প্রকাশ: 14/12/2023
যুক্তরাষ্ট্রের আগামী
২০২৪ সালের নির্বাচনে ট্রাম্পের গ্রহণযোগ্যতা দিনকে দিন বেড়েই চলেছে। জনপ্রিয়তার
দিক দিয়ে দিয়ে তিনি বাইডেনের তুলনায় বেশ এগিয়েই আছেন। বিভিন্ন জড়িপে বাইডেনের আগে
উঠে আসছে ট্রাম্পের নাম। সাবেক এই প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প হোয়াইট হাউসের দায়িত্ব
পালনকালে অন্তত দু’বার অভিশংসনের মুখোমুখি হয়েছিলেন। সর্বশেষ ২০২০ সালের প্রেসিডেন্ট
নির্বাচনে হেরে যাওয়ার পর শান্তিপূর্ণ ক্ষমতা হস্তান্তরকে ব্যর্থ করার চেষ্টা করেছিলেন
তিনি। বর্তমানে তিনি একাধিক ফৌজদারি মামলার অভিযোগের মুখোমুখি এবং তার সমালোচকরা সতর্ক
করে এটাও বলেছেন, স্বৈরশাসক হিসেবে দেশ শাসনের চক্রান্ত করেছিলেন তিনি। এতকিছুর পরও
আগামী বছরের মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ট্রাম্পের জয়লাভের সম্ভাবনাই সবচেয়ে বেশি।
সম্প্রতি দেশটিতে পরিচালিত জাতীয় জনমত জরিপে
ডোনাল্ড ট্রাম্প তার রাজনৈতিক দল রিপাবলিকান শিবির থেকে মনোনয়নের দৌড়ে প্রতিদ্বন্দ্বীদের
চেয়ে এগিয়ে রয়েছেন বলে উঠে এসেছে। এতে প্রায় ৫০ শতাংশ পয়েন্ট পেয়ে এগিয়ে আছেন তিনি।
তিন বছর আগে মার্কিন রাজনীতিতে অপদস্থ এবং
পরাজিত হওয়ার পর ওই জরিপে দারুণ প্রত্যাবর্তনের আভাস মিলেছে ট্রাম্পের।
যে চার কারণে আগামী বছরের নভেম্বরের নির্বাচনে ডেমোক্র্যাট দলীয় প্রার্থী জো বাইডেনের বিরুদ্ধে জিততে পারেন ডোনাল্ড ট্রাম্প-
নাখোশ ভোটার
জো বাইডেন নেতৃত্বাধীন হোয়াইট হাউস যুক্তি
দিয়ে বলেছে, মার্কিন অর্থনীতি বর্তমানে ভালো অবস্থায় রয়েছে। ডোনাল্ড ট্রাম্পের ক্ষমতা
ছাড়ার সময় দেশে বেকারত্বের হার ৬ দশমিক ৩ শতাংশ থাকলেও তা ঐতিহাসিক সর্বনিম্ন ৩ দশমিক
৯ এ নেমে এসেছে। এছাড়া ২০২২ সালের জুনে দেশে মুদ্রাস্ফীতির হার সর্বোচ্চ ৯ শতাংশে পৌঁছালেও
অক্টোবর পর্যন্ত তা ৩ দশমিক ২ ছিল।
কিন্তু দেশটির অনেক গোত্র, তরুণ ভোটারসহ জনগণের
বড় একটি অংশ জো বাইডেন নেতৃত্বাধীন প্রশাসনের কথায় আস্থা রাখতে পারছেন না। তারা মুদিপণ্য,
গাড়ি, বাড়ি, শিশু এবং বয়স্কদের সেবার মতো প্রয়োজনীয় পণ্য ও পরিষেবার খরচের সাথে
নিজেদের আয়ের তাল মিলিয়ে চলতে না পারার দুর্দশার কথা তুলে ধরছেন।
বাইডেন যখন দেশটির অর্থনীতি নিয়ে কথা বলেন, তখন আমেরিকানরা অর্থনৈতিক সূচক নয় বরং তাদের সামর্থ্য-সক্ষমতার কথা ভাবেন। মতামত জরিপগুলোতে দেখা যায়, ভোটাররা বরং রিপাবলিকান আমলের অর্থনৈতিক পরিস্থিতিকে বেশি ভালো হিসেবে দেখেন। যদিও ট্রাম্প আগামী নির্বাচনে ভোটারদের আকৃষ্ট করতে কেবল অস্পষ্ট প্রস্তাব দিয়েছেন।
ভয়
অর্থনীতির বাইরেও আরও নানাবিধ কারণে দেশটির
ভোটাররা বিচলিত। ট্রাম্প উদ্বেগের সাথে কথা বলেন। তার সেই কথা বাস্তব হোক বা না হোক
এটা সত্য যে অনেক শ্বেতাঙ্গ আমেরিকান এমন একটি দেশে রয়েছেন; যা ক্রমবর্ধমান বৈচিত্র্যময়
এবং আরও সাংস্কৃতিকভাবে প্রগতিশীল হয়ে উঠছে।
তাদের ভিত হারিয়ে ফেলার একটি বিস্তৃত বোধও
রয়েছে। কারণ আমেরিকান জীবনের মূল ভিত্তি— বাড়ির মালিকানা, মুদ্রাস্ফীতির সাথে তাল
মিলিয়ে চলা সম্মানজনক মজুরি এবং কলেজ শিক্ষা বর্তমানে অনেকের নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছে।
জরিপে দেখা যায়, ভোটাররা দেশটিতে সংঘটিত অপরাধের বিষয়ে উদ্বিগ্ন। একই সঙ্গে তারা মার্কিন-মেক্সিকো
সীমান্তে অবৈধ অভিবাসীদের ঢল নিয়েও বিচলিত।
ট্রাম্প এসব ভীতিকে নিজের পক্ষে পরিচালনায় ব্যাপক পারদর্শী। যদিও তিনি নিজেকে মার্কিন রাজনৈতিক ব্যবস্থার বাইরে থেকে আসা একজন হিসেবে উপস্থাপন করছেন। তিনি একাধারে অগ্নিসংযোগকারী এবং অগ্নিনির্বাপক— উভয়ই। তিনি বলছেন, বর্তমানে বাইডেন প্রশাসনের আমলে যুক্তরাষ্ট্র ব্যাপক বিশৃঙ্খলার মধ্যে রয়েছে এবং এই বিশৃঙ্খলা থেকে মার্কিন নাগরিকদের উদ্ধারে নিজেকে ‘‘ত্রাতা’’ হিসেবে জাহির করছেন ট্রাম্প।
ট্রাম্পের পদক্ষেপ উপেক্ষা করার মতো নয়
যদিও নিজ দলের মধ্যে থাকা অনেক সমালোচক, ডেমোক্র্যাটিক
পার্টি এবং কিছু কিছু গণমাধ্যমও ট্রাম্পকে হোয়াইট হাউসের জন্য অযোগ্য হিসাবে দেখে।
কিন্তু দেশটির লাখ লাখ ভোটার আবার এই বিষয়ে একমত নন।
ট্রাম্প রাজনৈতিক মঞ্চে অনিষ্টকারীদের চক্রান্তের
শিকার বলে তার অনেক সমর্থক মনে করেন। চলতি বছরের শুরুর দিকে ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা
রয়টার্স ও ইপসোসের এক জরিপে অংশ নেওয়া রিপাবলিকানদের অন্তত অর্ধেকই বলেছেন, ট্রাম্পকে
যেকোনও একটি অপরাধের জন্য দোষী সাব্যস্ত করা হলেও তাকে ভোট দিতে কোনও সমস্যা হবে না।
দেশটির সাবেক এই প্রেসিডেন্ট তার ক্ষমতার
চার বছরের দিকেও ইঙ্গিত করতে পারেন। তিনি যুক্তি দিতে পারেন, তার আমলে সরকারের সব সংস্থাই
বহুলাংশে ভালোভাবে কাজ করেছে। যদিও ট্রাম্প প্রশাসনের বিরুদ্ধে মাঝে মাঝে বিশৃঙ্খলভাবে
রাষ্ট্র পরিচালনার অভিযোগ রয়েছে।
সাবেক এই মার্কিন প্রেসিডেন্ট সম্পর্কে সবচেয়ে গুরুতর যে অভিযোগ উঠেছিল, সেটি হলো রাশিয়ার সাথে যোগসাজশ করে ক্ষমতায় এসেছেন তিনি। আর এই অভিযোগ প্রমাণিত হয়নি।
সব দায় বাইডেনের, নেই কৃতিত্ব
ট্রাম্প এমন এক হোয়াইট হাউসের কথা বলে জনসাধারণের
কাছে সুবিধা নিতে পারেন; যা এখন পর্যন্ত জনসাধারণকে অনেক কিছু বোঝাতে পারেনি। এর মধ্যে
রয়েছে বাইডেনের তৈরি করা চাকরি সংক্রান্ত নতুন নীতিমালা, অবকাঠামো, ক্লিন এনার্জি এবং
চিপ উৎপাদনে সরকারি বিপুল বিনিয়োগ সত্ত্বেও মানুষের অপরিবর্তিত জীবন।
প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ক্ষমতায় আসার পর দুটি
বিদেশি যুদ্ধে জড়িয়েছেন; যা আমেরিকানদের বিভক্ত করে তুলেছে। ট্রাম্পের নিজেকে সবসময়
‘‘হস্তক্ষেপবিরোধী’’, ‘‘আমেরিকা ফার্স্ট’’ নীতিতে বিশ্বাসী হিসেবে দাবি করেন। তার এই
বার্তা ইউক্রেন বা ইসরায়েলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জড়িয়ে পড়ার ভয়ে ভীত ভোটারদের রিপাবলিকান
শিবিরে টানতে পারে।
বিপরীতে জো বাইডেন ঐতিহ্যগতভাবে হস্তক্ষেপবাদী
আমেরিকান পররাষ্ট্রনীতির ধারা বজায় রেখে চলেছেন।
ওপরে যে চারটি কারণের কথা তুলে ধরা হয়েছে,
তার অর্থ এই নয় যে নির্বাচনে ট্রাম্পের জয় একেবারে নিশ্চিত। তিনি এখনও দেশটির অনেক
অংশে এবং অনেক জনগোষ্ঠীর মাঝে ব্যাপকভাবে অপছন্দনীয় রয়ে গেছেন। যদি তাকে রিপাবলিকান
দলীয় প্রার্থী হিসাবে মনোনয়ন দেওয়া হয়, তাহলে ডেমোক্র্যাট দলীয় প্রার্থীর পক্ষে উচ্চ
ভোট পড়ার সম্ভাবনাও তৈরি হতে পারে।
তবে মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ঠিক ১১ মাস আগে এখন পর্যন্ত ডোনাল্ড ট্রাম্পের যে জনপ্রিয়তা দেখা যাচ্ছে, তাতে হোয়াইট হাউসে তার ফেরার উজ্জ্বল সম্ভাবনা রয়েছে।
সূত্র: রয়টার্স।
প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান
বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭