ওয়ার্ল্ড ইনসাইড

ভিয়েতনাম সফর: শি’র জন্যে আশীর্বাদ হলেও বাইডেনের জন্যে নয়!


প্রকাশ: 13/12/2023


Thumbnail

চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং ৬ বছর পর ভিয়েতনাম সফরে গেছেন। ভিয়েতনামের ক্ষমতাধর কম্যুনিস্ট নেতা নগুয়েন ফু ট্রং এবং শি জিন পিং চাইছেন তাদের মধ্যকার তিক্ততা ভুলে দুই দেশের ঐতিহাসিক বন্ধুত্বকে পুনরজ্জীবিত করতে। চীনের সঙ্গে ভিয়েতনামের পুরোনো ঐতিহ্যগত সম্পর্ক থাকলেও, দক্ষিণ চীন সাগর নিয়ে দুই দেশের মধ্যেই রয়েছে দ্বন্দ্ব। আর এই দ্বন্দ্ব শত বছরেরও বেশি পুরোনো। যদিও ভিয়েতনামের বেশিরভাগ মানুষ এখন পর্যন্ত চীন বিদ্বেষী, তবুও প্রতিবেশী এই দেশটির প্রয়োজনীয়তা ভিয়েতনাম কখনোই অস্বীকার করতে পারে না।

শি জিনপিংয়ের এই সফরের মূল লক্ষ্য দুই দেশের মধ্যকার মতপার্থক্যগুলো দূর করার পাশাপাশি ভিয়েতনামের ওপর ওয়াশিংটনের প্রভাব কমানো। আর এ লক্ষ্যেই মঙ্গলবার (১২ ডিসেম্বর) প্রতিবেশী দেশ ভিয়েতনামে রাষ্ট্রীয় সফরে গিয়েছেন শি।

ভিয়েতনামের সবচেয়ে ক্ষমতাধর নেতা নগুয়েন ফু ট্রংও বেইজিং সফর করেছিলেন প্রায় এক বছর আগে। সে সময় তাকে বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গের জন্য সংরক্ষিত চীনের শীর্ষ পদক দিয়ে সম্মানিত করা হয়। এ ছাড়াও সে সময় তাদের মধ্যকার সম্পর্ককে শি জিনপিং "কমরেড এবং ভাই" হিসাবে বর্ণনা করেছিলেন। তবে শি ভিয়েতনামে গেলেন ৬ বছর পর।

এই সফর থেকে আশা করা হচ্ছে যে ভিয়েতনাম প্রেসিডেন্ট চীন প্রেসিডেন্ট শি’র "কমিউনিটি অফ কমন ডেসটিনি"-তে যোগ দেবেন। আর চীন-কেন্দ্রিক এ কমিউনিটিতে ভিয়েতনামের যোগদানের মাধ্যমে বিরাজমান, মার্কিন নেতৃত্বাধীন এই বৈশ্বিক ব্যবস্থা একটি চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হবে বলেই অনেকের ধারণা। এই পদক্ষেপটি গ্রহণের মাধ্যমে ভিয়েতনামের আনুগত্যের প্রতিযোগিতায় চীন যুক্তরাষ্ট্রের চেয়ে এগিয়ে যাবে। ভিয়েতনামে ওয়াশিংটনের প্রভাব বাড়বে।

এদিকে শি’র এই সফরে চীন ভিয়েতনামকে তার পরিবহন অবকাঠামো উন্নত করতে সহায়তা করার লক্ষ্যে উন্নত রেল প্রযুক্তিরও প্রস্তাব করবে। এই প্রস্তাবে দক্ষিণ চীন থেকে ভিয়েতনামের হাইফং বন্দর পর্যন্ত একটি রেল সংযোগ করার পরিকল্পনা থাকবে। যা এমন একটি অঞ্চলের মধ্য দিয়ে যাবে যেখানে ভিয়েতনামের সবচেয়ে ব্যয়বহুল বিরল খনিজ সম্পদ রয়েছে। আর চীন হল বিশ্বের বৃহত্তম খনিজ রপ্তানিকারক এবং শোধক আর এই খনিজ সম্পদ বৈদ্যুতিক যানবাহন এবং নবায়নযোগ্য উত্পাদনের জন্য প্রয়োজনীয় শক্তি।

অর্থাৎ, ধীরে ধীরে যুক্তরাষ্ট্রের বলয় থেকে ভিয়েতনামকে বের করে আনার উদ্দেশ্যের পথেই হাটছে চীন।

তবে, সম্পর্ক পুনরজ্জীবিত করার এই প্রয়াসে দক্ষিণ চীন সাগরের দ্বীপ নিয়ে ভিয়েতনামের সাথে চীনের যে পুরোনো তিক্ত আঞ্চলিক বিরোধ তা বাধা হয়ে দাঁড়াতেই পারে। এ ছাড়াও ১৯৭০ এবং ৮০-এর দশকে তাদের মধ্যকার উত্তেজনাপূর্ণ সম্পর্ক, যার মধ্যে ১৯৭৯ সালের সীমান্ত যুদ্ধও অন্তর্ভুক্ত। তাই, এসব বিষয়ে শি এবং ট্রং’র কোনো আলাপ হবে না বলেই ধারণা করা যায়। কারণ এই যুদ্ধে উভয় পক্ষেরই হাজার হাজার মানুষ নিহত হয়েছিল। এখনও অনলাইনে বা বিভিন্ন সোশ্যাল প্ল্যাটফর্মে ভিয়েতনামের এ বিষয়গুলি নিয়ে বেশ আলোচনা ও সমালোচনা হয়।

ভিয়েতনামের একজন ফেসবুক ব্যবহারকারী শি এর এই সফর নিয়ে লিখেছেন, "আমরা শুধু শান্তি চাই, তাই প্রেসিডেন্ট শি দয়া করে আসবেন না।"

দক্ষিণ চীন সাগরের প্রায় পুরোটাই চীনের বিস্তৃত দাবির কথা উল্লেখ করে আরও একজন লিখেছেন, "যদি শি জিনপিং নাইন-ড্যাশ লাইনটি সরিয়ে দিতেন, তাহলে দুই দেশ অবিলম্বে ভাই হয়ে যেতে পারে।“

এ ছাড়াও সাম্প্রতিক বছরগুলোতে মাঝেমধ্যেই চীন বিরোধী বিক্ষোভ হয়ে এসেছ। ভিয়েতনাম তার যে অংশটুকু তার নিজস্ব আঞ্চলিক জলসীমা বিবেচনা করে ২০১৪ সালে চীন সেখানে তেলের রগ স্থাপন করেছিল। এর ফলে সৃষ্ট দাঙ্গায় সে সময় বহু লোক নিহত হয় এবং সেই সাথে কয়েক ডজন বিদেশী মালিকানাধীন কারখানাও ধ্বংস হয়। কয়েক বছর আগেও হ্যানয়ের দোকানগুলিতে চীনের নয় কেবলমাত্র ভিয়েতনামের তৈরি পণ্য বিক্রি করা হতো।

যদিও, ইদানীংকালে উভয় সরকারই ২০১৪ সালের ওই সব স্মৃতি এড়িয়ে যেতে চাইলেও জনগণের মন থেকে সেসব ঘটনার দাগ মুছে যায়নি। সম্প্রতি বার্বি মুভিটিতে নাইন-ড্যাশ লাইনের ওপর ভিয়েতনামের আবেগকে অবমাননাকরভাবে চিত্রায়িত করায় এই বছর কর্তৃপক্ষ বার্বি মুভিটিও নিষিদ্ধ করে দেয় দেশটিতে।

অর্থনৈতিক সম্পর্ক এবং বাণিজ্যের দিক দিয়ে চীন ভিয়েতনামের বৃহত্তম বাণিজ্য অংশীদার। কিন্তু  ভিয়েতনাম চীনের উপর তাদের নির্ভরতা কমাতে চায়। আর এর প্রেক্ষিতে ভিয়েতনাম মার্কিন কোম্পানিগুলির জন্য শুধুমাত্র একটি উত্পাদন কেন্দ্রে পরিণত হওয়া সত্ত্বেও, চীন ভিয়েতনামে শীর্ষ বিনিয়োগকারী হিসেবে রয়ে গেছে। কারণ ভিয়েতনামে বিনিয়োগ করার মাধ্যমে বেশ কিছু চীনা কোম্পানি নতুন মার্কিন বিধিনিষেধ এড়িয়ে যেতে পারে।

এছাড়া এখনও দুই দেশের নেতৃত্বের মধ্যে একটি আদর্শিক বন্ধন রয়েছে। সেই সাথে মি. শি এবং মি. ট্রং উভয়ই কর্তৃত্ববাদী মতাদর্শের কট্টরপন্থী পশ্চিমা গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের প্রতি অসন্তুষ্ট। যদিও দু’দেশের কৌশলগত দৃষ্টিভঙ্গির মধ্যে সর্বদাই গভীর পার্থক্য থাকবে।

উদীয়মান পরাশক্তির দেশ চীন সবসময়ই চেয়েছে মার্কিনিদের পাশ কাটিয়ে নিজ অঞ্চলে প্রভাবশালী হতে। আর মার্কিন-চীন প্রতিদ্বন্দ্বিতার এ সুযোগটা কাজে লাগিয়ে, ভিয়েতনাম দুই দেশের মাঝে থেকে সম্পর্কের ভারসাম্য বজায় রেখে যতটা সম্ভব সুবিধা এবং নিরাপত্তা আহরণ করে নিচ্ছে যা বেশ বুদ্ধিদীপ্ত কাজ।



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭