ইনসাইড পলিটিক্স

অসহযোগ আন্দোলন কখন হয়, কীভাবে হয়?


প্রকাশ: 20/12/2023


Thumbnail

লন্ডনে পলাতক বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক জিয়া আজ অসহযোগ আন্দোলনের ডাক দিয়েছে। এই আন্দোলনের ডাককে রাজনীতিতে এ বছরের সেরা কৌতুক হিসেবে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। তারেক জিয়ার হয়তো বাংলাদেশের রাজনীতি এবং ইতিহাস সম্পর্কে ন্যূনতম জ্ঞান নেই। যদি থাকত, তাহলে তিনি নিশ্চয়ই জানতেন অসহযোগ আন্দোলন কখন, কীভাবে দিতে হয়? এরকম একটি ম্রিয়মান অবস্থায় যখন দল ছিন্নভিন্ন প্রায়, তখন অসহযোগ আন্দোলন আদৌ একটি রাজনৈতিক বাস্তবতা কি না—সেই প্রশ্ন উঠেছে।

বাংলাদেশের ইতিহাসে অসহযোগ আন্দোলন নতুন নয়। ১৯৭০’র নির্বাচনের পর যখন পাকিস্তানি সেনাবাহিনী বঙ্গবন্ধুর কাছে ক্ষমতা হস্তান্তরে অস্বীকৃতি জানিয়েছিল, যখন সংসদের পার্লামেন্টের অধিবেশন ডাকা বারবার পিছিয়ে দিচ্ছিল, সেই মুহূর্তে জাতির পিতা অসহযোগ আন্দোলনের ডাক দিয়েছিলেন। তখন সারা দেশ ছিল উত্তাল। জনগণের একমাত্র নেতা ছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। পুরো দেশ আওয়ামী লীগ এবং বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে ঐক্যবদ্ধ হয়েছিল। ওই সময় বঙ্গবন্ধু যা নির্দেশ দিতেন সেটি পালিত হতো। বঙ্গবন্ধুর ডাকে অসহযোগ আন্দোলন অক্ষরে অক্ষরে পালিত হয়েছিল সেই সময়ে। সেই বাস্তবতার সঙ্গে এখনকার বাস্তবতা তুলনা যদি কোন বুদ্ধি বিবেক সম্পন্ন মানুষ করেন, তাহলে অসহযোগ আন্দোলন ডাকার মতো ধৃষ্টতা তিনি দেখাতে পারেন না। 

স্বাধীনতার পরও বাংলাদেশে অসহযোগ আন্দোলন হয়েছে। ১৯৯০ সালের ২৭ নভেম্বর স্বৈরাচারী এরশাদের পেটোয়া বাহিনীর হামলায় নিহত হন শহীদ ডা. মিলন। মিলনের মৃত্যুর পর সারা দেশে আন্দোলন স্ফুলিঙ্গের মতো ছড়িয়ে পড়ে, ডাক দেওয়া হয় অসহযোগ আন্দোলনের। সেই সময় সমস্ত সংবাদপত্র বন্ধ হয়ে যায়। সরকারি কর্মকর্তারা তাদের অফিস থেকে বেরিয়ে আসেন। দেশে এক উত্তাল পরিস্থিতি তৈরি হয়। জনগণ স্বৈরাচারের পতনের দাবিতে অনড় অবস্থানে চলে যান। সেরকম বাস্তবতাও এখন নেই। 

বাংলাদেশে অসহযোগ আন্দোলন আরেকটি হয়েছিল ১৯৯৬ সালে বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে। বেগম খালেদা জিয়া নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি অস্বীকার করে যখন একতরফাভাবে নির্বাচন করার উদ্যোগ নেন, তখন সারা দেশে প্রতিবাদের ঝড় উঠেছিল। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে গড়ে উঠেছিল এক উত্তাল গণআন্দোলন। সেই গণ আন্দোলনের মুখে ১৫ ফেব্রুয়ারি নির্বাচন পণ্ড হয়ে যায়। কিন্তু তারপরও বেগম খালেদা জিয়া নতুন সরকারের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ গ্রহণ করেন। জনগণ এই সরকারকে প্রত্যাখ্যান করেন এবং এবং খালেদা জিয়াকে প্রধানমন্ত্রী হিসাবে অস্বীকৃতি জানানো হয়। এই সময়ে গড়ে ওঠে ‘জনতার মঞ্চ’। খালেদা জিয়ার পতন না হওয়া পর্যন্ত মানুষ রাজপথে অবস্থান গ্রহণ করেন। সেই অসহযোগ আন্দোলনের ফলেই শেষ পর্যন্ত বেগম খালেদা জিয়া ক্ষমতা থেকে সরে যেতে বাধ্য হয়েছিলেন।

এ ধরনের তিনটি বড় ধরনের অসহযোগ আন্দোলনের ঘটনা আমাদের চোখের সামনে উঠেছে। এই ঘটনাগুলো বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, জনগণ যখন উত্তাল থাকে, ঐক্যবদ্ধ থাকে, রাজনৈতিক সঠিক নেতৃত্ব থাকে এবং রাজনৈতিক দিক নির্দেশনা থাকে, জনগণের মধ্যে সরকারের বিরুদ্ধে ক্ষোভ থাকে এবং তাদের একজন বিকল্প নেতার প্রতি আস্থা তৈরি হয়, তখনই অসহযোগ আন্দোলন করা সম্ভব হয়। কিন্তু এখনকার বাস্তবতা সম্পূর্ণ ভিন্ন। বিএনপি এখন নিজেরাই ধুকছে। বিএনপির নেতাদের বেশিরভাগই জেলে ৷ আর যারা জেলের বাইরে আছেন, তারা পলাতক। সরকারের সাথে প্রকাশ্যে এবং গোপনে নানারকম আঁতাত করে তারা বাইরে রয়েছেন৷ 

জনগণ স্বাভাবিক কর্মজীবন করতে চায়। অসহযোগ আন্দোলন তো দূরের কথা, স্বাভাবিক আন্দোলন করার মতোও পরিস্থিতি দেশে নেই। আর এরকম বাস্তব পরিস্থিতি বিবেচনা না করে রাজনৈতিক কর্মসূচি ঘোষণা এক ধরনের বিবেক বিবর্জিত নেতৃত্বেরই প্রতিফলন। তারেক জিয়া যে রাজনীতিতে এখনো অপরিপক্ক, অপরিণামদর্শী এবং অবিবেচক একজন ব্যক্তি, এই কর্মসূচি ঘোষণার মধ্য দিয়ে তিনি তা আরেকবার প্রমাণ করলেন।


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭