ইনসাইড পলিটিক্স

বিএনপির অসহযোগ আন্দোলনের কর্মসূচি: আওয়ামী লীগ অখুশি নয় (ভিডিও)


প্রকাশ: 20/12/2023


Thumbnail

আওয়ামী লীগ এখন নির্বাচন নিয়ে ব্যস্ত। সারা দেশে নির্বাচনের আমেজ তৈরি হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ সিলেটে আনুষ্ঠানিকভাবে নির্বাচনী প্রচারণা শুরু করেছেন। আগামী ৭ জানুয়ারি নির্বাচনের আগে আওয়ামী লীগ ব্যস্ত সময় কাটাবে। এই সময়ের মধ্যে বিএনপি, সুশীল সমাজ এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কে কি করে সেটি আওয়ামী লীগের জন্য একটি বড় চিন্তার বিষয় ছিল। বিশেষ করে এই নির্বাচন কতটুকু আন্তর্জাতিকভাবে গ্রহণযোগ্য হবে এবং নির্বাচনকেন্দ্রিক আন্দোলনে বিএনপির কৌশল কী হবে, এ নিয়ে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের মধ্যে এক ধরনের চিন্তা-ভাবনা ছিল। তবে যে কোন খারাপ পরিস্থিতির মধ্যেও নির্বাচনকে সফল করা এবং নির্বাচন অনুষ্ঠান সম্পন্ন করা ছিল আওয়ামী লীগের নীতিগত সিদ্ধান্ত। এ রকম অবস্থায় একদিকে যেমন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র অনেকটাই নীরবতা অবলম্বন করছে, সেজন্য সরকারের পক্ষ থেকে এক ধরনের স্বস্তি বিরাজ করছিল। কারণ, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যদি নির্বাচন পর্যন্ত বাংলাদেশের পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে, তাহলে সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতায় নির্বাচনটি করে ফেলা সম্ভব হবে। আর এজন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিষয়টি নিয়ে এই মুহূর্তে আওয়ামী লীগ অতটা চিন্তিত নেই। কারণ, তারা মনে করে যে, শেষ পর্যন্ত যদি নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক হয়, সুষ্ঠু হয়, সেক্ষেত্রে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের সাথে সম্পর্ক এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে কোন রকম দ্বিধা করবে না।

দ্বিতীয় যে বিষয়টি ছিল, সুশীল সমাজের ভূমিকা। আওয়ামী লীগের নেতারা খুব ভালোমতোই জানেন, সুশীল সমাজের ভূমিকা পুরোপুরিভাবে নির্ভর করছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মনোভাবের ওপর। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যেহেতু নীরবতা অবলম্বন করছে, সে কারণেই সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরাও এক ধরনের দিগ্ভ্রান্ত অবস্থায় রয়েছেন। যদিও তারা নির্বাচন বাতিল বা এই নির্বাচন গ্রহণযোগ্য হবে না ইত্যাদি নানা রকম বক্তব্য দিচ্ছে। কিন্তু এ ধরনের বক্তব্য খুব একটা হালে পানি পায়নি। 

আওয়ামী লীগের তৃতীয় উদ্বেগের বিষয় ছিল বিএনপি কী করে তা। বিএনপি যে কোনো বিচারে বাংলাদেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক দল। এই দলটির বিপুল কর্মী সমর্থক রয়েছেন। তারা আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছে না। তাদের অংশগ্রহণ ছাড়া এই নির্বাচন কতটা গ্রহণযোগ্য হয়, সেটি যেমন আওয়ামী লীগের দেখার বিষয় ছিল, তার চেয়েও বড় বিষয় ছিল যে এই নির্বাচনকে ঘিরে বিএনপি কী ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করে। কিন্তু, আজ বিএনপি শেষ ট্রাম্পকার্ডটি খেলল। বিএনপি আজ নির্দলীয়, নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে অসহযোগ আন্দোলন শুরু করেছে। 

একটি দেশে অসহযোগ আন্দোলন করার মতো যে রাজনৈতিক বাস্তবতা দরকার, সেই রাজনৈতিক বাস্তবতা বিচার বিবেচনা না করেই বিএনপির এ কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। অর্থাৎ এর মধ্য দিয়ে বিএনপি আর হরতাল বা অবরোধের কর্মসূচি দেবে না, যেটি নির্বাচনের আগে এক ধরনের আতঙ্ক বা অস্বস্তি তৈরি করতে পারত। 

দুইদিন আগেই ট্রেনের নাশকতা ঘটানোর পর জনমনে আতঙ্ক তৈরি হয়েছিল। আওয়ামী লীগের অনেক নেতা বলছিলেন, যদি বিএনপি হরতাল, অবরোধ করে; বিশেষ করে নির্বাচনের সময়ে যদি এ ধরনের কর্মসূচিগুলো করতে থাকে সেক্ষেত্রে একধরনের সমস্যা হবে ভোটার উপস্থিতি নিয়ে। কিন্তু যখন অসহযোগ আন্দোলনের মতো চূড়ান্ত কর্মসূচি বিএনপি নির্বাচনের প্রায় তিন সপ্তাহ আগে করে ফেলল, তখন সরকারের জন্য বিষয়টি অনেকটা স্বস্তির। কারণ, এই আন্দোলন এমনিতেই মুখ থুবড়ে পড়ে যাবে৷ তাছাড়া এ ধরনের অসহযোগ আন্দোলনের কর্মসূচি নেতাকর্মীদেরও হতাশ করবে। তারাও হাত-পা গুটিয়ে বসে থাকবে। ফলে বিএনপি একটি রাজনৈতিক শক্তি সঠিক প্রয়োগে ব্যর্থতার কারণে নিজেরাই পর্যুদস্ত হবে। 

এই অসহযোগ কর্মসূচি বিএনপিকে আরও বিপদে ফেলবে বলেই মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। তাছাড়া বিএনপির এই কর্মসূচির ফলে আন্তর্জাতিকভাবেও প্রমাণিত হলো যে, বিএনপি আসলে নির্বাচন করতে চায়নি। বরং, তাদের প্রধান লক্ষ্য ছিল একটি নির্বাচিত সরকারকে যে কোন মূল্যে হটানো। আর এটি আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে আওয়ামী লীগের জন্য প্রচার করা সহজ হবে। আর তাই বিএনপির অসহযোগ আন্দোলনের কর্মসূচিতে আওয়ামী লীগ খুশি এবং বেশ সন্তুষ্ট।



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭