ইনসাইড পলিটিক্স

১৪ দলে সমঝোতার অপেক্ষা, কাটেনি ধোঁয়াশা


প্রকাশ: 14/12/2023


Thumbnail

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে আদর্শিক জোট ১৪ দল এবং জাতীয় পার্টিকে (জাপা) নিয়ে রহস্যের সমাধান মিলছে না, এখনো কাটেনি ধোঁয়াশা। মাত্র দুইদিন সময় থাকলেও আসন সমঝাতা নিয়ে ১৪ দলের শরিকদের দেন দরবার চলছে। তবে বিষয়টি দুই-একদিনের মধ্যেই চূড়ান্ত হবে বলে জানা গেছে। নির্বাচনের তফসিল অনুযায়ী ১৮ ডিসেম্বর প্রতীক বরাদ্দের আগেই আসন সমঝোতার বিষয়টি চূড়ান্ত করতে হবে। ইতোমধ্যে ১৪ দলের শরিক চারটি দলের পাঁচ শীর্ষ নেতাকে সবুজ সংকেত দেওয়া হয়েছে। জাতীয় পার্টির সঙ্গে চলছে মিটিং।

এর আগে জাতীয় পার্টি, ১৪ দল এবং আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতারা দফায় দফায় বৈঠক করছেন। গতকাল বুধবার রাতেও অনানুষ্ঠানিক আলোচনা হয়। এসব আলোচনায় নেতারা ঐকমত্যে পৌঁছার চেষ্টা করছেন বলে সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে।

গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন সূত্র বলছে, ছাড় পাওয়া আসনে জাতীয় পার্টি অতীতের মতো এবারও তাদের দলের নির্বাচনী প্রতীক লাঙ্গল নিয়ে ভোটযুদ্ধে অংশ নেবে। ১৪ দলের শরিকদের মধ্যে চার দলের নেতারা ছাড় পাওয়া আসনে বরাবরের মতোই আওয়ামী লীগের নির্বাচনি প্রতীক নৌকা নিয়ে ভোট করবেন। এসব আসনে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে দলের কাউকে নৌকা প্রতীক বরাদ্দ করা হবে না।

এ বিষয়ে ১৪ দলের মুখপাত্র ও সমন্বয়ক আমির হোসেন আমু একটি গণমাধ্যমকে বলেছেন, শরিকদের সঙ্গে আসন সমঝোতা নিয়ে চূড়ান্ত ফয়সালার বিষয়ে নতুন কোনো অগ্রগতি নেই। আশা করি শিগগিরই হয়ে যাবে।

আসন সমঝোতার বিষয়ে জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট কাজী ফিরোজ রশীদ গতকাল একটি গণমাধ্যমকে বলেন, আসন সমঝোতা নিয়ে আলাপ-আলোচনা চলছে। তবে এখনো কোনো সুরাহা হয়নি। আশা করছি, দু-একদিনের মধ্যে ঠিক হবে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, দ্বাদশ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে শুরু থেকেই শরিকদের আপত্তি ছিল আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থী নিয়ে। সমঝোতা হওয়া আসনে আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থীদেরই বসানোর দাবি ছিল তাদের। কিন্তু এ বিষয়ে আওয়ামী লীগ এখনো শরিকদের আশ্বস্ত করলেও কী ব্যবস্থা নেবে, তা বলা হয়নি। বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতা এড়াতে দলটি স্বতন্ত্র প্রার্থীদের মাঠে চাইছে। মূলত এ নিয়েই বিপাকে পড়েছে শরিকরা।

এদিকে আওয়ামী লীগের কয়েক দফা বৈঠকের পরও শরিকদের সঙ্গে আসন সমঝোতা চূড়ান্ত করা সম্ভব হয়নি। সর্বশেষ গত রোববার রাতে আওয়ামী লীগের সমন্বয় টিমের সঙ্গে বৈঠক করে ১৪ দলের শরিকরা। বৈঠক শেষে জোট নেতারা বলেন, তারা আসন সমঝোতা নিয়ে আলোচনা করেছেন। এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে আওয়ামী লীগ আরও সময় চেয়েছে।

এ বিষয়ে জাতীয় পার্টি-জেপি মহাসচিব শেখ শহীদুল ইসলাম গণমাধ্যমকে বলেছেন, এবারের নির্বাচন পরিস্থিতি একটু বিচিত্রও বটে। আওয়ামী লীগ সম্ভবত গাজীপুর সিটি নির্বাচনের মতো কৌশল প্রয়োগ করতে চায় যেন ভোটার উপস্থিতি ভালো হয়। তিনি আরও বলেন, শুধু ১৪ দলের শরিক নয়, আওয়ামী লীগের প্রার্থী যারা আছেন, তাদের ক্ষেত্রেও এ ধরনের অসুবিধার সৃষ্টি করছে। এখন আওয়ামী লীগের যে কৌশল, সেটা মেনে নেওয়া ছাড়া তো আমাদের গত্যন্তর নেই। আসন সমঝোতা নিয়ে ১৪ দলীয় জোট শরিকদের আর কোনো বৈঠক হবে কি না-জানতে চাইলে শেখ শহীদুল ইসলাম বলেন, আমার মনে হয় না আর কোনো মিটিং হবে। এখন যেটা হবে সেটা হলো, জানিয়ে দেওয়া হবে তারা কী করেছেন।

ন্যাপের সাধারণ সম্পাদক ইসমাইল হোসেন গণমাধ্যমকে বলেন, আমাদের নির্বাচনের আগেই বসে ফয়সালা করার দরকার ছিল। কিন্তু এ কাজটা হয়নি। আওয়ামী লীগ যে কৌশলের কথা বলছে, সেগুলো আসলে কোনো কৌশল নয়, এগুলো অপকৌশল। কারণ, রাজনীতিতে ন্যূনতম নৈতিকতা থাকতে হয়, যা এখানে অনুপস্থিত। এতে ১৪ দলীয় জোটের শরিকদের মধ্যে আন্তরিকতার ঘাটতি দেখা দিতে পারে বলেও মনে করেন তিনি। নিজেদের নির্বাচনের প্রস্তুতির বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমাদের পাঁচজন প্রার্থী জাতীয় নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তারা আমাদের দলীয় প্রতীক নিয়েই নির্বাচন করবেন।

এছাড়াও বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশনের চেয়ারম্যান সৈয়দ নজিবুল বশর মাইজভাণ্ডারী ওই গণমাধ্যমকে বলেছেন, ১৫ তারিখের মধ্যেই আসন সমঝোতা হয়ে যাবে। যারা জোটের প্রার্থী হবেন, তাদের নামে চিঠি ইস্যু হয়ে যাবে।

বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল-বাসদের আহ্বায়ক রেজাউর রশীদ খান গণমাধ্যমকে বলেন, এখনো সমঝোতা হয়নি। আলোচনা চলছে। আওয়ামী লীগ আরও একটু সময় চাইছে, যাচাই-বাছাই শেষ হলে মনে হয় একটা সমাধান হবে।

আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টি এবং ১৪ দলের একাধিক নেতা জানিয়েছেন, প্রত্যাহারের আগে হাতে আর মাত্র দুই দিন রয়েছে। এর আগেই আসন সমঝোতার বিষয়ে চূড়ান্ত ফয়সালা হবে। ইতোমধ্যে আওয়ামী লীগ তাদের ১৪ দলীয় জোটের শরিক জাতীয় পার্টি-জেপি চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন মঞ্জুকে পিরোজপুর-২ আসনে ছাড় দেওয়ার বিষয়ে সবুজ সংকেত দিয়েছে। এ আসনে নৌকা মনোনীত প্রার্থী থাকবে না। জেপির মহাসচিব শেখ শহিদুল ইসলাম ঢাকা-১৪ আসন থেকে নির্বাচন করতে চান। এছাড়াও আওয়ামী লীগ ছাড় দেওয়ায় ১৪ দলের আরেক শরিক বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশনের চেয়ারম্যান নজিবুল বশর মাইজভাণ্ডারী এবারও চট্টগ্রাম-২ আসন থেকে নৌকা নিয়ে ভোটে অংশ নিচ্ছেন। ১৪ দলের বাইরে বিকল্প ধারা বাংলাদেশের যুগ্ম মহাসচিব মাহি বি. চৌধুরীকে মুন্সীগঞ্জ-১ আসনে ছাড় দিচ্ছে আওয়ামী লীগ। ১৪ দলের অন্য দুই শরিক জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু কুষ্টিয়া-২ আসন এবং আরেক শরিক বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন বরিশাল-২ আসন, একই দলের সাধারণ সম্পাদক ফজলে হোসেন বাদশা রাজশাহী-২ আসন থেকে নৌকা নিয়ে ভোট করবেন। এসব জায়গায়ও আওয়ামী লীগের কোনো প্রার্থী থাকবে না। তবে ওয়ার্কার্স পার্টি এবং জাসদের চাওয়া বাকি আসনের বিষয়ে বুধবার পর্যন্ত ফয়সালা হয়নি।

ওই প্রতিবেদন সূত্র বলছে, গোপনীয়তা রক্ষা করে গত সোমবার রাতেও জাতীয় পার্টি ও আওয়ামী লীগের নেতারা বৈঠক করেন। এর আগেও তারা কয়েক দফা বৈঠক করেছেন। জাতীয় পার্টিকে ছাড় দেওয়া আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী থাকবে না, এ বিষয়টি নিশ্চিত করেছে ক্ষমতাসীনরা। তবে স্বতন্ত্র প্রার্থীদের বিষয়ে কী করা হবে, সে বিষয়ে নিশ্চিত করতে পারেননি আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতারা।



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭