ইনসাইড পলিটিক্স

নির্বাচন বানচালের বিএনপির শেষ চেষ্টাও ব্যর্থ হলো যেভাবে


প্রকাশ: 17/12/2023


Thumbnail

জাতীয় পার্টি নির্বাচন থেকে সরে যাবে। ১৪ দলের শরিকরাও নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দেবে। ফলে আওয়ামী লীগ একটি একতরফা নির্বাচনের পথে হাঁটবে—এরকম একটি ষড়যন্ত্রের নীলনকশা তৈরি করেছিল লন্ডনে পলাতক বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক জিয়া। সে অনুযায়ী সব আয়োজনও সম্পন্ন হয়েছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত বিএনপির নীল নকশা সফল হল না। জাতীয় পার্টি নির্বাচনে শেষ পর্যন্ত থাকার ঘোষণা দিয়েছে। অন্যদিকে ১৪ দলের শরিকরা অসন্তুষ্ট হলেও নির্বাচনে থেকেছে। 

বিভিন্ন বলছে যে, নির্বাচন থেকে যেন প্রধান প্রধান রাজনৈতিক দলগুলো সরে যায় সেজন্য শেষ মুহূর্তে বিএনপি এবং তার নিয়ন্ত্রিত সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা নিরন্তর চেষ্টা করছে। কিন্তু এই চেষ্টা শেষ পর্যন্ত সফল হয়নি। 

একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র বলছে যে, আওয়ামী লীগের কাছে সুস্পষ্ট ভাবে খবর ছিল জাতীয় পার্টি শেষ পর্যন্ত নির্বাচনে থাকবে না। আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দলের একাধিক সিনিয়র নেতাকে ডেকে জানিয়ে ছিলেন যে জাতীয় পার্টি নির্বাচনে থাকবে না। একই বক্তব্য তিনি মন্ত্রিসভার বৈঠকের পর অনুষ্ঠানিকভাবে কয়েকজন মন্ত্রীর সাথেও আলোচনা করেছিলেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত জাতীয় পার্টি নির্বাচনে থাকল। 

জাতীয় পার্টি যেন নির্বাচনে না থাকে সে জন্য মোটা অঙ্কের অফার দেওয়া হয়েছিল শীর্ষনেতাদেরকে। এছাড়াও জাতীয় পার্টি 
যদি নির্বাচন বর্জন করে তাহলে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনে জাতীয় পার্টির সঙ্গে বিএনপি ঐক্য করবে। এমনকি জিএম কাদেরকে প্রধানমন্ত্রী করারও প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত জিএম কাদের বিএনপির প্রস্তাবে সায় দিতে পারেনি। 

একাধিক কারণে বিএনপির এই নীলনকশা বাস্তবায়িত হল না বলে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন। প্রথমত, বিএনপিকে কেউ বিশ্বাস করতে চাননি। তারেক জিয়ার কথায় আস্থা রেখে কেউ ঝুঁকি নিতে চায়নি। দ্বিতীয়ত, ভারত এবং কয়েকটি বন্ধুরাষ্ট্র জাতীয় পার্টিকে বুঝিয়েছে, জাতীয় পার্টি যদি এ ধরনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে, তাহলে সেটি জাতীয় পার্টির জন্য ক্ষতিকারক হবে। তৃতীয়ত, জাতীয় পার্টির শীর্ষস্থানীয় নেতারা যারা সমঝোতায় লাভবান হয়েছেন তারা নির্বাচনে না যাওয়াটাকে ঝুঁকিপূর্ণ মনে করেছে। তাদের মতে, জাতীয় পার্টি এমনিতেই সাংগঠনিক ভাবে অনেক দূর্বল। এরপর যদি তারা নির্বাচনও বর্জন করে তাহলে অস্তিত্বহীন হয়ে পড়বে। বরং নির্বাচনে গিয়ে বিরোধী দল থাকলে বিএনপির চেয়েও আস্তে আস্তে শক্তিশালী সংগঠন হিসেবে নিজেদের গড়ে তোলার একটা পথ সুগম হবে। সেই সুযোগটা নেওয়াই যুক্তিসঙ্গত। 

হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ যেরকম জাতীয় পার্টিতে একগুচ্ছ কর্তৃত্বের অধিকারী ছিলেন জিএম কাদের সেরকম নন। বরং তাকে দলের অন্যান্য নেতাদের সঙ্গে সমঝোতা করেই চলতে হয়। আর এ কারণেই জিএম কাদেরকে একা বশীভূত করার চেষ্টা করা হলেও বা জিএম কাদেরকে একা কাছে টানা হলেও শেষ পর্যন্ত অন্যান্যদেরকে কাছে টানতে পারেনি বিএনপি। যে কারণে শুধু জিএম কাদেরের ওপর নির্ভরশীলতা থাকার ফলে জাতীয় পার্টিকে নির্বাচন থেকে দূরে রাখার চেষ্টা সফল হয়নি। 

তবে বিএনপি নেতারা মনে করছেন, এখনও তাদের সামনে সুযোগ আছে। অন্যদিকে ১৪ দল যেন নির্বাচনে না থাকে সেজন্য বড় ধরনের অফার দেওয়া হয়েছিল শরিকদেরকে। শরিকরাও অসন্তুষ্ট ছিলেন আসন ভাগাভাগি নিয়ে। কিন্তু শেষপর্যন্ত তারেকের কৌশল পরাজিত হয়েছে। তারেকের ওপর কেউ বিশ্বাস এবং আস্থা রাখতে পারেনি। আর এ কারণেই বিএনপির প্রস্তাবে সাড়া দিয়ে নির্বাচন বর্জনের পথে হাঁটেনি দলগুলো। এটি বিএনপির রাজনীতির আরেকটি বড় পরাজয়। এর ফলে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের শেষ বাধাটুকু কেটে গেল। এখন দেখার বিষয় অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন সরকার করতে পারে কি না।


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭