ইনসাইড পলিটিক্স

শরিকদের সাথে সমঝোতার চেয়েও আওয়ামী লীগ যে বিষয়গুলোকে গুরুত্ব দিচ্ছে


প্রকাশ: 15/12/2023


Thumbnail

আওয়ামী লীগের সঙ্গে নির্বাচনে আসন সমঝোতা নিয়ে শরিকদের সঙ্গে টানাপড়েন দেখা দিয়েছে। শুধুমাত্র জাতীয় পার্টি নয়, ১৪ দলের শরিকদের সঙ্গেও আওয়ামী লীগের দ্বন্দ্ব সৃষ্টি হয়েছে আসন সমঝোতা নিয়ে। গতকাল আওয়ামী লীগের নেতা এবং ১৪ দলের সমন্বয়ক আমির হোসেন আমু ১৪ দলের শরিকদের জন্য ৭টি আসন ছেড়ে দেওয়ার ঘোষণা দেন। ৭টি আসনের তালিকাও তিনি শরিকদের কাছে হস্তান্তর করেন। কিন্তু ১৪ দলের শরিকরা এই ৭টি আসনকে অপ্রতুল বলে মনে করেন এবং তারা আরও বেশি আসন চেয়েছেন। এই আসনগুলো দিয়ে তারা সন্তুষ্ট নয়-এমন বার্তা স্পষ্ট ভাবে জানিয়ে দিয়েছেন। 

কিন্তু আজ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, এর বেশি আসন দেওয়া শরিকদেরকে সম্ভব নয়। অন্যদিকে জাতীয় পার্টিও যে আসনগুলো চাচ্ছে এবং যে সমস্ত শর্ত আরোপ করেছে সে সমস্ত শর্ত মানতে আওয়ামী লীগ রাজি নয়। জাতীয় পার্টি ৬০টি আসন চলছে এবং যে সমস্ত আসন তাদেরকে ছেড়ে দেওয়া হবে সেই সমস্ত আসনে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী বা স্বতন্ত্র প্রার্থীরা যেন না থাকে তারও গ্যারান্টি চেয়েছে। এ ব্যাপারে আওয়ামী লীগ নেতিবাচক মনোভাব পোষণ করছে। আওয়ামী লীগ সুস্পষ্ট ভাবে জানিয়ে দিয়েছে যে, কোন অবস্থাতেই তাদের পক্ষে স্বতন্ত্র প্রার্থীদের বসিয়ে দেওয়া সম্ভব না। এবার লক্ষ্য করার বিষয় যে, আওয়ামী লীগ শরিকদের ব্যাপারে অতটা উদার নয়। বরং শরিকদের উপেক্ষা করার নীতি গ্রহণ করছেন। 

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, আওয়ামী লীগ নির্বাচনী পরিকল্পনার অংশ হিসেবেই শরিকদেরকে কম গুরুত্ব দিচ্ছে। আওয়ামী লীগের এই নির্বাচন নিয়ে প্রধান যে লক্ষ্য সে লক্ষ্যে শরিকরা খুব গুরুত্বপূর্ণ ফ্যাক্টর নয় বলেও আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা জানিয়েছেন। আওয়ামী লীগের নির্বাচনী যে পরিকল্পনা সেই পরিকল্পনার প্রধান লক্ষ্যগুলোর মধ্যে রয়েছে;

১. ভোটার উপস্থিতি বাড়ানো: আওয়ামী লীগ মনে করে যে, এই নির্বাচন তখনই আন্তর্জাতিকভাবে গ্রহণযোগ্য হবে, যখন নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি উল্লেখযোগ্য ভাবে বাড়বে। অর্থাৎ ৪০ শতাংশ বা তার আশেপাশে ভোটার উপস্থিতি থাকলে সেই নির্বাচন আন্তর্জাতিকভাবে গ্রহণযোগ্য হবে। এ কারণে আওয়ামী লীগের প্রধান লক্ষ্য হলো নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি বাড়ানো। আওয়ামী লীগ মনে করে যে, শরিকদের শর্ত যদি মানা হয় তাহলে ভোটার উপস্থিতি অনেক কমে যাবে। বিশেষ করে স্বতন্ত্র প্রার্থী না থাকলে নির্বাচনে জনগণের উৎসাহ উদ্দীপনা থাকবে না। নির্বাচন হবে অপ্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ। এ রকম সমঝোতার নির্বাচন আন্তর্জাতিকভাবে গ্রহণযোগ্য হতে পারে। 

২. সমঝোতার ব্যাপারে পশ্চিমা বিশ্বের নেতিবাচক মনোভাব: আওয়ামী লীগ মনে করে যে, নির্বাচনে আসন ভাগাভাগি সমঝোতা কাউকে জিতিয়ে দেওয়ার গ্যারান্টি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের চেতনার পরিপন্থী। বরং যাদেরকে মনোনয়ন দেওয়া হবে তারা নিজ জনপ্রিয়তা এবং শক্তিতে বিজয়ী হলেই একটি নিরপেক্ষ নির্বাচন সম্ভব। ভোটের আগেই যদি আসন ভাগাভাগি ফয়সালা হয়ে যায় এবং জয়ের গ্যারান্টি দেওয়া হয়, তাহলে সেই নির্বাচনটি অর্থপূর্ণ নির্বাচন হিসাবে বিবেচিত হবে না আন্তর্জাতিক মহল। এই কারণে আওয়ামী লীগ এই ধরনের আসন সমঝোতা বা কাউকে জয়ী করার গ্যারান্টি দিতে রাজি নয়।

৩. শরিকদের সাংগঠনিক দুর্বলতা: আওয়ামী লীগ সারা দেশে নির্বাচনী জরিপ করেছে। এই জরিপগুলোতে দেখা যাচ্ছে যে, অধিকাংশ আসনেই শরিকদের অবস্থান অত্যন্ত খারাপ। তাদের জনপ্রিয়তা তলানিতে। এর ফলে এই আসনগুলোতে যদি স্বতন্ত্র প্রার্থী না থাকে তাহলে ভোটাররা ভোট দেবেন না। উপনির্বাচনগুলোর অভিজ্ঞতা থেকে আওয়ামী লীগ দেখেছে যে সমস্ত আসনে শরিকদেরকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে বা শরিকরা করেছে সেই সমস্ত আসনে ভোটার উপস্থিতি ছিল হতাশাজনক। আওয়ামী লীগ জাতীয় নির্বাচনে এই ঝুঁকি নিতে চায় না। একারণেই আওয়ামী লীগ শরিকদের চেয়ে নির্বাচন যেন অবাধ ও সুষ্ঠু হয় সেটিকে গুরুত্ব দিচ্ছে। আওয়ামী লীগের নেতারা মনে করছেন যে, যদি জাতীয় পার্টি বা ১৪ দল নির্বাচনে নাও থাকে, তারপরও যদি নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক হয় এবং ভোটার উপস্থিতি সন্তোষজনক থাকে তাহলে সেটি ভালো নির্বাচন হিসাবে গৃহীত হবে।


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭