ইনসাইড পলিটিক্স

অবরোধ-হরতালেই সীমাবদ্ধ বিএনপির রাজনীতি!


প্রকাশ: 18/12/2023


Thumbnail

২৮ অক্টোবরের পর থেকে মাঝে দুই-একদিনের বিরতি দিয়ে ১১ দফা অবরোধ-হরতাল পালন করেছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)। সমমনা দলগুলোও আসছে বিএনপির সঙ্গে। আগামীকাল মঙ্গলবার (১৯ ডিসেম্বর) ১২ দফায় সকাল-সন্ধ্যা হরতাল ঘোষণা করেছে দলটি। সরকার পতনের যুগপৎ আন্দোলন হিসেবে শুধু অবরোধ-হরতালেই দলটির কার্যক্রম সীমাবদ্ধ রয়েছে। এ নিয়ে প্রশ্ন তুলে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, তবে কি অবরোধ-হরতালেই আটকে গেল বিএনপির রাজনীতি?

তথ্যসূত্রগুলো বলছে, বিএনপি ১১ দফায় ২২ দিন অবরোধ এবং ৩ দফায় চার দিন হরতাল কর্মসূচি পালন করে। সর্বশেষ বিএনপির ডাকা ৩৬ ঘণ্টার অবরোধ কর্মসূচি শেষ হয় ১৩ ডিসেম্বর সন্ধ্যা ৬টায়। এরপর গত শনিবার (১৬ ডিসেম্বর) এক ভার্চুয়াল ব্রিফিংয়ে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী একদিনের হরতাল ঘোষণা করেন। কুয়েতের আমির শেখ নাওয়াফ আল-আহমদ আল-সাবাহ মারা যাওয়ায় রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা করা হয়। এই কারণে আগামীকাল মঙ্গলবার (১৯ ডিসেম্বর) বিএনপি ও সমমনা দলগুলো হরতাল কর্মসূচি পালন করবে।

জানা যায়, সরকারের পদত্যাগ দাবিতে বিরোধী দলগুলোর চলমান একদফা আন্দোলনে বিএনপির সঙ্গে মাঠে নামছে এলডিপি, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশসহ সমমনা দলগুলো। এবার বিএনপির সঙ্গে আসছে নিবন্ধন বাতিল হওয়া দল জামায়াতে ইসলামী। তবে, বিষয়টি নিয়ে সংশ্লিষ্টদের মধ্যে এখনো আলাপ-আলোচনা চলছে। তবে, বিএনপি এবং সমমনা দলগুলোর নেতাকর্মীরা মাঠে না থাকায় আন্দোলনে সারা মিলছে না। অন্যদিকে নির্বাচনের অংশ নিতে যাওয়া দলগুলো এ আন্দোলনকে ভ্রুক্ষেপ করছে না।

একদফা দাবি আদায়ের আন্দোলনকে কেন্দ্র করে ২৮ অক্টোবর সহিংসতায় পুলিশের প্রাণহানি, প্রধান বিচারপতির বাসভবনে হামলা, হাসপাতাল ভাংচুর, অগ্নিসংযোগ করে বিএনপির নেতাকর্মীরা। এতে রাজধানীতে পৃথক মামলা হয়। সেই মামলায় বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মী এখনো জেলে। তাদের বিচার চলমান। বিপুল সংখ্যাক নেতাকর্মী রাজনৈতিক ময়দানে না থাকায় বিএনপির আন্দোলনে স্থবিরতা দেখা দিয়েছে বলেও মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। তারা বলছেন, মাঠপর্যায়ে নেতাকর্মী না থাকায় বিএনপির আন্দোলন গতি পাচ্ছে না।

তথ্যসূত্রে জানা যায়, এবারের নির্বাচনে জামায়াত প্রসঙ্গে বিএনপির হাইকমান্ডের সঙ্গে দলটির নীতিনির্ধারকদের একাধিক বৈঠক হয়েছে। উভয় দলের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা এরই মধ্যে বৈঠকের মাধ্যমে একসঙ্গে আন্দোলন কর্মসূচি পালনের সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছেন। এর আগে বেশ কয়েক দফা অবরোধ-হরতালে জামায়াতে ইসলামী পক্ষে থাকলেও রাজপথে তাদের কার্যক্রম দেখা যায়নি। অবরোধ-হরতাল-মানববন্ধন ব্যাতিত বিএনপিকেও অন্য কার্যক্রম নিতে দেখা যায়নি।

জামায়াতের একজন কেন্দ্রীয় নায়েবে আমির একটি গণমাধ্যমকে বলেছেন, যে কোনো দিন একই মঞ্চে আসার ঘোষণা আসবে। এরই মধ্যে বিএনপির সঙ্গে ঢাকা মহানগরসহ সারা দেশে নেতৃস্থানীয় পর্যায়ের নেতাদের সঙ্গেও কয়েক দফা মতবিনিময় হয়েছে। আন্দোলন সমন্বয় করার জন্য সারা দেশে বিএনপি-জামায়াতের একাধিক টিমও করা হয়েছে। এ বিষয়ে বিএনপির কোনো দায়িত্বশীল নেতা প্রকাশ্যে কিছু বলতে চাননি।

নির্ভরযোগ্য সূত্রগুলো বলছে, ২০১৮ সালে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর থেকেই জামায়াতের সঙ্গে বিএনপির দূরত্ব তৈরি হয়, যা বিচ্ছেদের পর্যায়ে গড়ায়। ২০২২ সালের ২৪ ডিসেম্বর থেকে বিএনপির নেতৃত্বে বিরোধী দলগুলোর যে যুগপৎ আন্দোলন কর্মসূচি চলছে, তাতে শুরুর দিকের দুটি কর্মসূচিতে জামায়াতের অংশগ্রহণ ছিল। এরপর আর কোনো কর্মসূচিতে অংশ না নিয়ে একই কর্মসূচি নিজেদের মতো করে পালন করে আসছে দলটি। এছাড়াও বিএনপির সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলনে অংশ নেওয়ার ঘোষণা দিয়ে গত বছরের ২৪ ও ৩০ ডিসেম্বর গণমিছিলে অংশ নেয় জামায়াত। এর আগে ১২ ডিসেম্বর রাতে জামায়াতের আমির শফিকুর রহমানকে গ্রেপ্তার করা হয়। ৩০ ডিসেম্বর যুগপতের গণমিছিল করতে গিয়ে মালিবাগে জামায়াতের শতাধিক নেতাকর্মী গ্রেপ্তার ও আহত হন। এ নিয়ে বিএনপি কোনো বক্তব্য বা বিবৃতি দেয়নি। এমনকি যুগপতের পরবর্তী কর্মসূচি নিয়ে জামায়াতের সঙ্গে কোনো আলোচনাও করেনি। এর পরই জামায়াত যুগপৎ আন্দোলন থেকে সরে যায়।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, এবারের নির্বাচনে অংশ না নিয়ে বিএনপি নির্বাচন বানচালের চেষ্টা করছে। কিন্তু, মাঠে নেতাকর্মীর ঘাটতি এবং সহিংস কার্যক্রমে বিএনপির আন্দোলনে ভাটা পড়েছে। তাই প্রশ্ন দেখা দিয়েছে, অবরোধ-হরতালেই কি সীমাবদ্ধ থাকবে বিএনপির রাজনীতি?



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭