ইনসাইড পলিটিক্স

নির্বাচন ঠেকাতে হরতাল-অবরোধেই ভরসা বিএনপির


প্রকাশ: 11/12/2023


Thumbnail

আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঠেকাতে হরতাল-অবরোধের কর্মসূচিতেই ভরসা রাখছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)। এরই ধারাবাহিকতায় ৩৬ ঘণ্টার অবরোধ কর্মসূচি দিয়েছে।

তথ্যসূত্র বলছে, গত ২৯ অক্টোবর থেকে মাঝে মাঝে দুই একদিনের বিরতি দিয়ে হরতাল-অবরোধ চালিয়ে যাচ্ছে দলটি। তাদের মূল উদ্দেশ্য নেতাকর্মীদের ‘আত্মগোপন’ অবস্থা থেকে বের করে আনা এবং চূড়ান্ত পর্যায়ের আন্দোলনের জন্য প্রস্তুত করতে।  সামগ্রিকভাবে নির্বাচন বন্ধ করাই বিএনপির মূল উদ্দেশ্য।

গণমাধ্যমসূত্র বলছে , একদফা আন্দোলনের শরিকদের পক্ষ থেকে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ দিন ১৭ ডিসেম্বর পর্যন্ত বিএনপিকে এমন প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল; কিন্তু ঢাকা মহানগর বিএনপিসহ আন্দোলন পরিচালনা ও কর্মসূচি বাস্তবায়নে জড়িত নেতারা বর্তমান বাস্তবতায় হরতাল-অবরোধের পক্ষে মতামত ব্যক্ত করেন। এ ছাড়া বর্তমান পরিস্থিতিতে হরতাল-অবরোধের কর্মসূচি কিছুটা হলেও সফল হচ্ছে। সবকিছু বিবেচনায় নিয়ে হরতাল-অবরোধের কর্মসূচিই অব্যাহত রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএনপির হাইকমান্ড।

নির্বাচন কমিশন (ইসি) ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী, আগামী ৭ জানুয়ারি একাদশ সংসদ নির্বাচনে ভোটগ্রহণ হবে। নির্বাচন বয়কট করে আন্দোলনে থাকা বিএনপির লক্ষ্য এখন ভোট ঠেকানো। এ জন্য ভোটের প্রচার শুরুর দিন ১৮ ডিসেম্বর থেকে ৭ জানুয়ারির মধ্যবর্তী সময়কে আন্দোলনের উপযুক্ত সময় হিসেবে বিবেচনা করছে দলটি।

তথ্যসূত্রগুলো বলছে, এ সময়ে হরতাল-অবরোধের ফাঁকে ফাঁকে বিএনপিপন্থি পেশাজীবী বিভিন্ন সংগঠনের ব্যানারে মানববন্ধন, প্রতিবাদ সমাবেশ, বিক্ষোভ সমাবেশের মতো কর্মসূচি চালু থাকবে। চলতি মাসের শেষ সপ্তাহ পর্যন্ত এভাবে আন্দোলন এগিয়ে নিতে চায় বিএনপি। এই সময়ের মধ্যে ঢাকায় বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ভবন ঘেরাওয়ের বিষয়টি বিবেচনায় রয়েছে বিএনপি ও যুগপতে থাকা মিত্রদের। আর জানুয়ারির শুরু থেকে শক্তভাবে হরতাল-অবরোধের কর্মসূচি পালনের পরিকল্পনা রয়েছে দলটির। ওই সময়ে দীর্ঘদিনের মিত্র জামায়াতকে যুগপৎ আন্দোলনে সম্পৃক্ত করারও চিন্তা-ভাবনা করছে বিএনপি। সাংগঠনিক শক্তি বিবেচনায় চূড়ান্ত আন্দোলনে জামায়াতকে ‘স্ট্রাইকিং ফোর্স’ হিসেবে পাশে চায় দলটি। বিশেষ করে নির্বাচন ঠেকাতে ২০১৪ সালের মতো জামায়াতের সক্রিয় ভূমিকা আশা করছেন দলটির নীতিনির্ধাকরা। একই সঙ্গে এবার চরমোনাই পীরের দল ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশকেও সম্পৃক্ত করার চেষ্টা করছে তারা।

বিএনপি নেতারা বলছেন, ভোট ঠেকাতে বিশেষ পরিকল্পনা রয়েছে তাদের। শেষ পর্যন্ত নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলে ভোটের পরে মাসব্যাপী কর্মসূচি অব্যাহত রাখা হতে পারে। তারা মনে করছেন, বিএনপিসহ বিরোধী দলগুলোকে বাইরে রেখে শেষ পর্যন্ত নির্বাচন হলেও তা আন্তর্জাতিক বিশ্বের কাছে গ্রহণযোগ্যতা পাবে না। কারণ এবার বিদেশিদের চাওয়া, গ্রহণযোগ্য ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন। সুতরাং ভোটের পরে আন্দোলন অব্যাহত রাখলে আন্তর্জাতিক বিশ্বের প্রবল চাপ এবং বিরোধী দলগুলোর দাবির পরিপ্রেক্ষিতে সরকার অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন দিতে বাধ্য হবে। তবে কেউ কেউ বলছেন,  সামগ্রিকভাবে নির্বাচন বন্ধ করাই বিএনপির মূল উদ্দেশ্য।

এদিকে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবস ঘিরে গতকাল রোববার ঢাকাসহ সারা দেশের জেলা সদরে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছে বিএনপি। দীর্ঘ ৪৩ দিন পর প্রকাশ্য এই কর্মসূচির মধ্য দিয়ে রাজপথে নেতাকর্মীদের জমায়েত করেছে দলটি।  টানা ১ মাসের বেশি সময় হরতাল-অবরোধের মতো কর্মসূচি বাদ দিয়ে এ দিন সকাল ১১টায় জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনের ফুটপাতে বিএনপির নেতাকর্মীরা মানববন্ধনে দাঁড়ায়। 

একই দিন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী ৩৬ ঘণ্টার অবরোধ কর্মসূচি ঘোষণা করে। পরে জামায়াতে ইসলামী, এলডিপিও (লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি) একই সিদ্ধান্তের কথা জানায়। রিজভী একটি গণমাধ্যমকে বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতা ধরে রাখতে দেশবাসী ও বিশ্ববাসীকে দেখাচ্ছে যে, আমরা গণতন্ত্রে বিশ্বাস করি, আমরা নির্বাচন করি। এই জালিয়াতিকে প্রতিহত করার জন্য আগামীতে আরও কর্মসূচি আসবে। এসব কর্মসূচির মধ্য দিয়ে দাবি মানতে এই সরকারকে বাধ্য করা হবে।

একদফার আন্দোলন প্রসঙ্গে বিএনপির শরীক গণতন্ত্র মঞ্চের অন্যতম শীর্ষ নেতা ও বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক গণমাধ্যমকে বলেন, ইতোমধ্যে ৩৬ ঘণ্টার অবরোধের কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছে। বুদ্ধিজীবী দিবস ও বিজয় দিবসও পালন করা হবে। আগামী কয়েকদিনের পরিস্থিতি আমরা গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করব। এর ওপর নির্ভর করবে ১৭ ডিসেম্বরের পর থেকে আমরা কী ধরনের কর্মসূচি দেব। একটা সর্বাত্মক কর্মসূচি থাকবে, এটা নিশ্চিত। আগামীতে হরতাল থাকবে, অবরোধ থাকবে নাকি হরতাল-অবরোধের সঙ্গে সমাবেশ, বিক্ষোভ সমাবেশ, ঘেরাওয়ের কর্মসূচি থাকবে, সেটা আমাদের বিবেচনার মধ্যে রয়েছে।



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭