ইনসাইড পলিটিক্স

ভারত কেন বিএনপিকে চায় না?


প্রকাশ: 24/12/2023


Thumbnail

বিএনপির নীতিনির্ধারকরা মনে করেন তাদের আন্দোলন ব্যর্থ হওয়ার প্রধান কারণ হলো ভারত। বিএনপি যে সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলনে সফল হতে পারছেন না, এর প্রধান কারণ হল ভারতের ভূমিকা। ভারত বিএনপির উপর অসন্তুষ্ট। আর এ কারণেই রাজনীতিতে বিএনপি কোনও রকম ইতিবাচক ভূমিকা পালন করতে পারছে না, সরকারকে বেকায়দায় ফেলতে পারছে না।

গত দুই বছর ধরে বিএনপির নির্দলীয়, নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে আন্দোলন করছে। বিএনপির এই আন্দোলনের অনেকগুলো ইতিবাচক দিক ছিল বলে বিএনপি নেতারা মনে করেন। তাদের মতে, এই আন্দোলনের ফলে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় সরকারের বিরুদ্ধে একটি অবস্থান গ্রহণ করেছিল এবং নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য চাপও সৃষ্টি করেছিল। কিন্তু, ভারতের ভূমিকার কারণে শেষ পর্যন্ত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলো তাদের অবস্থান ধরে রাখতে পারেনি।

ভারত বিএনপিকে বিশ্বাস করে না, বিএনপিকে আস্থায় নিতে পারে না। আর একারণেই তারা বাংলাদেশে আওয়ামী লীগের কোনো বিকল্প এখন ভাবছে না ৷ আর এই জন্যই তারা আগামী নির্বাচন নিয়ে তাদের অবস্থানে অনড় থেকেছে এবং, এই অবস্থানের পক্ষে তারা আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে দূতওয়ালী করেছে। 

কূটনৈতিক অঙ্গনে প্রশ্ন উঠেছে যে, কেন ভারত বিএনপিকে পছন্দ করে না? বিএনপির প্রতি কেন তাদের আস্থা নেই? 

কূটনৈতিক সূত্রগুলো বলছে যে, ২০০১ সালে বিএনপি এবং জামায়াত ক্ষমতায় আসার পর থেকে যে কাণ্ডগুলো করেছিল, সেই কাণ্ডের কারণে ভারত বিএনপির প্রতি আস্থা হারিয়ে ফেলেছে এবং এই আস্থাহীনতার সঙ্কট এখন তীব্র। 

ভারত মনে করে যে, বিএনপির সঙ্গে পাকিস্তানি গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই এর সম্পর্ক রয়েছে। বিএনপি ক্ষমতায় এলে জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাসবাদের লালন করে এবং ভারতীয় বিচ্ছিন্নতাবাদীদেরকে মদদ দেওয়া হয় আইএস এর পরিকল্পনা অনুযায়ী। আর যার প্রমাণ হলো, ২০০১ থেকে ২০০৬ সালে ভারতীয় বিচ্ছিন্নতাবাদীদের তৎপরতা, চট্টগ্রামে দশ ট্রাক অস্ত্র আটকের ঘটনা ইত্যাদি। এসব ঘটনাবলি প্রমাণ করে যে, বিএনপি বিশেষত কার্যত ভারতের অখণ্ডতার বিরুদ্ধে কাজ করে।

ভারতের পররাষ্ট্র নীতির মূল বিষয় হল যে, ভারতের স্বার্থের পরিপন্থী কোনও রাজনৈতিক সংগঠন যদি কাজ করে, তারা যে দেশেই অবস্থান করুক না কেন তাদেরকে ভারতের আস্থায় নেই এবং তাদেরকে ভারত কোনওভাবেই সমর্থন করে না। আর এ কারণেই ভারতের সাথে বিএনপির প্রধান বৈরিতা। ভারত বাংলাদেশে চায় একটি অসাম্প্রদায়িক চেতনার বিকাশ, একটি গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের সম্প্রসারণ যেখানে সকল দল মত এবং ধর্মাবলম্বীরা স্বাধীনভাবে তাদের মত প্রকাশ করতে পারে। কিন্তু বিএনপির সঙ্গে জামায়াতের এক ধরনের গোপন এবং প্রকাশ্য সম্পর্ক রয়েছে, যে সম্পর্কের সূত্র ধরে বিএনপিও জামায়াতের মতো মৌলবাদী চিন্তাভাবনাকে ধারণ করে এবং সাম্প্রদায়িক ধারায় বাংলাদেশকে এগিয়ে নিতে চায়। এটি ভারতের স্বার্থের পরিপন্থী।

প্রসঙ্গত, ২০১৮ নির্বাচনের আগে ভারতের থিঙ্কট্যাঙ্কের সঙ্গে বিএনপির কয়েকজন নেতা সাক্ষাৎ করেছিল এবং সেখানে ভারত বিএনপিকে কিছু সুনির্দিষ্ট সুপারিশ করেছিল। তার মধ্যে একটি ছিল যে, তারেকের নেতৃত্ব যেন না থাকে ৷ দ্বিতীয়ত, ভারত চেয়েছিল জামায়াতের সঙ্গে আনুষ্ঠানিকভাবে সম্পর্ক ত্যাগ করা। তৃতীয়ত, ভারতের প্রত্যাশা ছিল যে, বিএনপিতে যে সমস্ত সাম্প্রদায়িক এবং পাকিস্তানপন্থী ব্যক্তিরা রয়েছেন তাদেরকে দল থেকে আস্তে আস্তে সরিয়ে দেওয়া। চতুর্থত, ভারতের বিএনপির প্রতি প্রত্যাশা ছিল যে, তারা যেন কোনওভাবেই সাম্প্রদায়িক রাজনীতিকে মদদ না দেয়। কিন্তু মুখে মুখে বললেও বিএনপি পরবর্তী কোনও সময়েই এগুলো বাস্তবায়ন করেনি। যে কারণে ভারত বিএনপিকে আস্থায় নিতে পারে না, বিশ্বাস করতে পারে না। 

বিএনপি নেতারাও স্বীকার করেন যে, ভারতের কারণেই বিএনপি বারবার ব্যর্থ হচ্ছে এবং ভারতের কারণেই আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় টিকে আছে।



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭