ইনসাইড আর্টিকেল

বট পাকুড়ের ৫০০ বছরের সংসার

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: 30/03/2018


Thumbnail

ঢাকা জেলার ধামরাই উপজেলার যাদবপুর ইউনিয়নের সাইট্রা গ্রামে দেবী দাস বংশের পূর্ব পুরুষ তাদের ভিটের উপর রোপন করেছিলেন একটি বট ও একটি পাকুড় গাছ। স্থানীয় অনেকে বলেন এই গাছ দুটির বয়স প্রায় ৫০০ বছর। তবে এই গাছ দুটির বয়স নিয়ে মতভেদ আছে।

সনাতন ধর্ম অনুসারে পাকুড় গাছকে পুরুষ আর বট গাছকে নারী বলে মনে করা হয়। সেই বিশ্বাস অনুযায়ী দাস বংশের পূর্ব পুরুষরা শাখা সিধুর পড়িয়ে ঢাক-ঢোল ও বাদ্যযন্ত্র বাজিয়ে বট ও পাকুড় গাছের বিয়ে দেন। সে সময় বিয়ে উপলক্ষে বহু লোকের আপ্যায়ন করা হয়েছিল। তখন থেকেই স্থানীয় লোকজন পাশাপাশি এই দুই বট পাকুড় গাছকে স্বামী-স্ত্রী বলে মনে করেন।

প্রায় ৫ বিঘা জমি জুড়ে ছড়িয়ে আছে বট পাকুড়ের সংসার। গাছের ডালপালা কোনটি উপরের দিকে উঠে গেছে আবার কোনো কোনো ডাল মাটিতে গিয়ে মিশেছে। চারিদিকে অসংখ্য গাছের মুল আর কান্ড ছড়িয়ে রয়েছে। দেখে এখন আর বোঝার উপায় নেই মুল গাছ কোনটি।   

একবার এই গাছের নিচ দিয়ে ইট ভর্তি একটি ট্রাক যাবার সময় গাছের ডালের সঙ্গে আটকে যায়। ট্রাক-চালক বটগাছের ডাল কাটলে তিনি অসুস্থ পয়ে পড়েন। পরে মুরুব্বিদের পরামর্শে এই গাছের নিচে কয়েক কেজি বাতাসা আর মোমবাতি দিয়ে ক্ষমা প্রার্থনা করলে ট্রাক-চালক সুস্থ হন।

কার্তিক সরকার নামে এক কৃষকের জমিতে গাছের ডালপালা ছড়িয়ে পড়লে তিনি তা কেটে দেন। ওই কৃষকও অসুস্থ হয়ে পড়েন। দীর্ঘদিন অসুস্থ থাকার পর ওই বটগাছের নিচে একটি মন্দির নির্মাণ করে সেখানে পূজা অর্চনা করলে সুস্থ হন। কয়েক বছর আগে গ্রামের কানু মিয়া নামে এক ব্যক্তি এ গাছের ডাল কাটার পর অসুস্থ হয়ে মারা যান।

সাইট্রা গ্রামের এই বট-পাকুড় গাছ নিয়ে এমন অনেক অলৌলিক ঘটনা লোক মুখে শোনা যায়।  একারণে ভয়ে এলাকার কেউ ওই গাছের ডাল-পালা বা শেকড় কাটে না। ফলে গাছ দুটি অসংখ্য শিকড় বাকড় ডাল পালা ছড়িয়ে আপন মহিমায় দাড়িয়ে আছে।

এখানকার হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষ বিশ্বাস করেন এই গাছ দুটি তাদের দেবতা। বটগাছের নিচে কালী মন্দির নির্মাণ করে সেখানে কালী, সরস্বতী পূজা এবং দশমী ও বাসন্তী মেলাসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠান করে থাকে। মুসলিম সম্প্রদায়ের লোকজনও এই গাছ দুটিকে সন্মানের চোখে দেখেন।  অসুখ-বিসুখে এখানে মানত করেন সকল ধর্মের লোক। মানত করে সুস্থতা পেয়েছেন মনে করে আস্থা রাখার ঘটনাও রয়েছে প্রচুর।

স্থানীয় লোকজন বলেন রাতের আঁধারে গাছ দুটির ডালপালায় কয়েকশ শিশু নাচগান করে। যার কারণে রাতে এই গাছের পাশ দিয়ে লোকজন তেমন চলাচল করে না।

অনিন্দ্যসুন্দর এই বট ও পাকুড় গাছ ঘিরে দর্শনার্থীদের কৌতুহলের শেষ নেই। বিভিন্ন উৎসব ও দিবসে দেশের নানা প্রান্ত থেকে দর্শনার্থীরা ছুটে আসেন এই বট-পাকুড় গাছের ছায়া তলে।

 

ঢাকার গুলিস্তান থেকে ডি-লিংক, বিআরটিসি ও শুভযাত্রা বাসে করে ধামরাই ঢুলিভিটা নামতে হবে। তারপর সিএনজি বা অটো রিক্সা করে যাদবপুরের ইউনিয়নের সাইট্রা গ্রামে গেলেই দেখা যাবে সুশীতল ছায়ার বট-পাকুড় গাছ।

বাংলা ইনসাইডার/জেডএ



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭