হামলায় দুজন নিহত হন। ২০২০ সালে তাঁর যাবজ্জীবন সাজা হয়।

জার্মানির জাতীয় স্বার্থ

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়ে ইহুদীদের উপর জার্মান সরকারের চালানো হলোকাস্টের কারণে জার্মানরা এখন ইহুদীদের প্রতি অনুতপ্ত। এ কারণেই জার্মান ইহুদীদের স্বার্থ রক্ষায় বিভিন্ন পদক্ষেপ নিচ্ছে। জার্মান সরকার ইসরায়েলের প্রতি বরাবরই সহনশীল ও সমর্থন জ্ঞাপন করে। জার্মান সরকারের নীতিনির্ধারকেরা বরাবরই ইসরায়েলের প্রতি জার্মানির ঘোষিত দায়িত্ব সমর্থন করেন

২০০৮ সালে ইসরায়েলের পার্লামেন্ট নেসেটে দেওয়া ভাষণে জার্মানির তখনকার চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেল ইসরায়েলের নিরাপত্তাকে জার্মানির জাতীয় স্বার্থ বলে ঘোষণা দেন।

জিশাং মনে করেন, নাগরিকত্বের শর্তের বিষয়ে তাঁদের নতুন সিদ্ধান্ত জার্মানির সেই অবস্থানেরই বহিঃপ্রকাশ।

গত ৭ অক্টোবর হামাসের হামলায় ইসরায়েলে ১ হাজার ২০০ জন নিহতের ঘটনার পর বর্তমান চ্যান্সেলর ওলাফ শলৎজ আরও জোরালোভাবে একাধিকবার এ প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেছেন। তবে এ বিষয়ে জার্মানির জনগণের মধ্যে এখনো বিভক্তি রয়ে গেছে। 

নভেম্বরের শেষে আলেন্সবাখ নামে একটি গবেষণা সংস্থার জরিপে অংশগ্রহণকারীদের এক-তৃতীয়াংশ ইসরায়েলের প্রতি জার্মানির ঐতিহাসিক দায়বদ্ধতার পক্ষে মত দিয়েছেন। হামাসকে ধ্বংসে ইসরায়েলের বর্তমান অভিযানের প্রতি সমর্থন জানিয়েছেন ৩৫ শতাংশ, অন্যদিকে ইসরায়েলের সংযম প্রদর্শনের পক্ষে মত ৩৮ শতাংশের।



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭