ইনসাইড বাংলাদেশ

১৯৭১ সালের ১৫ ডিসেম্বর: পাকিদের পালানোর সব পথ বন্ধ


প্রকাশ: 15/12/2023


Thumbnail

দীর্ঘ ৯ মাসের রক্তক্ষয়ী মহান মুক্তিযুদ্ধের শেষ দিন আজ। লাখো প্রাণের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীন ভূমি পবিত্র হওয়ার অপেক্ষায়। বাঙালির জয়মাল্য বরণ আর হানাদার বাহিনীর আত্মসমর্পণের শেখ মুহূর্ত। দেশের সব মানুষের হাতে যখন লাল সবুজের পতাকা, বর্বর পাকি শত্রুরা সম্পূর্ণ পরাস্ত, তখনও হানাদার প্রধান নিচু হতে চান না। 

৭১' এর ১৫ ডিসেম্বর পাকিস্তানের প্রেসিডেন্টের বিশেষ দূত ও জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে পাকিস্তানি প্রতিনিধি দলের নেতা জুলফিকার আলী ভুট্টো পোল্যান্ডের দেওয়া আত্মসমর্পণের  প্রস্তাবে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া দেখান। এর আগে ভ্রাতৃপ্রতিম দেশ পোল্যান্ড পাকিবাহিনীকে ৭২ ঘণ্টার মধ্যে আত্মসমর্পণের প্রস্তাব দেয়, বাংলাদেশ সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করার কথা বলে।

ভুট্টো এ প্রস্তাবের জবাবে বলেন, 'আমি সারেন্ডার ডকুমেন্ট নিয়ে ফিরতে চাই না। আমরা কী করব বা নিরাপত্তা কীভাবে ফিরে আসবে, আমাদের এখানে এসে তা বলার কথা ছিল। কিন্তু এই প্রসঙ্গে সবাই চুপ।'

আত্মসমর্পণ প্রস্তাবের সেই দলিল ছিঁড়তে ছিঁড়তে বলেন, 'আমরা যুদ্ধ চালিয়ে যাব। কেন আমি নিরাপত্তা পরিষদে সময় নষ্ট করছি? আমি যাচ্ছি। জাতিসংঘে এটাই আমার শেষ আসা।' এ সময় তিনি ও পাকিস্তান প্রতিনিধি দলের সদস্যরা নিরাপত্তা পরিষদের সভা বর্জন করে ফিরে যান। তারা নিরীহ বাঙালিদের অত্যাচার করলো, জাতিসংঘের মতো সর্ববৃহৎ সংগঠনও তোয়াক্কা করলো না। পতন তখন অবধারিত।

অন্যদিকে, ১৫ ডিসেম্বর ঢাকায় পাকিস্তানি সামরিক বাহিনীর পূর্বাঞ্চলীয় কমান্ডার লেফটেন্যান্ট জেনারেল আমীর আবদুল্লাহ নিয়াজী পাকিস্তান দূতাবাসের মাধ্যমে ভারতের কাছে  যুদ্ধবিরতির আবেদন জানান। এ সময় ভারতীয় বাহিনীর শ্যাম জেনারেল মানেকশ সন্ধ্যা ৫টা থেকে সকাল ৯টা পর্যন্ত ঢাকার ওপর বিমান হামলা বন্ধ রাখার নির্দেশ দেন। ভারতীয় বাহিনীর পক্ষ থেকে লেফটেন্যান্ট জেনারেল নিয়াজীকে পাঠানো এক বার্তায় বলা হয়, 'পাকিস্তানি বাহিনী নিঃশর্ত আত্মসমর্পণ করবে কি না, তা জানানোর জন্য বিশেষ বেতার কেন্দ্র খোলা হয়েছে এবং কোড নম্বর দেওয়া হয়েছে। ১৬ ডিসেম্বর সকাল ৯টার মধ্যে শর্তহীন আত্মসমর্পণ না করা হলে ফের বিমান হামলা শুরু হবে। ভারত বা বাংলাদেশ সরকারের কাছে আত্মসমর্পণ করলে জেনেভা কনভেনশনের পূর্ণ সুযোগ দেওয়া হবে।'

ঢাকা সম্পূর্ণ দখলে নিতে ১৫ ডিসেম্বরও যুদ্ধ চলে। সাভারে মুক্তিবাহিনীর কাছে পরাস্ত হয়ে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী গাবতলীর কাছে অবস্থান নেয়। পরে ভারতীয় মিত্রবাহিনী সাভার থেকে ঢাকার উদ্দেশে যাত্রা শুরু করে। এ সময় কাদের সিদ্দিকীর নেতৃত্বে কাদেরিয়া বাহিনীও মিত্রবাহিনীর সঙ্গে যোগ দেয়। এদিন রাত ২টার দিকে গাবতলী ব্রিজের কাছে মিত্রবাহিনীর সঙ্গে পাকিস্তানি বাহিনীর ব্যাপক সংঘর্ষ হয়। এ সময় মিত্রবাহিনীর আরেকটি দল যোগ দিলে দুই পক্ষে রাতভর যুদ্ধ হয়।

এছাড়াও ভারতীয় নৌবাহিনীর সহযোগিতায় সোভিয়েত রণতরীর ২০টি জাহাজ ভারত মহাসাগরে অবস্থান নিলে মার্কিন ৭ম নৌবহর দিক পরিবর্তন করে। চট্টগ্রামে লেফটেন্যান্ট শওকতের নেতৃত্বে গণবাহিনীর কোম্পানি, ক্যাপ্টেন গফফারের নেতৃত্বে চতুর্থ বেঙ্গলের দল ও ক্যাপ্টেন জাফর ইমামের নেতৃত্বে ১০ ইস্ট বেঙ্গলের যোদ্ধাদের কাছে মেজর হাদীর নেতৃত্বে হাটহাজারীতে থাকা হানাদার বাহিনী আত্মসমর্পণ করে। পরে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় মুক্তিবাহিনীর দখলে চলে আসে। চট্টগ্রামে দশম ইস্ট বেঙ্গলের চার্লি কোম্পানির কমান্ডার লেফটেন্যান্ট দিদারের নেতৃত্বে মুক্তিযোদ্ধারা হানাদার বাহিনীর কুমিরা ঘাঁটিতে ব্যাপক আক্রমণ চালায়। কিন্তু পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর ব্যাপক আক্রমণের মুখে এক পর্যায়ে ফৌজদারহাটে গিয়ে পৌঁছায় মুক্তিবাহিনী। এরপর মিত্রবাহিনীর সহযোগিতায় মুক্তিবাহিনী হানাদার বাহিনীর ওপর আক্রমণের জন্য এগিয়ে যায়। সন্ধ্যার দিকে চট্টগ্রামের ভাটিয়ারীতে মুক্তিবাহিনী হানাদার বাহিনীর ওপর আক্রমণ চালায়। এ সময় মুক্তিবাহিনীর সঙ্গে হানাদার বাহিনীর ব্যাপক সংঘর্ষ হয়। 

১৯৭১ সালের ১৫ ডিসেম্বর গাজীপুর, খাগড়াছড়ি হানাদারমুক্ত হয়। ষমুক্তিবাহিনীর কাছে কুমিল্লা ময়নামতি সড়কে অবস্থানরত ১৫০ হানাদার সেনা আত্মসমর্পণ করে। খুলনাও মুক্তিবাহিনী দখলে নিয়ে নেয়। বগুড়া ক্যান্টনমেন্টে ১ হাজার ৭০০ সেনা, অস্ত্র ও গোলাবারুদ নিয়ে আত্মসমর্পণ করে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী।

এই দিনে ফরিদপুরের মধুখালির কামারখালীতে মুক্তিবাহিনীর একটি দল হানাদার বাহিনীর ঘাঁটির ওপর ব্যাপক আক্রমণ চালায়। হানাদার বাহিনী ফরিদপুরের দিকে পালাতে শুরু করলে ভারতীয় মিত্রবাহিনী তাদের ধাওয়া করে। এক পর্যায়ে হানাদার বাহিনী মিত্রবাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করে। সিলেটে মেজর শাফায়াত জামিলের নেতৃত্বে ৪ কোম্পানি মুক্তিযোদ্ধা সালুটিকর বিমান বন্দরের দিকে অগ্রসর হবার পথে গোবিন্দগঞ্জ ও বিশ্বনাথ দখল করে নেন। এ সময়  প্রায় ৩০০ মুক্তিযোদ্ধার একটি দল নিয়ে ক্যাপ্টেন নবী রাধানগর গোয়াইঘাট আর্টিলারি সাপোর্ট ছাড়াই আক্রমণ করে দখল করে নেন। এক পর্যায়ে মুক্তিবাহিনীর আক্রমণের মুখে হানাদার বাহিনী পালাতে শুরু করে।পাকিস্তানি সামরিক বাহিনীর পূর্বাঞ্চলীয় কমান্ডার লেফটেন্যান্ট জেনারেল আমীর আবদুল্লাহ নিয়াজী পাকিস্তান দূতাবাসের মাধ্যমে ভারতের কাছে যুদ্ধবিরতির আবেদন জানান। এ সময় ভারতীয় বাহিনীর শ্যাম জেনারেল মানেকশ সন্ধ্যা ৫টা থেকে সকাল ৯টা পর্যন্ত ঢাকার ওপর বিমান হামলা বন্ধ রাখার নির্দেশ দেন। ভারতীয় বাহিনীর পক্ষ থেকে লেফটেন্যান্ট জেনারেল নিয়াজীকে পাঠানো এক বার্তায় বলা হয়, 'পাকিস্তানি বাহিনী নিঃশর্ত আত্মসমর্পণ করবে কি না, তা জানানোর জন্য বিশেষ বেতার কেন্দ্র খোলা হয়েছে এবং কোড নম্বর দেওয়া হয়েছে। ১৬ ডিসেম্বর সকাল ৯টার মধ্যে শর্তহীন আত্মসমর্পণ না করা হলে ফের বিমান হামলা শুরু হবে। ভারত বা বাংলাদেশ সরকারের কাছে আত্মসমর্পণ করলে জেনেভা কনভেনশনের পূর্ণ সুযোগ দেওয়া হবে।'



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭