ওয়ার্ল্ড ইনসাইড

ভারত-চীন দ্বন্দ্ব কি তবে বাংলাদেশের জন্য আশির্বাদ?


প্রকাশ: 19/12/2023


Thumbnail

ভারত ও চীন তাদের সীমান্তের অমিমাংসীত এলাকাগুলো নিয়ে অনেকদিন যাবৎ সংঘাত-বিবাদে জড়িত। তাদের এ বৈরিতা এখন সীমান্ত ছাড়িয়ে রাজনৈতিক, বাণিজ্যিক, অর্থনৈতিক খাতকে প্রভাবিত করছে। এছাড়া ভারত ও চীনের বিরোধ দক্ষিণ এশিয়ার ভূ-রাজনৈতিক পরিস্থিতিকে জটিল করছে। এ জটিলতায় বাংলাদেশসহ অন্যান্য ছোট দেশগুলোর গুরুত্ব বাড়ছে। বিশেষজ্ঞদের ধারণা, ভারত-চীন দ্বন্দ শেষ হলে চাপে পড়বে এ অঞ্চলের দেশগুলো।

সম্প্রতি আন্তর্জাতিক মহলে বাংলাদেশের অর্থনীতি-রাজনীতি নিয়ে যে প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছে তা সবার নজড় কেড়েছে। এছাড়া শ্রীলঙ্কা, মালদ্বীপ, নেপাল, ভূটান বা আফগানিস্তানকে বিভিন্ন শক্তিশালী দেশ তাদের পক্ষে রাখার জন্য জোর প্রচেষ্টা চালাচ্ছে।  

ইতোমধ্যে মালদ্বীপের অবকাঠামো উন্নয়নে, শ্রীলঙ্কায় ঋণ প্রদান, আফগানিস্তানে তালেবান সরকারকে সমর্থন প্রদান বা বাংলাদেশের উন্নয়ন প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নে সহযোগিতা করছে চীন। মূলত চীন প্রচুর বিনিয়োগের মাধ্যমে ভারতের বলয় থেকে দেশগুলোকে বের করে আনতে চায়। এতে সীমান্ত এলাকায় চীন ভারতের উপর প্রভাব বিস্তার করতে পারবে সহজে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এসব সহযোগিতা ততদিন পর্যন্ত থাকবে, যতদিন চীন ও ভারতের মধ্যে সমস্যা চলমান থাকবে। 

অন্যদিকে, চীনের প্রভাব বাড়তে থাকায় যুক্তরাষ্ট্রের মতো পরাশক্তির দেশ দক্ষিণ এশিয়ার ছোট দেশগুলোর দিকেও গুরুত্ব দিচ্ছে। ইতোমধ্যেই বাংলাদেশকে কোয়াডে (সামরিক জোট) যোগদানের প্রস্তাব দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এছাড়া সামরিক শক্তি বৃদ্ধিতে যুক্তরাষ্ট্র অন্য দেশগুলোকেও বেছে নিতে পারে। এতে ওই দেশগুলোর জন্যও যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক শক্তি ব্যবহারের সুযোগ তৈরি হয়েছে। 

ভারতের সাথে বাংলাদেশের বর্তমান সরকারের সম্পর্ক চূড়ায় অবস্থান করছে। ভারত বাংলাদেশকে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক চাপ মোকাবেলা করতে অকুন্ঠ সমর্থন প্রদান করছে। মূলত, ভারতের সমর্থনেই যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক চাপ মোকাবেলা করে উন্নয়নের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। 

রাজনৈতিক গবেষকগণ মনে করেন, ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের যে কূটনৈতিক সম্পর্ক রয়েছে, মোদি সরকারের আমলে তা আরও বৃদ্ধি পেয়েছে। ভূ-রাজনীতির সঙ্গে, ব্যবসা-বাণিজ্যও সম্প্রসারিত হচ্ছে। বাংলাদেশ থেকে কিছুপণ্য আমদানি করছে ভারত। বন্ধুপ্রতীম দেশ হিসেবে মুক্তিযুদ্ধের পর থেকে বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক উচ্চপর্যায়ে। অন্যদিকে চীনের সঙ্গেও বাংলাদেশের সম্পর্ক ভালো। ব্যবসা কেন্দ্র করে এবং বাংলাদেশকে আর্থিকভাবে সহায়তায় চীন দৃষ্টান্ত। এশিয়ার ভূ-রাজনীতি নিয়ে শি জিংপিংয়ের তেমন আগ্রহ না থাকলেও বাংলাদেশে চীনা পণ্যের ব্যবসা তাকে এদিকে দৃষ্টিবন্দী করে। অর্থাৎ, এমন একটি অবস্থানে বাংলাদেশ রয়েছে যেখানে ভারত-চীন উভয়পক্ষই চায় সহাবস্থান। 

বিশ্লেষকরা বলছেন, চীনের ভয়েই নিজেদের সুবিধার বাইরে গিয়ে বাংলাদেশকে সমর্থন যুগিয়ে যাচ্ছে ভারত। বাংলাদেশের হয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সাথে সমঝোতা করছে তারা। অথচ চীনের সাথে ভারতের বোঝাপড়া সামান্য বাড়লেও বাংলাদেশের জন্য এসব সুযোগ-সুবিধা বন্ধ হবে। এমনকি দক্ষিণ এশিয়ার রাজনৈতিক পটেও অনেক পরিবর্তন আসবে বলে ধারণা। এই অবস্থায় ভারত বাংলাদেশকে সমর্থন দেওয়া বন্ধ করলে চীন সেই সুযোগ কাজে লাগাবে। আর চীনের এই সমর্থন অব্যাহত থাকবে যতদিন ভারত ও চীনের দ্বন্দ চলমান থাকবে।

বিশেষজ্ঞদের বলছেন, খুব সহজে ভারত-চীনের সমস্যা সমাধান হবে না। ফলে বাংলাদেশের মতো অন্যান্য দেশগুলো দুই দেশ থেকেই অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক সাহায্য-সহযোগিতা পাবে, যা চলছে বহুদিন। তবে এক্ষেত্রে প্রত্যেক দেশকেই সাম্যবস্থা বজায় রেখে চলতে হবে। ভারত-চীনের আর্ন্তদ্বন্দ্ব এ অঞ্চলের দুর্বল দেশগুলোর জন্য আশীর্বাদস্বরূপ।



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭