এডিটর’স মাইন্ড

রাজ্জাকের বক্তব্য নিয়ে তোলপাড় আওয়ামী লীগে, ক্ষুব্ধ প্রধানমন্ত্রী (ভিডিও)


প্রকাশ: 18/12/2023


Thumbnail

আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য এবং কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাকের একটি বক্তব্য নিয়ে সরকারের ভিতর তোলপাড় চলছে। বিএনপির সব নেতাকে ছেড়ে দেওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হলেও নির্বাচনে বিএনপি আসেনি—এ রকম একটি বক্তব্য আওয়ামী লীগের মধ্যে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে। আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই বক্তব্যে বিস্মিত হয়েছেন বলে একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র নিশ্চিত করেছে। তিনি অত্যন্ত ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন এবং এ ধরনের বক্তব্য কেন, কিভাবে আওয়ামী লীগের নেতারা দিচ্ছেন তা নিয়েও তিনি প্রশ্ন করেছেন। 

আজ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের এই বক্তব্যকে নাকচ করে দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, এটি আওয়ামী লীগ বা সরকারের বক্তব্য নয়। আওয়ামী লীগের বিভিন্ন নেতারা বলছেন, ড. আব্দুর রাজ্জাক এক সময় সংস্কারপন্থি ছিলেন, কিন্তু তিনি অন্য চার নেতার মতো সংস্কার প্রস্তাব প্রকাশ্যে দেননি। বিভিন্ন সময়ে সংস্কারপন্থি পত্রিকাগুলো ড. আব্দুর রাজ্জাককে ব্যবহার করে তিনি বিভিন্ন সময়ে প্রথম আলো, ডেইলি স্টারের মতো পত্রিকাগুলোতে নিয়মিত সাক্ষাৎকার দিয়ে, মন্তব্য দিয়ে তাদের নেতিবাচক খবর গুলোকে জায়েজ করেন—এমন অভিযোগ তার বিরুদ্ধে এসেছিল। কিন্তু এবার তিনি প্রকাশ্যে এমন একটি কথা বললেন, যার অর্থ তিনি নিজেই বুঝেছেন কিনা তা নিয়ে অনেকেই সন্দেহ করতে পারেন। এর অর্থ হল, বিচার বিভাগ আওয়ামী লীগের নিয়ন্ত্রণে। আওয়ামী লীগ আসলে বিএনপির যে সমস্ত নেতারা গ্রেপ্তার হয়েছেন তারা কেউই সন্ত্রাসের কারণে বা বিশৃঙ্খলার অভিযোগে গ্রেপ্তার হননি। ড. রাজ্জাকের কথার অর্থ যা দাঁড়ায়, তাদেরকে রাজনৈতিক কারণে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। 

আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী একাধিকবার বলেছেন, কাউকে রাজনৈতিক কারণে গ্রেপ্তার করা হয়নি। যাদের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ ছিল তাদেরকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। কিন্তু ড. রাজ্জাক একাই স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্যকে উড়িয়ে দিলেন। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্যকে নাকচ করে দিয়ে তিনি যে বক্তব্য দিলেন তার অর্থ এই দাঁড়ায় যে, আওয়ামী লীগ রাজনৈতিক উদ্দেশ্য সাধনের জন্য যাকে ইচ্ছে গ্রেপ্তার করেছে, যাকে ইচ্ছা ছেড়ে দিতে পারে। বিচারবিভাগ সম্পূর্ণ আওয়ামী লীগের নিয়ন্ত্রণে—এ রকম একটি আত্মঘাতী বক্তব্য তিনি জেনে বুঝে গিয়েছেন নাকি ইচ্ছে করে স্যাবোটাজ করার জন্য দিয়েছেন এই প্রশ্ন উঠেছে। 

তিনি একজন মার্জিত শিক্ষিত ব্যক্তিত্ব। প্রকৃচির নেতা ছিলেন। আওয়ামী লীগের ভাগ্যবান ব্যক্তিদের মধ্যে তিনি একজন।২০০১ সালের নির্বাচনে তিনি টাঙ্গাইলের আবুল হাসান চৌধুরীর আসনটিতে নির্বাচন করেছিলেন। ওই আসনে আবুল হাসান চৌধুরীর দ্বৈত নাগরিকত্বের সমস্যা না থাকত, তিনি যদি নির্বাচন করতে অপারগতা প্রকাশ না করতে, তাহলে ড. রাজ্জাক হয়তো প্রকৃচির নেতা হিসেবেই থাকত। কিন্তু এরপর না চাইতেই সব কিছু পেয়েছে ড. আব্দুর রাজ্জাক। প্রায় লাফিয়ে লাফিয়ে আওয়ামী লীগের মতো একটা রাজনৈতিক দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য হয়েছেন, হয়েছেন অন্যতম নীতি নির্ধারক। কিন্তু তার রাজনৈতিক গভীরতা কত, প্রাজ্ঞতা কত এ নিয়ে অনেকেই বিভিন্ন সময়ে প্রশ্ন তোলে। 

আওয়ামী লীগের অনেকে মনে করেন, যারা আওয়ামী লীগের মধ্যে হঠাৎ এসে সব কিছু পেয়ে গেছেন, তাদের মধ্যে ড. আব্দুর রাজ্জাক অন্যতম। তাদেরকে অনেকেই হাইব্রিড প্রমাণ করে। বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন ধরনের বিতর্কিত বক্তব্য রেখে তিনি আলোচিত সমালোচিত হয়েছিলেন। নারায়ণগঞ্জ সিটি নির্বাচনের সময় তিনি একটি বিতর্কিত বক্তব্য রেখে সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিলেন। আর এবার তিনি যে বক্তব্যটি দিলেন তা মূলত বিস্ফোরক। এর ফলে আন্তর্জাতিক মহলে আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে একটি বড় ধরনের অস্ত্র হিসাবে এটিকে ব্যবহার করার সুযোগ তৈরি হল। এই বক্তব্য ব্যবহার করে বিএনপি এখন বলতে পারে যে, সরকার বিরোধী দলের নেতাদেরকে নির্বাচনে আনার জন্য গ্রেপ্তার করেছে এবং চাপ প্রয়োগ করার মাধ্যমে সকলকে নির্বাচনে আনার চেষ্টা করছে। ড. রাজ্জাক অবশ্য আজ আবার বলেছেন যে, তিনি যে বুঝি সব বক্তব্য দিয়েছেন। এক বিন্দু মিথ্যা কথা বলেনি। এখন দেখার বিষয় আওয়ামী লীগের অবস্থানের বিরুদ্ধে যাওয়া গোপন সংস্কারপন্থি নেতার বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগ কি ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারে?




প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭