এডিটর’স মাইন্ড

নির্বাচনে যে পাঁচটি ঘটনা ঘটলে ভারত কিছু করতে পারবে না


প্রকাশ: 29/12/2023


Thumbnail

অনেক কূটনীতিক বিশ্লেষক মনে করেন, বাংলাদেশের যে আগামী ৭ জানুয়ারি জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে, এটার পিছনে ভারতের অনেক অবদান রয়েছে। ভারত যদি বাংলাদেশকে সমর্থন না দিত তাহলে ৭ জানুয়ারি এভাবে নির্বাচন করতে বর্তমান সরকার নাও পারতে পারত। কারণ এই ধরনের নির্বাচনের বিরুদ্ধে ছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলো। কিন্তু ভারত বিগত ছয় মাস ধরে নিরন্তর প্রকাশ্য এবং গোপন কূটনীতির মাধ্যমে পশ্চিমা দেশগুলোকে কিছুটা শান্ত করতে সক্ষম হয়েছে।

ভারত বাংলাদেশের বিষয়ে তাদের অবস্থান স্পষ্ট করেছে পশ্চিমা দেশগুলোর কাছে। এই বিষয়ে ভারতের বক্তব্য ছিল যে, বাংলাদেশের নির্বাচন তাদের একান্তই অভ্যন্তরীণ বিষয়। দ্বিতীয়ত, এই নির্বাচনে একটি রাজনৈতিক দল অংশগ্রহণ করা না করার সাথে নির্বাচন  অংশগ্রহণমূলক হল কিনা তা নির্ভর করে না। বরং একটি নির্বাচনে কী পরিমাণ ভোটার উপস্থিতি থাকবে সেটির ওপরই নির্ভর করে নির্বাচন কতটুকু জনপ্রতিনিধিত্বশীল হয়েছে।

ভারত বাংলাদেশের ব্যাপারে তাদের অবস্থান সুস্পষ্ট করেছে কোন রাখঢাক ছাড়াই। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলোকে ভারত সাফ জানিয়ে দিয়েছে, বাংলাদেশে তারা রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা চায়। ক্ষমতার ধারাবাহিকতা চায়। ক্ষমতার পরিবর্তন হলে বাংলাদেশে উগ্র মৌলবাদ, জঙ্গিবাদের উত্থান ঘটতে পারে এবং এই দলগুলো যদি ক্ষমতায় আসে তাহলে আঞ্চলিক শান্তি নিরাপত্তা বিঘ্নিত হবে। বিশেষ করে ভারতে ঝিমিয়ে পড়া বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠীগুলো আবার নতুন করে সন্ত্রাস এবং সহিংসতার সুযোগ পাবে। এরকম একটি সুযোগ ভারত দিতে চায় না। আর একারণেই ভারত গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা এবং রাজনৈতিক স্থিতিশীলতাকে গুরুত্ব দিচ্ছে। আর ভারতের যেহেতু বিশ্বে একটি বড় ধরনের প্রভাব রয়েছে সে কারণেই ভারতের হস্তক্ষেপ এবং ভূমিকার কারণেই বাংলাদেশ নিয়ে এখন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলো অনেকটাই নীরবতা পালন করছে। 

তবে আগামী ৭ জানুয়ারি নির্বাচনের ওপর নির্ভর করছে অনেক কিছুই। যদি শেষ পর্যন্ত ৭ জানুয়ারি নির্বাচনে কতগুলো ঘটনা ঘটে তাহলে ভারত কিছুই করতে পারবে না। ভারতের কূটনৈতিক তৎপরতা এবং উদ্যোগগুলো ব্যর্থতায় পর্যবসিত হবে। তখন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমা দেশগুলো তাদের মতো করে অবস্থান গ্রহণ করবে। 

যে পাঁচটি ঘটনা ঘটলে ভারতের কিছু করার থাকবে না তার মধ্যে রয়েছে;

১. নির্বাচনে যদি অনাকাঙ্ক্ষিত কারচুপির ঘটনা ঘটে: এই নির্বাচনের সবচেয়ে বড় দেখার বিষয় হল নির্বাচন কতটা অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হচ্ছে। ভোটের দিন জনগণ কতটুকু অবাধে ভোট দিতে পারছে। রাতের বেলা ভোট হচ্ছে কি না বা ভোটের আগে ফলাফল নির্ধারিত হচ্ছে কি না। এ ব্যাপারে ভারত পশ্চিমা দেশগুলোকে আশ্বস্ত করেছে যে বাংলাদেশে কোন ভাবেই কারচুপি নির্বাচন হতে দেওয়া হবে না। সেই ধরনের নির্বাচন হলে ভারতও তা বরদাস্ত করবে না। বাংলাদেশকেও ভারত তার বার্তা জানিয়ে দিয়েছে যে, নির্বাচনে কোন অবস্থাতেই কাজ শুরু করা যাবে না। কাজেই যদি শেষ পর্যন্ত নির্বাচনে অতি উৎসাহীরা কারচুপি করে তাহলে ভারতের কিছু করার থাকবে না। এই নির্বাচন গ্রহণযোগ্যতার সঙ্কটে পড়বে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে। 

২. ভোটার উপস্থিতি কম: যদি নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি কম থাকে অর্থাৎ ১৫ শতাংশ আ ২০ শতাংশ ভোটার উপস্থিতি হয় তাহলে পরে এই নির্বাচন আন্তর্জাতিকভাবে গ্রহণযোগ্যতা পাবে না। ভারতও তখন বাংলাদেশকে খুব একটা সহায়তা করতে পারবে না। সেক্ষেত্রে হয়তো আবার নতুন করে নির্বাচনের জন্য আন্তর্জাতিক অঙ্গনে দেন দরবার বা কূটনৈতিক তৎপরতা চালাতে হবে বাংলাদেশকে।

৩. সহিংসতা বা গোলযোগ: যদি নির্বাচনে ব্যাপক সহিংসতা বা গোলযোগ ঘটনা ঘটে বিশেষ করে নির্বাচনে যদি ভোটকেন্দ্রগুলোতে ভোটাররা যেতে না পারে বা সন্ত্রাস সহিংসতার ঘটনা ব্যাপক বিস্তার লাভ করে, সেক্ষেত্রে ভারতের কোন কিছুই করার থাকবে না। কারণ সেক্ষেত্রে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাবে।

৪. নির্বাচনের ফলাফল: নির্বাচনে যদি টেবিল মেইট ফলাফল অর্থাৎ ঘরে বসে ফলাফল বানিয়ে তা ঘোষণা করে দেওয়া হয় এবং সেটি যদি ফাঁস হয়ে যায় তাহলে এই নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতা সঙ্কটে পড়বে। সেখানে ভারতের কিছু করার থাকবে না।

৫. অনভিপ্রেত কিছু ঘটনা: সব কিছুর বাইরে যদি অনভিপ্রেত কিছু ঘটনা ঘটে যায় সেক্ষেত্রেও ভারতের কিছু করণীয় থাকবে না। আর এই ঘটনাগুলো ছাড়া যদি নির্বাচন সুষ্ঠু, অবাধ এবং ভোটার উপস্থিতি উৎসাহব্যঞ্জক হয় তাহলে এই নির্বাচন আন্তর্জাতিক অঙ্গনে গ্রহণযোগ্যতা পাবে।


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭