ইনসাইড বাংলাদেশ

কেন শেখ হাসিনা স্বতন্ত্রদের পক্ষে


প্রকাশ: 14/12/2023


Thumbnail

এবার নির্বাচনে সবচেয়ে বেশি জামাই আদর পাচ্ছেন স্বতন্ত্র প্রার্থীরা। যারা আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পাননি কিন্তু স্বতন্ত্রভাবে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন তাদেরকে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে শুধু স্বাগত-ই জানানো হয়নি, এক ধরনের প্রটেকশন দেওয়া হচ্ছে। বিশেষ করে আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যেন স্বতন্ত্রদের পক্ষে সুস্পষ্ট অবস্থান নিয়েছেন। ইতোমধ্যে দু একজন স্বতন্ত্র প্রার্থী আওয়ামী লীগ সভাপতির সঙ্গে গণভবনে গিয়ে সাক্ষাৎ করেছেন। ছবি তুলেছেন সেই ছবি। তারা আবার গণমাধ্যমে প্রচারও করছেন। এসবের ফলে স্বতন্ত্ররা এবার অবহেলিত নন বা স্বতন্ত্রদেরকে কোণঠাসা করা যাবে না। এরকম একটি বার্তা পৌঁছে যাচ্ছে সারা দেশে। যার ফলে ক্রমশ স্বতন্ত্ররা সক্রিয় এবং শক্তিশালী হচ্ছে। অনেক স্বতন্ত্র প্রার্থী আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থীকে চোখ রাঙাচ্ছেন। এর ফলে অনেক জায়গায় আওয়ামী লীগ দুভাগে বিভক্ত হয়ে নির্বাচনী প্রচারণা করছে। এক ভাগে দলীয় প্রার্থী, অন্য ভাগে স্বতন্ত্র প্রার্থী। 

কিন্তু প্রশ্ন হল স্বতন্ত্র প্রার্থীদের পক্ষে কেন শেখ হাসিনা এত বলিষ্ঠ ভূমিকা নিচ্ছেন। কেন তিনি দলের বিরুদ্ধে দাঁড়ানো প্রার্থীদেরকে আশ্রয় প্রশ্রয় দিচ্ছেন। এর উত্তরে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন বেশ কয়েকটি কারণে শেখ হাসিনা স্বতন্ত্রদের পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন। 

১. ভোটার উপস্থিতি বৃদ্ধি: আওয়ামী লীগ সভাপতি স্পষ্টতই মনে করেন যে, এবারের নির্বাচনে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হল ভোটার উপস্থিতি বাড়ানো। ভোটার উপস্থিতি যদি বাড়ে তাহলে নির্বাচন আন্তর্জাতিকভাবে গ্রহণযোগ্যতা পাবে। আর শুধু আওয়ামী লীগ জাতীয় পার্টি বা ১৪ দল নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করলে ভোটার উপস্থিতি বাড়বে না। ভোটার উপস্থিতি বাড়বে যদি স্বতন্ত্র প্রার্থীরা প্রার্থী হন। একজন স্বতন্ত্র প্রার্থী তিনি তার জনপ্রিয়তা জেনে বুঝেই নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার ঝুঁকি নেন এবং এই নির্বাচনে তার একটা জনপ্রিয়তা থাকে। তিনি তার নিজ দায়িত্বে জনগণকে ভোটকেন্দ্রে নিয়ে আসার চেষ্টা করেন। স্বতন্ত্র প্রার্থীর এই তৎপরতার ফলে আওয়ামী লীগের প্রার্থী বা দলীয় প্রার্থীরাও তৎপর হন। তারাও নির্বাচনে জয়ী হওয়ার জন্য জনগণের কাছে বার্তা নিয়ে যাওয়ার প্রয়োজন অনুভব করেন। ফলে সার্বিকভাবে নির্বাচনের একটা আবহ তৈরি হয়। এবার স্বতন্ত্র প্রার্থীরা বেশি করে দাঁড়ানোর ফলে নির্বাচনে ইতোমধ্যেই আমেজ তৈরি হয়েছে। এজন্য শেখ হাসিনা উৎসবমুখর নির্বাচনের স্বার্থে স্বতন্ত্র প্রার্থীদের পক্ষে।

২. দলের জনপ্রিয় জনপ্রিয়তা যাচাই বাছাই: এই নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থীরা যদি বেশি আসনে জয়ী হন তাহলে শেখ হাসিনার কোন ক্ষতি নেই। কারণ যারা জয়ী হবেন অধিকাংশ স্বতন্ত্রই হবেন আওয়ামী লীগের। কাজেই কে জিতল কে হারল এই নির্বাচনে মুখ্য বিষয় নয়, বরং এর মাধ্যমে আওয়ামী লীগের বিভিন্ন নির্বাচনী এলাকায় তারা কতটুকু জনপ্রিয় তা পরখ করার একটা সুযোগ পাওয়া যাচ্ছে। আর এ কারণেই আওয়ামী লীগ সভাপতি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য কঠোর বার্তা দিচ্ছেন। তিনি বারবার বলেছেন যে, নির্বাচন হতে হবে অবাধ এবং নিরপেক্ষ। কোন পক্ষপাতিত্ব করা যাবে না। আর এর ফলে যারা বিভিন্ন জরিপে এগিয়ে থেকে বা বিভিন্ন কারণে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন, তারা আসলে জনপ্রিয় কিনা, কতটুকু জনপ্রিয় সেটি বোঝা যাবে স্বতন্ত্র প্রার্থীদের সাথে তারা কিভাবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন সেটা দেখে।

৩. সারা দেশে আওয়ামী লীগের বার্তা: স্বাভাবিকভাবে মনে করা হয় যে, স্বতন্ত্র প্রার্থী হলে আওয়ামী লীগ বিভক্ত হবে। কিন্তু আওয়ামী লীগের অনেকেই সভাপতি শেখ হাসিনার সঙ্গে কথা বলে জেনেছেন যে, তিনি তেমনটা মনে করছেন না। বরং এর ফলে সারা দেশে আওয়ামী লীগের কর্মী নেতাকর্মীরা সক্রিয় থাকবেন, কাজ করবেন এবং এর মধ্য দিয়ে সংগঠন শক্তিশালী হবে। আওয়ামী লীগ এবং আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থীরা মিলে যদি ৫০ থেকে ৬০ শতাংশ ভোট পায় তাহলে আওয়ামী লীগের ভোট-ই বাড়বে। এর মধ্য দিয়ে স্বাধীনতাবিরোধী অপশক্তি এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বিরোধী রাজনীতির কবর রচিত হতে পারে বলেও আওয়ামী লীগের অনেকেই মনে করেন। 

এই সমস্ত কারণেই শেখ হাসিনা স্বতন্ত্রদের পক্ষে অবস্থান গ্রহণ করেছেন।


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭