ইনসাইড বাংলাদেশ

যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞার জন্য মরিয়া চেষ্টা বিএনপি-জামায়াত এবং সুশীলদের


প্রকাশ: 11/12/2023


Thumbnail

সকলেই ধারণা করেছিল যে, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ব্যাপারে কড়া নজরদারি রাখবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। বিশেষ করে একতরফা নির্বাচন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কোনভাবেই স্বীকৃতি দেবে না। এই নির্বাচন যুক্তরাষ্ট্রের কাছে গ্রহণযোগ্য হবে না। এরকম প্রত্যাশা থেকেই বিএনপিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলগুলো আন্দোলন করছিল। আর এই আন্দোলনের প্রধান আশার জায়গা ছিল যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের ব্যাপারে সজাগ অবস্থান রাখবে। যেকোনো বিষয়ে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করবে। বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যখন নতুন ভিসা নীতি আরোপ করেছিল এবং সেপ্টেম্বর এই ভিসা নীতির আওতায় কয়েক জনকে ভিসা নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছিল বলেও আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করেছিল, তখন বিএনপি, সুশীল সমাজ এবং অন্যান্য কোনো কোনো মহল উল্লাসে ফেটে পড়েছিল। তারা বলেছিল, সরকারের সামনে আর কোন পথ খোলা নেই। কিন্তু দেখা গেল ভিন্ন চিত্র। দৃশ্যপটে এলো ভারত এবং ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের বৈঠক, পরবর্তীতে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্করের সঙ্গে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্থনি ব্লিঙ্কেনের বৈঠকের পর পরিস্থিতি পাল্টে গেল। এর মধ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ওয়াশিংটনে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিরাপত্তা উপদেষ্টা জ্যাক সুলিভানের সঙ্গে বৈঠক করেন। পরবর্তীতে প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারী বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান দেখা করেন উপ সহকারী মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী উজয়া জেয়ার সাথে। সবকিছু মিলিয়ে পরিস্থিতি পাল্টে যেতে শুরু করে। 

গত দুই বছর ধরে বিএনপির পক্ষ থেকে যে লবিং এবং অপপ্রচার চালানো হয়েছিল সেটির উল্টো পিঠ দেখতে শুরু করে বিএনপি এবং সুশীলরা। এরপর ২৮ অক্টোবর বিএনপি যে তাণ্ডব চালায় তাতে পশ্চিমা দেশগুলো বিএনপি থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়। বিশেষ করে পুলিশ হাসপাতালে হামলা, প্রধান বিচারপতির বাসভবনে হামলা, একজন পুলিশ কনস্টেবলকে নির্মমভাবে পিটিয়ে হত্যার ঘটনাটি সকলকে স্তম্ভিত করে দেয়। এরপর থেকেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র শর্তহীন সংলাপের কথা বলেছিল এবং নির্বাচনের ব্যাপারে তাদের আগের অবস্থান থেকে আস্তে আস্তে নিজেকে গুটিয়ে নিচ্ছিল। কিন্তু এখন যখন নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হয়েছে, মনোনয়নপত্র যাচাই বাছাইয়ের কাজ চলছে, ঠিক সেই সময় বিএনপির ভাড়া করা লবিস্টফার্ম গুলো আবার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে তৎপর হয়েছে। একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র নিশ্চিত করেছে যে, বিএনপির অন্তত দুটি লবিস্ট ফার্ম এখন বাংলাদেশের নির্বাচন এবং এই নির্বাচনের আসন্ন ফলাফলের ভিত্তিতে দেশে কী ধরনের প্রতিক্রিয়া হতে পারে তা নিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাবশালী ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলছে। তারা এই নির্বাচন বন্ধের জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যেন উদ্যোগ নেয় সেজন্য দেন দরবার এবং লবিং করছে। 

শুধু বিএনপি-জামায়াতের ভাড়া করা লবিস্ট ফার্ম নয়। বাংলাদেশের সুশীল সমাজের কয়েকজনও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন জায়গায় ধর্ণা দিচ্ছেন। তারা বিভিন্ন ধরনের লেখালেখি করছেন এবং এই লেখালেখি গুলো তারা আবার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নীতি নির্ধারক মহলের কাছে বিলি বন্টন করছেন। সাম্প্রতিক সময়ে ইলিনয় স্টেট ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক একদা বাসদ নেতা ড. আলী রিয়াজ বিভিন্ন মার্কিন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের কাছে বাংলাদেশের আগামী নির্বাচনের সম্ভাব্য পরিণতি কী হবে- এ সংক্রান্ত তার বিভিন্ন লেখালেখি পাঠিয়েছেন বলে একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে। 

বাংলাদেশের আরেক বুদ্ধিজীবী বদিউল আলম মজুমদার প্রতিদিনই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন মহলের কাছে দেন দরবার করছেন যেন এই নির্বাচন বন্ধ করা হয়। কারণ এই নির্বাচন হবে একতরফা- এমনটাই মনে করছেন বদিউল আলম মজুমদার। এছাড়াও আরও কয়েকজন বুদ্ধিজীবী এবং সুশীল সমাজের প্রতিনিধি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কাছে লবিং করছেন।

বিএনপি-জামায়াত ছাড়াও এই সুশীলদের লবিংয়ের ফলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান পরিবর্তন হয় কি না কিংবা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে কোন হস্তক্ষেপ করে কি না সেটি নিয়ে বিভিন্ন মহলে নানা রকম প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। তবে একাধিক কূটনৈতিক সূত্র বলছে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আগামী নির্বাচন পর্যন্ত বাংলাদেশের সমস্ত পরিস্থিতি গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছে, যা কিছু করার তা নির্বাচনের পরেই করবে।


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭