ইনসাইড পলিটিক্স

শঙ্কা জাগিয়ে স্বস্তির বিদায়


প্রকাশ: 26/12/2023


Thumbnail

২০২৩ শুরুটাই হয়েছিল শঙ্কা দিয়ে। এই শঙ্কার শুরু আরও কিছুদিন আগে। সেটা ছিল ২০২২ সালের বহুল আলোচিত ১০ ডিসেম্বর। যদিও শেষ পর্যন্ত বিএনপি আন্দোলনের মাঠে তেমন সুবিধা করতে পারেনি। তবে ২০২৩ সালের শুরু থেকেই চোখ রাঙানি দিচ্ছিল বেশ কৌশলে। জানুয়ারি মাস থেকেই সরকারের পতনের আন্দোলনে সরব হয়ে ওঠে বিএনপি। কেন্দ্র থেকে তৃণমূল পর্যন্ত দলের সাংগঠনিক সক্ষমতা নিয়ে চলে নানান পরীক্ষা-নিরীক্ষা। বারবার আলোচনায় উঠে এসেছিল এক দফা দাবি। বিএনপির আন্দোলনের লক্ষ্যবিন্দুতে পরিণত হয় বর্তমান সরকারের পদত্যাগ, সংসদ বিলুপ্তি এবং নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন। 

বিএনপির এই এক দফা আন্দোলনের পালে হাওয়া দেয় মার্কিন ভিসা নীতি। গত ২৪ মে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন বাংলাদেশের নির্বাচন ঘিরে নতুন ভিসা নীতি ঘোষণা করেন। বছরের শেষার্ধে নির্বাচন নিয়ে মার্কিন ভিসা নীতি রাজনীতিতে এত গুমোটভাব এনে দিয়েছে। এতে বিরোধী শিবিরে খুশি নামলেও আওয়ামী লীগ ছিল বেশ চাপে। বিশেষ করে যাদের স্ত্রী-সন্তান বিদেশে সেসব নেতা ও কর্মকর্তা পড়েছেন বিপাকে। দুশ্চিন্তায় নানা মহলে যোগাযোগ করতেও দেখা গেছে অনেককে।

মার্কিন এই ভিসা নীতি দেশের রাজনীতিতে একটা উত্তাপ এনে দেয়। রাজনীতিতে শুরু হয় পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি। বিভাগীয় কর্মসূচি শেষ করে আগস্ট থেকে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে রাজধানীতে জোরেশোরে নামে বিএনপি। সেপ্টেম্বর হয়ে অক্টোবর পর্যন্ত মাঠে চলে এই কর্মসূচি। নানা শঙ্কার মধ্যেও আওয়ামী লীগ পাল্টা কর্মসূচি নিয়ে মাঠে ছিল। দুই দলের পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি বেশ ভীতির পরিবেশ তৈরি করলেও শান্ত ছিল মাঠ। রাজপথে ভোগান্তিতে ছিল জনসাধারণ।

এরই মধ্যে শুরু হয় ২৮ অক্টোবর ঘিরে উত্তাপ। ২৮ অক্টোবর ঘিরে কর্মসূচি দিয়ে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের পথ প্রশস্ত করেছে রাজনৈতিক দলগুলো। নানাজনের শঙ্কাকে সত্য প্রমাণিত করে ২৮ অক্টোবর ২০০৬ এর মতোই প্রকাশ্যে মানুষ হত্যায় মেতে উঠেছে। সেদিনকার রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে সাংবাদিক, পুলিশসহ কয়েকজন নিহত হয়। আহত হয় পুলিশ ও সাংবাদিকসহ অসংখ্য নেতাকর্মী। এর মধ্য দিয়ে সমঝোতার পথ পুরোপুরি বন্ধ হয়ে একমুখী রাজনীতির পথ তৈরি হয়। সে থেকে বিএনপিবিহীন মাঠে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ।

বিএনপিবিহীন মাঠে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ দাপুটে থাকলেও শেষ পর্যন্ত নির্বাচন নিয়ে ছিল এক ধরনের অনিশ্চিয়তা। নির্বাচন হবে কিনা, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকা কি হবে ইত্যাদি নিয়ে এক অনিশ্চিয়তা ছিল জনসাধারণের মধ্যে। বিশেষ করে এ সময় নতুন করে মার্কিন নিষেধাজ্ঞার শঙ্কা করেছিলেন সুশীল সমাজসহ বিএনপি এবং তাদের সমমনা রাজনৈতিক মিত্র। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তেমন কিছুই হয়নি। মার্কিন নিষেধাজ্ঞাও আসেনি নির্বাচন কমিশন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করে। তবে তখনও মার্কিন ভীতি ছিল সরকার এবং ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের। কারণ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র প্রতিবছর ১০ ডিসেম্বর আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবসে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মানবাধিকার চিত্র নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করে এবং নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে থাকে। তবে শেষ পর্যন্ত স্তস্তিই দিয়েছে মার্কিন মানবাধিকার প্রতিবেদন। নতুন করে নিষেধাজ্ঞার খড়গ আসেনি।

নিষেধাজ্ঞার শঙ্কা কাটতে না কাটতেই আলোচনায় আসে জাতীয় পার্টির নির্বাচন থেকে সরে যাওয়ার। তবে নানা জল্পনা কল্পনার অবসান ঘটিয়ে প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ দিন গত ১৭ ডিসেম্বর শেষ বিকেলে আসন্ন জাতীয় নির্বাচনে অংশগ্রহণের ঘোষণা দেয় জাতীয় পার্টি। আর সবশেষ দুশ্চিন্তাটাও শেষ হয় আওয়ামী লীগের। কারণ শেষ মুহুর্তে জাতীয় পার্টি নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ালে আন্তর্জাতিক মহলে এই নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন উঠার একটা বড় স্পেস তৈরি হত। তবে শেষ পর্যন্ত কোনো আশঙ্কাই আর হালে পানি পায়নি। যদিও বছরের শেষ প্রান্তে এসে বিএনপি অসহযোগ আন্দোলনের ডাক দিয়েছে। অসহযোগ আন্দোলন সমর্থনে প্রথম দফা কর্মসূচি এরই মধ্যে শেষও হয়েছে। তবে সাধারণ মানুষসহ খোদ বিএনপির মধ্যেই সেই অসহযোগ আন্দোলন কোনো রকম রেখাপাত সৃষ্টি করতে পারেনি। নির্বাচন প্রচারণার হাওয়া অনেকটা বিলীন হয়ে যাচ্ছে বিএনপির কর্মসূচি। মাঝে মাঝে হরতাল অবরোধের কর্মসূচি দিলেও সড়কে থামছে যানবাহনের দাপট এবং মানুষের কর্ম চঞ্চলের ব্যস্ততা। আর কোনো ধরনের আশঙ্কার কথাও বলতে পারছেন না রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭