ওয়ার্ল্ড ইনসাইড

পাকিস্তানে সেনাবাহিনীকে ক্ষমতায় আনতে চায় তত্বাবধায়ক সরকার?


প্রকাশ: 15/12/2023


Thumbnail

পাকিস্তানে একটি স্বচ্ছ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন আয়োজনের লক্ষে গত ১৪ আগষ্ট তত্বাবধায়ক সরকার গঠন করা হয়। গেল নভেম্বর মধ্যে পাকিস্তানে একটি জাতীয় নির্বাচন আয়োজন করার কথা। এ সময়ের মধ্যে নির্বাচন না করায় তত্বাবধায়ক সরকারের আগ্রহ ও সক্ষমতা নিয়ে সন্দেহের সৃষ্টি হয়েছে পাকিস্তানের রাজনৈতিক মহলে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, পাকিস্তানে এ তত্ববধায়ক সরকারের মাধ্যমে আবারও ক্ষমতায় আসতে পারে দেশটির সেনাবাহিনী। 

পাকিস্তান তত্ববধায়ক সরকার প্রধান আনোয়ারুল হক কাকার শপথ নিয়ে জানিয়েছিলেন, আগামী ৩ মাসের মধ্যে তিনি নির্বাচন আয়োজন করবেন। নির্বাচন আয়োজনে তিনি রাজনৈতিক দলগুলোকে নিশ্চয়তা দেন। তবে এখন তিনি বলছেন, নির্বাচনের আগে নির্বাচনী এলাকার সীমানা নির্ধারণ করা প্রয়োজন, এর আগে নির্বাচন করা সম্ভব না। ফলে নির্বাচন আরও পিছিয়ে যেতে পারে।

পাকিস্তানের বিদায়ী সরকার মেয়াদের শেষ দিনে একটি নতুন আদমশুমারি অনুমোদন করে। পাকিস্তানের নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে, নির্বাচনের আগে অবশ্যই নতুন নির্বাচনী সীমানা নির্ধারণ করতে হবে। কিন্তু নির্বাচন সীমান নির্ধারণ শেষ হবে ডিসেম্বরে। ধারণা করা হচ্ছে, নির্বাচন আরো পিছিয়ে ফেব্রুয়ারিতে যেয়ে ঠেকতে পারে।

নির্বাচনী বিশেষজ্ঞদের মতে , এ প্রক্রিয়াটি শেষ করতে করতে দেশব্যাপী ভোট কয়েক মাস পিছিয়ে যেতে পারে, সম্ভবত ফেব্রুয়ারি বা মার্চ মাস পর্যন্ত পেছানোর সম্ভাবনা রয়েছে। এভাবে নির্বাচন পেছাতে থাকলে নির্বাচন আয়োজন নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হতে পারে যা দেশটির রাজনৈতিক পরিস্থিতিকে অস্থিতিশীল করে তুলবে।

কমিশনের একজন সাবেক কর্মকর্তার মতে, ২৪ কোটি জনসংখ্যার দেশে শত শত কেন্দ্রীয় এবং প্রাদেশিক নির্বাচনি আসনের জন্য নতুন সীমানা নির্ধারণে ছয় মাস বা তার চেয়ে বেশি সময় প্রয়োজন হতে পারে। এই পরিস্থিতিতে যদি নির্বাচন আয়োজন নিয়ে দেশে একটি বিশৃঙ্খলা তৈরি হয় তবে সেনাবাহিনী সরকারের উপর নিয়ন্ত্রণ নিতে আগ্রহী হবে। 

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থাটি যদি তার সাংবিধানিক মেয়াদের বাইরেও প্রসারিত হয়, তবে নির্বাচিত সরকার ছাড়া দীর্ঘ সময়ের তত্বাবধায়ক সরকার সেনাবাহিনীকে নিয়ন্ত্রণ নেয়ার জন্য সুযোগ করে দেবে।

এছাড়া দেশটিতে সাংবিধানিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকটের থাকায় নির্বাচন নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। এসব কারণে পাকিস্তানে শীঘ্রই নির্বাচন আয়োজন করা সম্ভব নয় বলে জানিয়েছেন দেশটির রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।

এর আগে তত্বাবধায়ক সরকারের তথ্যমন্ত্রী মুর্তজা সোলাঙ্গি জানিয়েছেন, পাকিস্তানে বর্তমানে অর্থনৈতিক অস্থিরতা বিরাজ করছে। মুদ্রাস্ফীতি এবং উচ্চ সুদের হারে সাধারণ মানুষ এবং ব্যবসায়ের উপর চাপ সৃষ্টি করেছে। তাই বর্তমানে সরকার ও তার  উত্তরসূরির জন্য প্রধান চ্যালেঞ্জ হল অর্থনৈতিক সংস্কার। এমন বক্তব্যে নির্বাচন প্রলম্বিত করার দিকে ইঙ্গিক করছে বলে মনে করেছে দেশটির রাজনীতিবিদরা।

পাকিস্তানের রাজনীতি ও সরকার পরিচালনায় পর্দার আড়ালে সেনাবাহিনীর ব্যাপক ভূমিকা রয়েছে। দেশটির ৭৬ বছরের ইতিহাসে সেনাবাহিনী সরাসরি তিন দশকের বেশি শাসন করেছে। দেশটির রাজনীতিতে প্রচণ্ড প্রভাবশালী সেনাবাহিনী। 

পকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রীর শাহবাজ শরীফ সেনাবাহিনীর ঘনিষ্ট হিসেবে পরিচিত। শাহবাজ শরীফের নির্দেশে কাকারকে তত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান করা হয়। শাহাবাজ শরীফের মতো আনোয়ারুল হক কাকারও সেনাবাহিনীর ঘনিষ্ট হিসেবে পরিচিত। ফলে সেনাবাহিনীকে ক্ষমতায় আনার জন্য কাকার সরকার ইচ্ছাকৃতভাবে নির্বাচন বিলম্ব করতে পারে বলে ধারণা। ফলে পাকিস্তানে আবারও সেনাবাহিনী ক্ষমতা গ্রহন করতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করছেন বিশ্লেষকরা।



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭