ইনসাইড পলিটিক্স

আওয়ামী লীগ প্রতিটি আসনে বিকল্প প্রার্থী দিয়েছে: অভিযোগ জাপা ও ১৪ দলের


প্রকাশ: 14/12/2023


Thumbnail

সাঈদ খোকন ঢাকা-৬ থেকে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী। এ আসনে সমঝোতার চেষ্টা চলছে। সমঝোতা হলে সাঈদ খোকন নৌকা প্রতীক থেকে সরে দাঁড়াবেন। কিন্তু এই আসনে সাঈদ খোকনের স্ত্রীও স্বতন্ত্র হিসেবে প্রার্থী হয়েছেন। সাইদ খোকন সরে দাঁড়ালে কি হবে? সাঈদ খোকন স্ত্রী এই আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে দাঁড়াবেন এবং সাঈদ খোকনের সমর্থক, আওয়ামী লীগের সমর্থকরা তার পিছনে কাজ করবে। তাকে জেতানোর জন্য আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা একাত্মতা হবে। তখন কাজী ফিরোজ রশীদের কি হবে?

২০১৪, ২০১৮ এর নির্বাচনে কাজী ফিরোজ রশীদ এই আসন থেকে এমপি হয়েছিলেন। কিন্তু তার সাংগঠনিক অবস্থা খুবই দুর্বল। এই আসনে গত নির্বাচনে পোলিং এজেন্ট দেওয়া হয়েছিল আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের দিয়ে। এবার যদি সাঈদ খোকনের স্ত্রী সেই আসনে প্রার্থী হন তাহলে আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা তার পক্ষে কাজ করবে না। ফলে নিশ্চিত ভরাডুবির শঙ্কা করছেন কাজী ফিরোজ রশীদ। 

শুধু এই একটি আসন নয়, এরকম বহু আসনের উদাহরণ দিয়ে জাতীয় পার্টি অভিযোগ করেছে যে, আওয়ামী লীগ প্রতিটি নির্বাচনী এলাকায় বিকল্প প্রার্থী দিয়েছে। এর লক্ষ্য হল জাতীয় পার্টিকে বেইজ্জত করা। জাতীয় পার্টি গত নির্বাচনে ৪১টি আসন পেয়েছিল। এবার যদি তারা সেই আসনগুলো না পায় তাহলে তাদের নির্বাচনে যেয়ে লাভ কি-এমন অভিযোগ করেছে জাতীয় পার্টি। জাতীয় পার্টির সঙ্গে আসন সমঝোতা এবং নির্বাচন নিয়ে আজ পঞ্চম দফার মতো বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। এই বৈঠকের ফলাফল কি হয়েছে তা সম্পর্কে এখনও জানা যায়নি। 

জাতীয় পার্টির একজন নেতা বলেছেন, আওয়ামী লীগ ইচ্ছা করে বৈঠককে টেনে টেনে বিলম্বিত করছে, যেন এই ১৭ তারিখে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার সময় আর দর কষাকষির সুযোগ না থাকে। এরকম পরিস্থিতির সৃষ্টি হলে জাতীয় পার্টি নির্বাচনে কিভাবে যাবে এই প্রশ্ন করেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই জাতীয় পার্টির নেতা। 

তবে আওয়ামী লীগের নেতারা বলছেন অন্য কথা। তারা বলছেন, আসন সমঝোতা নিয়ে বৈঠক বৈঠক চূড়ান্ত প্রায়। কিছু কিছু আসন নিয়ে জটিলতা থাকলেও তা কেটে যাবে। এ ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দেবেন আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আগামীকালই এই বিষয়টি ফয়সালা হবে এমন কথা দৃঢ়তার সঙ্গে বলেছেন বৈঠকে অংশগ্রহণকারী আওয়ামী লীগের একজন নেতা। তারা বলেছেন, নির্বাচনে দর কষাকষি থাকবে। একটি আসনে নৌকা প্রতীককে বসিয়ে দেওয়ার অর্থ হল ওই আসনে আওয়ামী লীগের সংগঠনকে পরিত্যক্ত ঘোষণা করা। এটা আওয়ামী লীগের মতো একটি সংগঠনের জন্য কতটা বিপজ্জনক তা সহজেই অনুমেয়। এই কারণেই আওয়ামী লীগ সময় নিচ্ছে। তবে শেষ পর্যন্ত বৃহত্তর স্বার্থে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা ত্যাগ স্বীকারে প্রস্তুত। তারা সব সময়ই এই ত্যাগ স্বীকার করে আসছে। এটি নিয়ে বড় ধরনের সমস্যা হবে না বলে আওয়ামী লীগের নেতারা মনে করেন। কিন্তু বড় সমস্যা দেখা দিচ্ছে এই ধরনের বিকল্প প্রার্থী নিয়ে। 

জাতীয় পার্টি এবং ১৪ দলের নেতারা বিভিন্ন জায়গায় তথ্যানুসন্ধান করে দেখেছেন, প্রায় প্রত্যেকটি আসনে যেখানে যেখানে আওয়ামী লীগ ছাড় দিতে রাজি হচ্ছেন, সেখানে বিকল্প প্রার্থী রয়েছে এবং এই বিকল্প প্রার্থীরা শেষ পর্যন্ত স্বতন্ত্র হলেও আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে মাঠে থাকবেন এবং আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা তাদের সঙ্গে কাজ করবে। 

১৪ দলের একজন নেতা প্রশ্ন তুলেছেন, আওয়ামী লীগের কৌশল কি তা নিয়ে আমরা অবাক হয়ে যাচ্ছি। কারণ আওয়ামী লীগ স্বতন্ত্র প্রার্থীদেরকে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে। স্বতন্ত্র প্রার্থীদের গুরুত্ব দিতে যেয়ে আওয়ামী লীগ জোটের প্রার্থীদেরকে ছুঁড়ে ফেলে দিতে চাইছে। এই প্রবণতা আওয়ামী লীগের জন্য সর্বনাশ হতে পারে বলেও ১৪ দলের একজন নেতা মন্তব্য করেছেন। 

তবে যাই হোক না কেন, আগামীকালের মধ্যেই সবকিছু ফয়সালা হবে বলে মনে করছেন আওয়ামী লীগের নেতারা। ১৪ দল বলছে, আমাদের ধৈর্যের বাঁধ ভেঙে গেছে। দেখা যাক কি হয়। জাতীয় পার্টি বলেছে, আমরা এখন আওয়ামী লীগের চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের অপেক্ষায়। আসন ছেড়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত হলেই যে চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে জাতীয় পার্টি খুশি হবে এমনটি নয়, বরং আসন ছেড়ে দেওয়ার পাশাপাশি তারা চাইছে যে, বিকল্প এই সমস্ত প্রার্থীদেরকেও সরিয়ে দিতে হবে। কিন্তু সেটির ব্যাপারে এখনও অনড় অবস্থানে আওয়ামী লীগ।


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭