ইনসাইড পলিটিক্স

স্বতন্ত্র প্রার্থী: সারা দেশে বিভক্ত হয়ে পড়েছে আওয়ামী লীগ (ভিডিও)


প্রকাশ: 19/12/2023


Thumbnail

আনুষ্ঠানিকভাবে নির্বাচনী প্রচারণা শুরু হয়েছে গতকাল থেকে। বিভিন্ন প্রার্থীদেরকে প্রতীক বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এর মধ্য দিয়ে ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠেয় জাতীয় সংসদ নির্বাচন একটা গতি পেয়েছে। এবার নির্বাচনে প্রায় ১ হাজার ৯০০ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এর মধ্যে স্বতন্ত্র প্রার্থীর সংখ্যাই সবচেয়ে বেশি। স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন অধিকাংশই আওয়ামী লীগের বিদ্রোহীরা। যারা আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চেয়েছিলেন কিন্তু নানা কারণে মনোনয়ন বঞ্চিত হওয়ার পর স্বতন্ত্র হিসেবে দাঁড়িয়েছে। কৌশলগত কারণে আওয়ামী লীগ স্বতন্ত্র প্রার্থীদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি বরং তাদেরকে স্বাগত জানিয়েছে। 

আওয়ামী লীগ আন্তর্জাতিক ভাবে এই নির্বাচনকে অংশগ্রহণমূলক প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ দেখাতে চায়। আর একারণে স্বতন্ত্র প্রার্থীদের মাঠে রাখার কোনো বিকল্প ছিল না। জাতীয় পার্টি বা অন্যান্য যে রাজনৈতিক দলগুলো নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছে, তারা আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতা গড়ে তুলতে পারত না। ফলে নির্বাচন হতো একপেশে, আকর্ষণহীন এবং ভোটারদের উপস্থিতি থাকত কম। এরকম নির্বাচন জাতীয় এবং আন্তর্জাতিকভাবে গ্রহণযোগ্যতা সঙ্কটে ভুগতো। এই কারণেই আওয়ামী লীগ স্বতন্ত্র প্রার্থীদের ব্যাপারে উদারনীতি গ্রহণ করেছে। কিন্তু এই উদারনীতি আওয়ামী লীগের জন্য বড় ধরনের সঙ্কটের কারণ হতে পারে বলে অনেক রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক মনে করছেন। বিশেষ করে নির্বাচনের প্রচারণা শুরুতেই সারা দেশে আওয়ামী লীগ বিভক্ত হয়ে পড়েছে। আওয়ামী লীগের কোনো কোনো অংশ স্বতন্ত্র প্রার্থীদের পক্ষে প্রকাশ্য প্রচারণা চালাচ্ছে। 

যেহেতু এবার শাস্তির বালাই নেই সেজন্য আওয়ামী লীগে যারা যার পক্ষে পারছে তার পক্ষেই কাজ করছে। সারাদেশে প্রাপ্ত তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, অন্তত ২০০ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থীরা আছেন, যারা আওয়ামী লীগের বিভিন্ন স্তরের নেতা। তারা দলের মনোনীত প্রার্থীর বিরুদ্ধে এই নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এদের প্রত্যেকের নিজস্ব কর্মীবাহিনী আছে, যারা আওয়ামী লীগেরই বিভিন্ন অংশের সদস্য। আর এই সমস্ত কর্মীরা যখন আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে, তখন আওয়ামী লীগ বনাম আওয়ামী নিজের লড়াই জমে উঠেছে। 

প্রশ্ন উঠছে যে, এই যে স্বতন্ত্র প্রার্থীদের আলাদা অবস্থান এবং আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগের মুখোমুখি অবস্থান, তার দীর্ঘমেয়াদী ফল কী হবে? 

সাধারণত দেখা যায় যে, নির্বাচনে যে বিরোধ তৈরি হয় সেই বিরোধ যুগ যুগ ধরে চলে, এটি সহজে মিটে না। যে সমস্ত স্থানে আওয়ামী লীগের প্রার্থীদের বিরুদ্ধে স্বতন্ত্র প্রার্থীরা দাঁড়িয়েছেন এবং আওয়ামী লীগের কর্মীদের একটি অংশ তাদের পছন্দের প্রার্থীর পক্ষে কাজ করেছেন, সেই সমস্ত স্থানে কার্যত আওয়ামী লীগ দ্বিধাবিভক্ত হয়ে পড়েছে। আর এই দ্বিধাবিভক্তির পরবর্তীতে আওয়ামী লীগের জন্য বড় সঙ্কটের কারণ হবে। 

যদিও আওয়ামী লীগের নেতারা বলছেন যে, স্বতন্ত্র প্রার্থীদের পক্ষে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা কাজ করলেও সেটা দলের জন্য বিভক্তি হবে না, বরং দলের জন্য তা উপকারী হবে। তাদের মতে, এর ফলে আওয়ামী লীগের শক্তি আরও বাড়বে। আওয়ামী লীগ সারা দেশে আরও বেশি শক্তিশালী সংগঠন হিসেবে আত্মপ্রকাশ করবে। 

নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে প্রকাশ্য রূপ সবচেয়ে বেশি দেখা যাচ্ছে ফরিদপুর জেলায়। পুরো ফরিদপুর জেলায় স্বতন্ত্র প্রার্থীদের জয়জয়কার শোনা যাচ্ছে এবং সেখানে আওয়ামী লীগের কর্মীরা কার্যত দুই ভাগে ভাগ হয়ে পড়েছেন। এক ভাগ স্বতন্ত্র প্রার্থীদের পক্ষে কাজ করছেন, অন্য ভাগ দলীয় প্রার্থীদের পক্ষে কাজ করছেন। একই অবস্থা বিরাজ করছে অনেকগুলো জেলাতেও। এই সমস্ত বিভক্তিগুলো নির্বাচনের প্রচারণা যত গড়াবে তত সংঘাতপূর্ণ হয়ে উঠতে পারে বলে অনেকে আশঙ্কা করছেন। ফলে আওয়ামী লীগ-আওয়ামী লীগের মধ্যে সহিংসতা, খুনোখুনি ইত্যাদি সংগঠিত হতে পারে বলে কেউ কেউ শঙ্কা প্রকাশ করছেন। 

তবে আওয়ামী লীগের নেতারা মনে করছেন, তেমন কিছু হবে না। এবার নির্বাচন কমিশন কঠোর অবস্থান নিয়েছেন নির্বাচনে শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষার জন্য। সকল পক্ষ মিলে মিশে শান্তিপূর্ণভাবে ভোট উৎসব করবে। কিন্তু এই ভোট উৎসবে আওয়ামী লীগের যে বিভক্তি, সেই বিভক্তি ঠেকাবে কে?



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭