ইনসাইড বাংলাদেশ

১৯৭১ এর ১৩ ডিসেম্বর: শত্রু থেকে মুক্ত সব জেলা


প্রকাশ: 13/12/2023


Thumbnail

১৯৭১ সালের এই দিনে দেশের প্রতিটি জেলায় উড়তে থাকে লাল-সবুজের পতাকা। শত শত পাকি সেনা আত্মসমর্পণ করে। বাঙালি বুঝে যায় বিজয় আর অধরা নেই। কুমিল্লার ময়নামতিতেই আত্মসমর্পণ করে এক হাজার ১৩৪ জন। দিনাজপুরের সৈয়দপুরে আত্মসমর্পণ করে ৪৮ পাঞ্জাব রেজিমেন্টের অধিনায়কসহ ১০৭ পাকিস্তানি সেনা। খুলনা, বগুড়া ও চট্টগ্রামে হানাদারদের সঙ্গে মুক্তিবাহিনী ও স্থানীয় মানুষের অবিরামযুদ্ধ চলে। এই দিনেই নীলফামারী, মানিকগঞ্জ ও বগুড়া জেলা পাক হানাদার মুক্ত হয়।

যুদ্ধ জয়ের নিশ্চয়তা জেনে বাংলাদেশের অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম ও প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদ এক বিবৃতিতে বলেন, ‘বাংলাদেশ থেকে জাতিসংঘের যেসব কর্মী, কূটনৈতিক, প্রতিনিধি ও বিদেশি নাগরিক নিরাপদে সরে আসতে চান বাংলাদেশ সরকার তাদের সম্ভাব্য সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা দেবে।’

১৩ ডিসেম্বর থেকেই রেডিও পাকিস্তান ঢাকা কেন্দ্রের অনুষ্ঠান বন্ধ হয়ে যায়। স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের স্টুডিওতে বসে বার্তা বিভাগীয় প্রধান কামাল লোহানী, আলী যাকের ও আলমগীর কবির ঘন ঘন সংবাদ বুলেটিন পরিবর্তন ও পরিবেশন করেন। ঢাকা ছাড়া বাংলাদেশের প্রতিটি জেলা মুক্ত।  এদিন শান্তি কমিটি, গভর্নর ডা. মালিক মন্ত্রিসভা ও স্বাধীনতাবিরোধী দালালরা তৎকালীন গভর্নর হাউসে জেনারেল নিয়াজির সঙ্গে বৈঠক চলাকালে মিত্রবাহিনীর বিমান গভর্নর হাউসে বোমাবর্ষণ করে- গভর্নর ডা. মালিক তখনই পদত্যাগ করেন এবং মন্ত্রিসভার সদস্যদের নিয়ে রেডক্রসের গাড়িতে করে নিরপেক্ষ এলাকা বলে ঘোষিত হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে এসে আশ্রয় নেয়।

১৩ ডিসেম্বর দিনটির শুরুতেই পূর্ব ও উত্তর দিক থেকে মিত্রবাহিনী ঢাকার প্রায় ১৫ মাইলের মধ্যে পৌঁছে যায়, তরুণ মুক্তিযোদ্ধা ছদ্মবেশে যে যেভাবে পারে ঢুকতে থাকে। ঢাকা নিয়ন্ত্রণে নেওয়াই তাদের চূড়ান্ত টার্গেট। এদিন মুক্তি-মিত্রবাহিনী গাজীপুরের জয়দেবপুর, টঙ্গী ও সাভার হয়ে ঢাকার উপকণ্ঠে এসে উপস্থিত হয়। লে. কর্নেল শফিউল্লাহর ‘এস’ ফোর্স ঢাকার উদ্দেশে রওনা হয়ে ঢাকার উপকণ্ঠে ডেমরা পৌঁছায়। যৌথ বাহিনীর অগ্রবর্তীসেনাদল শীতলক্ষ্যা ও বালু নদী অতিক্রম করে ঢাকার ৫-৬ মাইলের মধ্যে পৌঁছে যায়। বাংলাদেশের নিয়মিত বাহিনীর সর্বপ্রথম ইউনিট হিসেবে ঢাকার শীতলক্ষ্যার পূর্বপাড়ে মুরাপাড়ায় পৌঁছায়। বাসাবো ও খিলগাঁওএলাকার চারদিকে আগে থেকেই পাকিস্তান বাহিনী ফিল্ড ডিফেন্স বা আক্রমণ প্রতিহত করার জন্য সর্বাত্মক ব্যবস্থাসহ অবস্থান নেয়। কিন্তু ঢাকার আকাশ মিত্রবাহিনীর একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রণে থাকায় পাকিস্তানি বাহিনী তেমন সুবিধা করতে পারেনি। মিত্রবাহিনী পাকিস্তানী সামরিক অবস্থানের ওপর তীব্র বিমান আক্রমণ চালায়। অবস্থা বেগতিক দেখে জেনারেল নিয়াজি বোমাবর্ষণ বন্ধ রাখার জন্য ভারতের জেনারেল মানেকশ’র প্রতি আহ্বান জানান।

ঢাকার উত্তর দিক থেকে জেনারেল গন্ধর্ব নাগরার ব্রিগেড এবং টাঙ্গাইলে নামে ছত্রিসেনারা অবতরণ করে। পশ্চিমে ৪ নম্বর ডিভিশনও মধুমতি পার হয়ে পৌঁছে যায় পদ্মা নদীর তীরে। রাত নয়টায় মেজর জেনারেল নাগরা টাঙ্গাইল আসেন। ব্রিগেডিয়ার ক্লের ও ব্রিগেডিয়ার সান সিং সন্ধ্যা থেকে টাঙ্গাইলে অবস্থান করছিলেন। রাত সাড়ে নয়টায় টাঙ্গাইল ওয়াপদা রেস্ট হাউজে তারা পরবর্তী যুদ্ধ পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনায় বসেন।

ঠিক এর আগের দিন যারা ময়মনসিংহ দখল করেছিল, তারাও ক্রমশ ঢাকার দিকে আগুয়ান। তাদের সঙ্গে যোগ দেন হেলিকপ্টারে অবতরণকারী সেনা। হেলিকপ্টার এসেছে মেঘনা ও যমুনা দ্রুত পার হয়ে যেতে। যৌথ বাহিনীর বেশ কয়েকটি দল ঢাকামুখী। পাকিস্তান সেনাবাহিনী নানা স্থানে যৌথ বাহিনীকে পাল্টা আক্রমণ করলেও মোটেই রুখতে পারেনি। যৌথ বাহিনীর একটি অংশ খুলনার উপকণ্ঠে পৌঁছায়। হিলি থেকে এগিয়ে তারা বগুড়া শহর থেকে ১০ মাইল দূরে অবস্থান নেয়।  বগুড়ার পতন আসন্ন। চট্টগ্রামেও পাকিস্তানি বাহিনী ছত্রভঙ্গ। তাদের অনেকে আশ্রয় নেয় সেনানিবাস ও শহরের আশপাশে। চট্টগ্রাম বিমানবন্দর ও পাকিস্তানি ঘাঁটিতে ভারতীয় বিমানবাহিনী ব্যাপক বোমাবর্ষণ করে। কক্সবাজারে ধ্বংস হয় একটি গানবোট ও দুটি জাহাজ। রাঙামাটিতে ছত্রভঙ্গ পাকিস্তানি সেনারা মিয়ানমারের দিকে পালাতে থাকে।

পরাজয় আসন্ন জেনে পাক হানাদার বাহিনী ঢাকায় বসে মরণকামড়ের অপেক্ষা করতে থাকে। অকুতোভয় বাঙালিকে যখন থামানো গেলো না, তখন তারা জাতিকে মেধাশূন্য করার পরিকল্পনা হাতে নেয়। এরপর তালিকা ধরে ধরে শুরু হয় বুদ্ধিজীবী হত্যার চূড়ান্ত কমকাণ্ড। বিজয় যখন নিশ্চিত তখনই পাকিবাহিনী এবং এদেশীয় দোসররা মিলে জাতির কাণ্ডারীদের হত্যার পরিকল্পনা চূড়ান্ত করে। রাতের অন্ধকারে আটক শুরু করে কৃতি সন্তানদের।



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭