ইনসাইড ইকোনমি

বাংলাদেশের মাথাপিছু জিডিপি ভারত-পাকিস্তানের চেয়ে ওপরে


প্রকাশ: 16/12/2023


Thumbnail

বাংলাদেশের মাথাপিছু জিডিপিতে দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম বড় শক্তির দুটি দেশ ভারত ও পাকিস্তানের ওপরে। দুই দশক ধরেই অর্থনৈতিক ও সামাজিক ক্ষেত্রে (যেমন: গড় আয়ু, সাক্ষরতার হার, নারীর ক্ষমতায়ন) ভারত-পাকিস্তানের চেয়ে এগিয়ে ছিল বাংলাদেশ।

আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) হিসাব অনুযায়ী, দেশের অভ্যন্তরে মাথাপিছু আয়ের ক্ষেত্রে টানা চার বছর ধরে ভারতের চেয়ে এবং আট বছর ধরে পাকিস্তানের চেয়ে এগিয়ে আছে বাংলাদেশ। বাংলাদেশের মাথাপিছু জিডিপি (মোট দেশজ উৎপাদন) এখন ২ হাজার ৬২১ ডলার। অন্যদিকে ভারতের ২ হাজার ৬১২ ডলার এবং পাকিস্তানের ১ হাজার ৪৭১ ডলার। গণমাধ্যমের প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে।

এ ব্যাপারে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, গত দেড় দশকের পরিকল্পিত বাজেট দৃশ্য পালটে দিয়েছে। প্রবৃদ্ধির হার, কর্মসংস্থান, বিনিয়োগ, অবকাঠামো উন্নয়নসহ সবকিছুই পরিকল্পনামাফিক করার সুফল মিলছে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) হিসাবে, বাংলাদেশের মানুষের মাথাপিছু গড় আয়ের ৯৬ শতাংশই আসে দেশের অভ্যন্তর থেকে।

এক দশকে মাথাপিছু আয় দ্বিগুণ করেছে বাংলাদেশ। সর্বশেষ হিসাবে, এখন মাথাপিছু আয় ২ হাজার ৭৬৫ ডলার। ২০১৩-১৪ অর্থবছরে মাথাপিছু আয় ছিল ১ হাজার ৩১৬ ডলার। গত এক দশকে দক্ষিণ এশিয়ায় সবচেয়ে দ্রুতগতিতে মাথাপিছু আয় বেড়েছে বাংলাদেশে।

২০২০ সালে প্রথমবারের মতো মাথাপিছু জিডিপিতে ভারতকে ছাড়িয়ে যায় বাংলাদেশ। ওই বছর বাংলাদেশের মাথাপিছু জিডিপি ছিল ১ হাজার ৮৮৮ ডলার। আর ভারতের ছিল ১ হাজার ৮৭৭ ডলার। মূলত কোভিডের কারণে কঠোর লকডাউন, ব্যবসা-বাণিজ্যে শ্লথগতিসহ নানা কারণে ভারতের অর্থনীতি বেশ সংকুচিত হয়। এতেই বাংলাদেশ এগিয়ে যায়। কারণ, কোভিডের মধ্যেও বাংলাদেশের জিডিপি সংকুচিত হয়নি।

দুই দশক ধরে বাংলাদেশ ও ভারতের অর্থনীতি অনেক বেশি দ্রুত হারে এগিয়েছে। দুই দেশের একসঙ্গে এগিয়ে যাওয়ায় ছেদ পড়তে শুরু করে ২০১৭ সাল থেকে। ভারত অর্থনীতির এগিয়ে যাওয়ার গতি ধরে রাখতে পারেনি। অন্যদিকে বাংলাদেশের অর্থনীতির গতি বাড়তেই থাকে। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধি প্রায় ৮ শতাংশ হয়ে যায়।

আবার গত ১৫ বছরে ভারতের জনসংখ্যা বেড়েছে ২১ শতাংশ, আর বাংলাদেশের বেড়েছে ১৮ শতাংশ। এসবের প্রভাব পড়েছে মাথাপিছু আয়ে। ২০০৭ সালেও বাংলাদেশের মাথাপিছু জিডিপি ছিল ভারতের অর্ধেক। আর ২০০৪ সালে ভারতের মাথাপিছু জিডিপি ছিল বাংলাদেশের তুলনায় ৭০ শতাংশ বেশি।

২০১৬ সালে প্রথমবারের মতো পাকিস্তানকে মাথাপিছু জিডিপিতে পেছনে ফেলে বাংলাদেশ। ওই বছর বাংলাদেশের মাথাপিছু জিডিপি বেড়ে দাঁড়ায় ১ হাজার ৬৫৯ ডলার। পাকিস্তানের ছিল ১ হাজার ৪৬৮ ডলার। এরপর আর কোনো বছর পাকিস্তান বাংলাদেশকে ছাড়াতে পারেনি। মাথাপিছু জিডিপি ওঠানামার মধ্যে ছিল দেশটির। সর্বশেষ ২০২৩ সালে এসে পাকিস্তানের মাথাপিছু জিডিপি দাঁড়ায় ১ হাজার ৪৭১ ডলার।

একটি দেশের মানুষ কতটা সম্পদশালী, তা বোঝার জন্য তাদের ক্রয়ক্ষমতা কেমন, সেটিকে বিবেচনায় নেওয়া হয়। নিজের আয় দিয়ে একজন মানুষ প্রয়োজনীয় কী কী জিনিস কিনতে পারেন, তা দেখা হয়। বিভিন্ন দেশের অর্থনীতিকে তুলনা করতে ক্রয়ক্ষমতার সমতা বা পারচেজিং পাওয়ার প্যারিটির (পিপিপি) ভিত্তিতে জিডিপি এবং মাথাপিছু জিডিপি নির্ধারণ করা হয়। সেই হিসাবে পাকিস্তানের চেয়ে এগিয়ে আছে বাংলাদেশ। আর ভারতের চেয়ে পিছিয়ে।

২০২৩ সালের আইএমএফের হিসাবে, পিপিপি অনুসারে বাংলাদেশের মাথাপিছু আয় ৮ হাজার ৬৭০ ডলার। ভারত ও পাকিস্তানের যথাক্রমে ৯ হাজার ১৮০ ডলার ও ৬ হাজার ৭৭০ ডলার।

এ বিষয়ে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিংয়ের (সানেম) নির্বাহী পরিচালক সেলিম রায়হান একটি গণমাধ্যমকে বলেন, ‘মাথাপিছু জিডিপিতে ভারতের চেয়ে এগিয়ে থাকা অবশ্যই খুশির খবর। এটি উন্নয়নের গুরুত্বপূর্ণ সূচক, কিন্তু একমাত্র নয়। মাথাপিছু আয় সমভাবে বণ্টিত হচ্ছে কি না, বৈষম্য কেমন—এসবও দেখতে হবে। সেই দিক বিবেচনা করলে ক্রয়ক্ষমতার সমতা অনুসারে ভারতের চেয়ে পিছিয়ে আছি।’ সেলিম রায়হান মনে করেন, ‘অর্থনীতির সক্ষমতার অন্যান্য দিক যেমন রিজার্ভ, মূল্যস্ফীতি, রপ্তানি, অবকাঠামো, ব্যবসায় খরচ—এসব খাতে ভারতের চেয়ে অনেক পিছিয়ে আছি। এখনো অনেক দূর যেতে হবে।’

শুধু অর্থনীতি নয়, সামাজিক সূচকেও বাংলাদেশ ভালো করছে। ভারত ও পাকিস্তানের চেয়ে বাংলাদেশের মানুষ বেশি দিন বাঁচেন। বাংলাদেশের মানুষের গড় আয়ুষ্কাল ৭২ দশমিক ৪ বছর। মানুষের গড় আয়ু ভারতে ৭২ বছর। আর পাকিস্তানে এই গড় আয়ু প্রায় ৬৯ বছর।

অন্যদিকে মৌলিক শিক্ষার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশ ও ভারতে এখন সাক্ষরতার ৭৭ শতাংশ। অন্যদিকে পাকিস্তানে এই হার ৫৯ শতাংশ। এ ছাড়া মাতৃমৃত্যু, শিশুমৃত্যু, প্রজনন হার—এসব খাতেও বাংলাদেশ ভালো করছে।



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭