ইনসাইড পলিটিক্স

জাপার সঙ্গে আওয়ামী লীগের নির্বাচনী সমঝোতা কি ভেস্তে গেল?


প্রকাশ: 13/12/2023


Thumbnail

আওয়ামী লীগের সঙ্গে জাতীয় পার্টির আসন সমঝোতা শেষ পর্যন্ত ভেস্তে গেছে বলে একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র বাংলা ইনসাইডারকে জানিয়েছে। তবে অন্য একটি সূত্র বলছে যে, এখন পর্যন্ত চূড়ান্ত কিছু বলার সময় হয়নি। হাতে আরও ৩ দিন  সময় আছে। এই ৩ দিনের মধ্যে নিশ্চয়ই তারা একটি সমঝোতায় পৌঁছতে পারবে। তিনটি কারণে জাতীয় পার্টির সঙ্গে আওয়ামী লীগের আসন সমঝোতা শেষ পর্যন্ত ভেস্তে যাচ্ছে বলে বিভিন্ন সূত্রে খবর দিয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে প্রথম যে বিষয়টি তা হল স্বতন্ত্র প্রার্থীদের বসিয়ে দেওয়ার দাবি। 

জাতীয় পার্টি থেকে বলা হয়েছে যে, তাদেরকে যে আসনগুলো ছেড়ে দেওয়া হবে সেই আসনে আওয়ামী লীগের কোনো বিদ্রোহী বা স্বতন্ত্র প্রার্থী থাকতে পারবে না। আওয়ামী লীগ এই প্রস্তাবে রাজি হয়নি। আওয়ামী লীগ বলেছে যে, স্বতন্ত্র প্রার্থীদের দায়দায়িত্ব আওয়ামী লীগ নিতে পারেন না। তারা বিদ্রোহী স্বতন্ত্র। কাজেই তাদেরকে বসিয়ে দেওয়ার এখতিয়ার আওয়ামী লীগের নেই। এ পর্যন্ত অনুষ্ঠিত পাঁচটি বৈঠকের প্রত্যেকটিতেই স্বতন্ত্র প্রার্থীদের বিষয়টি সামনে এসেছে এবং এটি নিয়ে আওয়ামী লীগ তার অনড় অবস্থান পরিষ্কার করেছে। 

দ্বিতীয়ত, আসন ভাগাভাগির বিষয়টি নিয়েও জাতীয় পার্টির সঙ্গে সমঝোতা হয়নি। জাতীয় পার্টি ৬০টি আসন দাবি করেছে। আওয়ামী লীগ তাদেরকে সর্বোচ্চ ৪১টি আসনে ছাড় দেওয়ার বিষয়টি বিবেচনা করবে বলে আশ্বস্ত করেছিল। এই ৪১টি আসনে নৌকা প্রতীকের কোন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবে না। কিন্তু জাতীয় পার্টি মনে করছে যে, তাদের ৬০টি আসন প্রাপ্য। আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা বলছেন যে, তারা (জাপা) যে ৬০টি আসন চাচ্ছে তা অযৌক্তিক। 

আওয়ামী লীগের নেতাদের মতে, জাতীয় পার্টির ৬০টি আসন পাওয়ার মতো সাংগঠনিক অবস্থানে নেই। এখন। এমনকি ৩০টি আসনেও জাতীয় পার্টির শক্তিশালী অবস্থান নেই। এরকম পরিস্থিতিতে ৬০টি আসনে আওয়ামী লীগ কোনো ভাবেই ছাড় দেবে না বলে একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র নিশ্চিত করেছে। 

তৃতীয়ত, রওশন এরশাদের সাথে সম্পর্ক। গতকাল গণভবনে রওশন এরশাদের যাওয়া এবং সেখানে জিএম কাদেরসহ জাতীয় পার্টির নেতাদের বিরুদ্ধে নালিশের বিষয়টিকে জাপার বর্তমান নেতৃত্ব ইতিবাচক ভাবে নেয়নি। জাতীয় পার্টির নেতারা বলছেন যে, এভাবে একজন রাজনৈতিক দলের নেতার কাছে যেয়ে নালিশ করা কোনোভাবেই শিষ্টাচার সুলভ নয়। জাতীয় পার্টির মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু বলেছেন, রওশন এরশাদ জাতীয় পার্টির কোনো সাংগঠনিক নেতা নন। কাজেই তার বক্তব্য গুরুত্বহীন। এই সব কিছু মিলিয়ে ভয় জাতীয় পার্টির সঙ্গে আওয়ামী লীগের দূরত্ব পরিষ্কার হচ্ছে। 

আওয়ামী লীগ যদিও মনে করছে যে, জাতীয় পার্টির আগামী নির্বাচনে সরে যেতে পারে। কিন্তু জাতীয় পার্টির মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু দাবি করেছেন যে, নির্বাচন থেকে তারা সরে যাবে না। কারও পরামর্শে তারা নির্বাচনে আসেনি। নিজের শক্তিতে তারা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে। 

জাতীয় পার্টির মহাসচিব এর আগেও দাবি করেছেন যে, জাতীয় পার্টি এখন সাবালক এবং তার মতে, ১৯৯১ সালের মতো এবার নির্বাচনে চমক তৈরি হবে। মুজিবুল হক চুন্নু বলেছেন যে, ভোটারদের মধ্যে আওয়ামী বিরোধী ভোটার সংখ্যা বেশি। সবকিছু মিলিয়ে তিনি দলকে নির্বাচনমুখী করতে চাইছেন। কিন্তু তিনি দলকে যতই নির্বাচনমুখী করুন না কেন, সমস্যা অন্য জায়গায়। জাতীয় পার্টির যারা প্রার্থী, তারা মাঠের বাস্তবতা সম্পর্কে অবহিত আছেন। ৪/৫টি আসন ছাড়া কোথাও যদি স্বতন্ত্র প্রার্থী থাকে তাহলে জাতীয় পার্টি যে ভালো করতে পারবে না এটি তারা ভালো মতোই জানে। অন্যদিকে আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতীয় পার্টির সঙ্গে কোন রকম সমঝোতায় যাওয়ার পক্ষপাতী নয়, বরং তিনি নির্বাচনকে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করার পক্ষপাতী। 

বিভিন্ন সূত্রগুলো বলেছেন, শেখ হাসিনা এমনকি জাসদ বা ওয়ার্কার্স পার্টির সঙ্গেও সমঝোতার ব্যাপারটিতে খুশি নন। তিনি চান যে সকল দল তার শক্তিতে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করুক এবং নির্বাচনের মাঠে জনপ্রিয়তা যাচাই হোক। আর এবারের নির্বাচন যেন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হয় সেজন্য তিনি নির্দেশনা দিচ্ছেন। এখন দেখার বিষয় আওয়ামী লীগের সঙ্গে সমঝোতা ছাড়া জাতীয় পার্টির শেষ পর্যন্ত নির্বাচন করে কি করে না।



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭