ইনসাইড পলিটিক্স

যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নীতি কি বিএনপির বিরুদ্ধে প্রয়োগ হবে?


প্রকাশ: 19/12/2023


Thumbnail

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র গত মে মাসে বাংলাদেশের ব্যাপারে নতুন ভিসা নীতি ঘোষণা করেছিল। ওই ভিসা নীতিতে বলা হয়েছিল যে, জাতীয় জাতীয় নির্বাচনে নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করতেই এই ভিসা নীতি প্রয়োগ করা হবে। যদি কোন ব্যক্তি দল, গোষ্ঠী, তিনি সরকারি কর্মকর্তা হোক, বেসরকারি কর্মকর্তা হোক, এমনকি গণমাধ্যমকর্মী হোক না কেন; যদি নির্বাচনের পথে অন্তরায় সৃষ্টি করেন, অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনে বাধা সৃষ্টি করে, তাহলে তার বিরুদ্ধে ভিসা নিষেধাজ্ঞা প্রয়োগ করা হবে। 

গত সেপ্টেম্বর মাস থেকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দফতরের পক্ষ থেকে জানানো হয় যে, এই ভিসা নীতি বাংলাদেশের কার্যকর শুরু হয়েছে। কয়েকজন ব্যক্তির ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা প্রয়োগ করার খবরও প্রকাশিত হয়। কিন্তু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের যে ভিসা নীতির লক্ষ্য এবং উদ্দেশ্য ছিল, সেই লক্ষ্য এবং উদ্দেশ্য এখন বাংলাদেশে অনেকটাই পরিত্যক্ত হয়ে গেছে।

বাংলাদেশে এখন একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের পথযাত্রা শুরু হয়েছে। ১৮ ডিসেম্বর থেকে শুরু হয়েছে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আনুষ্ঠানিক প্রচারণা। আর এই নির্বাচন এখন পর্যন্ত একটি উৎসবমুখর উৎসব মুখর পরিবেশেই অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। নির্বাচনের পথে বাধা সৃষ্টিকারী দল হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে বিএনপি। বিএনপি ইতোমধ্যে নির্বাচন প্রতিহতের ডাক দিয়েছে। তারা নিজেরাও নির্বাচন বর্জন করেছে। 

শুধু বিএনপি নয়, বিএনপির সঙ্গে আন্দোলন করা জামায়াত সহ আরও কয়েকটি রাজনৈতিক দল এই পথে হাঁটছে। তাহলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নীতি অনুযায়ী বিএনপি এবং তার সহযোগী রাজনৈতিক দলগুলো যারা নির্বাচনের বিরোধিতা করছে, তাদের ভিসা নিষেধাজ্ঞার আওতায় পড়া উচিত। কারণ মার্কিন মার্কিন ভিসা নীতিতে সুস্পষ্ট বলা হয়েছে, অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচনের পথে যারা বাধা সৃষ্টি করবে। সুস্পষ্টভাবেই বিএনপি নির্বাচনের পথে বাধা সৃষ্টি করছে। কাজেই তাদের ক্ষেত্রে কেন ভিসা নীতি প্রয়োগ করা হবে না?

অবশ্য এর কিছু ব্যাখ্যা বিভিন্ন মহল থেকে দিচ্ছেন তারা। কেউ কেউ মনে করছেন যে, বিএনপি এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থানের কোন মৌলিক পার্থক্য নেই। কারণ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বলেছে, অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন। যেহেতু এই নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক হচ্ছে না, কাজেই বিএনপির নির্বাচনে নির্বাচন বর্জনের ডাক এবং নির্বাচন প্রতিহতের ডাক ভিসা নীতির আওতায় পড়বে না। কিন্তু নিরপেক্ষ বিশ্লেষকরা মনে করছেন যে, নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক হবে কি হবে না, তা নির্ভর করছে একটি নির্বাচনে ভোটারের উপস্থিতির ওপর। যদি ৪০ শতাংশের বেশি ভোটার ভোটে উপস্থিত হয় তাহলে সে নির্বাচনকে অবশ্যই অংশগ্রহণমূলক হিসেবে বিবেচনা করতে হবে। আন্তর্জাতিক যে কোনো মানদণ্ডেই নির্বাচন একটি অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন। কিন্তু বিএনপি বা নেতৃত্বাধীন সুশীলদের অন্য রকম ব্যাখ্যা। তারা বলছেন, নির্বাচনে আওয়ামী লীগ প্রতিদ্বন্দ্বিতাহীন। তার প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছে না। এর ফলে এই নির্বাচন হচ্ছে একতরফা। এরকম নির্বাচন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র চায়নি বলেই এ দেশের অনেক সুশীল ব্যক্তি মন্তব্য করছেন। তারা সম্প্রতি নির্বাচন বাতিলের দাবিতে একটি বিবৃতিও দিয়েছেন। এর ফলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নীতি বাংলাদেশে অনেকটাই অকার্যকর হয়েছে। কারণ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যদি ভিসা নীতি আভিধানিক অর্থে প্রয়োগ করতে চায়, তাহলে ভিসা নীতি প্রয়োগ করতে হবে যারা নির্বাচনের বিরোধিতা করছে তাদের ওপর। আর যদি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এই নির্বাচনকে গ্রহণযোগ্য নয় হিসাবে চিহ্নিত করে, যারা নির্বাচন করছে তাদের ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা প্রয়োগ করে সেক্ষেত্রে হবে একটি দেশের সাংবিধানিক কার্যক্রমের উপর সুস্পষ্ট হস্তক্ষেপ। কারণ বাংলাদেশের সংবিধান অনুযায়ী আগামী ২৯ জানুয়ারির মধ্যেই নির্বাচন করতেই হবে। 

সংবিধানে কোথাও বলা নেই কোন রাজনৈতিক দল বা কতগুলো রাজনৈতিক দল অংশগ্রহণ করতে হবে বা কে কে অংশগ্রহণ করলে সেই নির্বাচন বৈধতা পাবে। কাজেই বর্তমান নির্বাচন একটি সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা। বিএনপি যদি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে তাদের দাবিদাওয়াগুলোকে উত্থাপন করতে, বিএনপি যদি নির্বাচনে গিয়ে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন তাদের বাধা দেওয়া হচ্ছে বলে দাবি করত, তাহলে হয়তো এই ভিসা নীতি সরকার বা সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে প্রয়োগ করা যেত। এখন নির্বাচনের আগেই মার্কিন ভিসা নীতি অকার্যকর হয়ে পড়েছে। 

তবে বিভিন্ন সূত্রগুলো বলছে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে এখনও পরিস্থিতির ওপর নজর রাখছে। শুধু ভিসা নীতি নয়, অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞাসহ নানা বিষয়গুলো মার্কিন কূটনীতিকদের মাথায় রয়েছে। তারা আসলে দেখতে চাচ্ছে ৭ জানুয়ারির নির্বাচন কীভাবে সম্পন্ন হয়?


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭