ইনসাইড বাংলাদেশ

আজ নীলফামারী হানাদারমুক্ত দিবস


প্রকাশ: 13/12/2023


Thumbnail

আজ ১৩ ডিসেম্বর, নীলফামারী হানাদারমুক্ত দিবস। ১৯৭১ সালের দীর্ঘ ৯ মাসের মুক্তিযুদ্ধে ত্রিশ লাখ বাঙালীর আত্মত্যাগের বিনিময়ে আজকের দিনে নীলফামারীর আকাশে উদিত হয়েছিল স্বাধীন বাংলার মানচিত্রখচিত সবুজের বুকে রক্ত লাল পতাকা। সেদিন রাস্তায় উল্লাসে নেমে আসে মানুষ। সবার মুখে ছিল 'জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধ’ স্লোগান। নীলফামারীর তৎকালীন মহকুমা প্রশাসকের কার্যালয়ের উপরে প্রথম উড়ানো হয় স্বাধীন বাংলার পতাকা।

 

স্থানীয় বীরমুক্তিযোদ্ধাদের সাথে কথা বলে জানা যায়,‘পাক হানাদার বাহিনী নীলফামারী সরকারী কলেজ, কলেজ ছাত্রাবাস ও ভোকেশনাল ট্রেনিং ইন্সটিটিউটে গড়ে তুলে সেনা ক্যাম্পের নামে শক্ত ঘাঁটি। বিভিন্ন এলাকা থেকে নারী পুরুষকে ধরে এনে এসব ঘাঁটিতে করা হতো নির্মম নির্যাতন, ধর্ষণ ও নির্বিচার হত্যাযজ্ঞ। আজও শহীদদের স্মৃতি বহন করে নীলফামারী সরকারি কলেজের বধ্যভ‚মি। কলেজের পুরোনো একটি কুয়ার মধ্যে অগণিত মরদেহ ফেলে দিয়েছিল পাকিস্তানি বাহিনীর দোসর আলবদর ও রাজাকাররা। দেশ স্বাধীনের পর স্থানীয় সংসদ সদস্য বীরমুক্তিযোদ্ধা আসাদুজ্জামান নূরের নেতৃত্বে কুয়াটি সংরক্ষণ করে সেখানে তৈরি করা হয়েছে স্মৃতিস্তম্ভ।

 

জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক ডেপুটি কমান্ডার কান্তি ভুষন কুন্ডু জানান, ‘বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণের পর সারা দেশের ন্যায় নীলফামারীর দামাল ছেলেরাও দেশ মাতৃকাকে হানাদারমুক্ত করতে ঝাঁপিয়ে পড়েন। পাক হায়েনারা যুদ্ধের নামে বাংলার স্বাধীনচেতা মানুষদের হত্যাযজ্ঞসহ নির্যাতন ও ধর্ষণে মেতে উঠে। টানা ৯ মাসের মুক্তিযুদ্ধে ক্যাপ্টেন বাশার, আলী হোসেন, আহমেদুল হক প্রধান, আনজারুল হক ধীরাজ, জাহেরুল ইসলাম, মোজাম্মেল হক, মিজানুর রহমান, মির্জা হাবিবুর রহমান বেগসহ ১৭ জন বীর যোদ্ধা শহীদ হন। দেশ মাতৃকাকে হানাদারমুক্ত করতে মুক্তিযোদ্ধাদের চোরাগোপ্তা হামলা ও সম্মুখ যুদ্ধে অনেক পাক সেনা নিহত হয়। ১৩ ডিসেম্বর পাক হায়েনাদের শক্ত ঘাঁটি নীলফামারী সরকারী কলেজ সার্চ করে ৩ জন নির্যাতিত নারীকে বিবস্ত্র অবস্থায় উদ্ধার করা হয়।’

বীর মুক্তিযোদ্ধা এ.কে.এম আমিনুল হক বলেন, ‘যুদ্ধে পাক হায়েনাদের দোসর এ দেশীয় রাজাকার, আল-বদর ও আল শামস বাহিনীর তৎপরতায় স্বাধীনতাকামী মানুষজন ছিল অতিষ্ঠ। তারা বিভিন্ন এলাকা থেকে নিরাপরাধ লোকজনকে ধরে এনে সেনা ক্যাম্পে দিনের পর দিন আটকে রেখে করতো নির্মম নির্যাতন। শত শত যুবতীকে ধরে এনে করা হতো ধর্ষণ। এক পর্যায়ে বেনয়েট দিয়ে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে হত্যা করা হতো। হাত পিঠমোড়া করে চোখ বেঁধে অনেককেই গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। কলেজ ষ্টেশনের আশে পাশের ডোবায় ধর্ষণের শিকার নারীদের বিবস্ত্র লাশ ফেলে রাখা হতো। এসব লাশ শেয়াল-কুকুরের খোরাক হতো। এমনকি স্টেশনের দক্ষিণে রেল লাইনের পূর্ব পাশে ৭-৮টি করে লাশ এক একটি গর্তে পুঁতে রাখা হয়েছে। ’

 

বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ নীলফামারী সদর উপজেলা কমান্ড কাউন্সিল এর প্রশাসক ও সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মেহেদী হাসান বলেন,‘নীলফামারী হানাদার মুক্ত দিবসটি উপলক্ষে মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ও সন্তান কমান্ডের উদ্যোগে নানা কর্মসূচী গ্রহণ করা হয়েছে। যথাযোগ্য মর্যাদায় দিনটি পালন করা হবে।’



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭