ইনসাইডার এক্সক্লুসিভ

৩০ ডিসেম্বর, ২০১৮: সেদিন কী হয়েছিল


প্রকাশ: 30/12/2023


Thumbnail

২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচন ছিল বাংলাদেশের রাজনীতির ইতিহাসে অন্যতম আলোচিত বিতর্কিত সমালোচিত ঘটনা। কিন্তু আজ পর্যন্ত কেউ স্পষ্ট করে বলতে পারেননি সেই নির্বাচনে আসলে কী হয়েছিল। কেউ একটি রাতের ভোটের উদাহরণ সরজমিনে দেখাতে পারেননি। কিন্তু বিভিন্ন মহলে বারবার আলোচনা হচ্ছে যে ৩০ ডিসেম্বর আসলে কোন ভোট হয়নি। ২৯ ডিসেম্বর রাতেই সব ভোট দেওয়া হয়েছে। আর এরকম প্রচারণার মধ্য দিয়েই ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বরের ভোটের দিনকে রাতের ভোট হিসাবে বিবেচনা করা হয় এবং বিভিন্ন ভাবে সমালোচনা করা হয়। 

আওয়ামী লীগের অনেক নেতারাও ইদানিং বলেন যে, ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচন সব কিছু ঠিকঠাক মতো হয়নি। আওয়ামী লীগের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির কো চেয়ারম্যান কাজী জাফরউল্লাহ বলেছেন, কিছু অনিয়ম তো হয়েছে, না হলে এই কথাগুলো আসবে কেন? আসলে কী হয়েছিল? বাস্তবতা কী ছিল? ৩০ ডিসেম্বর সকল রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণে নির্বাচন অনুষ্ঠানের যে একটি ঐতিহাসিক মুহূর্তে বাংলাদেশ দাঁড়িয়ে ছিল, সেই মুহূর্তটিকে কেন প্রশ্নবিদ্ধ করা হল। 

বাংলাদেশের ইতিহাসে সংসদীয় গণতন্ত্র চালুর পর ২০১৮ নির্বাচনই প্রথম নির্বাচন যেখানে ১৯৭৩ এর ২০১৮ নির্বাচনই প্রথম নির্বাচন যেখানে দলীয় সরকারের অধীনে সকল রাজনৈতিক দল অংশগ্রহণ করেছিল। এই নির্বাচন এমন একটি প্রেক্ষাপটে অনুষ্ঠিত হয়েছিল যেখানে আওয়ামী লীগের হারার কোনো সম্ভাবনা ছিল না। প্রধান বিরোধী দল বিএনপি অংশগ্রহণ করলেও তারা তাদের অস্তিত্ব রক্ষার জন্য নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করেছিল এবং তারাও জানত যে এই নির্বাচনের মাধ্যমে তারা ক্ষমতায় আসবে না। তাহলে কী হয়েছিল? 

এই প্রসঙ্গে বাংলা ইনসাইডার দীর্ঘদিন ধরে অনুসন্ধান করেছে, গবেষণা করেছে এবং এই অনুসন্ধানের প্রেক্ষিতে বহু লোকের সঙ্গে কথা বলা হয়েছে এবং এই সমস্ত কথা বলার প্রেক্ষিতে দেখা গেছে যে, কিছু কিছু জায়গায় অনিয়মের ঘটনা ঘটেছে বা অনিয়মের চেষ্টা করা হয়েছে। উদাহরণ হিসেবে বলা যেতে পারে জামালপুর-৩ আসনের কথা। সেখানে আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য মির্জা আজম। ২৯ ডিসেম্বর রাতের বেলা তার কাছে একজন স্থানীয় পুলিশ কর্মকর্তা ফোন করেন। ফোন করে তাকে বলেন যে, ভোটের ব্যবস্থা হয়ে গেছে। রাতেই সবগুলো কেন্দ্রে তার জন্য একটা নির্দিষ্ট সংখ্যক ভোট প্রদান করা হবে। মির্জা আজম একজন জনপ্রিয় নেতা। তিনি তার আগে পাঁচবার এমপি নির্বাচিত হয়েছিলেন। তিনি এ ধরনের প্রস্তাবে হতবাক হয়ে যান। তিনি ঊর্ধ্বতন একজন পুলিশ কর্মকর্তাকে ফোন করেন এবং তাকে এধরনের কোন রকম অনভিপ্রেত ঘটনা ঘটানো থেকে বিরত থাকার জন্য কঠোর হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন। ফলে ওই আসনে আর কোনো অনিয়ম বা অন্য কোনো ঘটনা ঘটেনি। ২৯ তারিখে সেখানে কোন ভোট গ্রহণের ঘটনাই ঘটেনি। ৩০ ডিসেম্বর লোকজন শান্তিপূর্ণভাবে সেখানে ভোট দিয়েছেন এবং স্বাভাবিক ফলাফল হয়েছে। দেশের অধিকাংশ স্থানে এ ধরনের ঘটনা ঘটেছে। তবে কিছু কিছু স্থানে অতি উৎসাহীরা জামালপুরের ঘটনার মত ঘটনা ঘটিয়েছে। এর বেশ কিছু তথ্য প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে এখন। তবে কেউই সঠিক ভাবে বলতে পারেনি কার নির্দেশে বা কারা এটি করেছে। 

বাংলা ইনসাইডারের অনুসন্ধানে দেখা যাচ্ছে যে, আমলাদের একটি অংশ, পুলিস প্রশাসনের একটি অংশ এবং কয়েকজন অতি উৎসাহী রাজনীতিবিদরা ডিসেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহে ঢাকার অফিসার্স ক্লাবে একটি বৈঠকে মিলিত হন। সেই বৈঠকে আলোচনা করা হয় যে ভোটে একটি নীরব বিপ্লব হতে পারে। বিএনপির পক্ষে একটা নীরব বিপ্লব হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে এবং এ রকম ঘটনা ঘটলে তা হবে লজ্জাজনক। ১৯৯১ সালের নির্বাচনের মতো যেন ঘটনা না ঘটে সেজন্য সরকারি কর্মকর্তাদের মধ্যে আলাপ আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়। 

বিজয় দিবস উপলক্ষে অফিসার্স ক্লাবে এক আলোচনা অনুষ্ঠানে পরবর্তীতে ঊর্ধ্বতন আমলারা এই বৈঠকে মিলিত হন বলে বাংলা ইনসাইডারের হাতে নিশ্চিত তথ্য রয়েছে। এই বৈঠকের পরপরই আমলারা সিদ্ধান্ত নেন যে, কিছু কিছু আসনে ইলেকশন ইঞ্জিনিয়ারিং করা হবে এবং কিছু সুনির্দিষ্ট আসনে আগে থেকেই কিছু ভোট প্রদান করে জয় নিশ্চিত করা হবে। কিন্তু এই সিদ্ধান্তটা ছিল কয়েকটি আসনের ক্ষেত্রে। পরবর্তীতে এটি সারা বাংলাদেশে সব জায়গায় নির্দেশনা আকারে চলে যায়। পরবর্তীতে দেখা যায় যে, কেউ কারও কোন কথা শুনছেন না। ৩০০ আসনে এরকম জয়ী হওয়ার ক্ষেত্রে কিছু অতি উৎসাহী সরকারি কর্মকর্তা ভূমিকা রাখেন। 

তবে বিভিন্ন কেন্দ্রে ভোটের হিসাব পর্যালোচনা করে দেখা গেছে যে, ১৬৭টি কেন্দ্রে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হয়েছে, যেখানে কোন রকম কারচুপি হয়নি। যেভাবে জিতে ছিলেন জামালপুরের মির্জা আজম। ঠিক সেভাবে ১৬৭ আসনে সত্যিকারের ভোট হয়েছে। বাকি আসনগুলোর ভোটের ক্ষেত্রে নানা রকম অনিয়ম হয়েছে। আর এই অনিয়ম যারা করেছেন তারা সকলেই সরকারের বিভিন্ন স্তরের কর্মকর্তা। রাজনৈতিক শক্তিকে অন্ধকারে রেখে, রাজনৈতিক শক্তিকে বোকা বানিয়ে ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর এই ঘটনা ঘটিয়েছিল মুষ্টিমেয় একটি গোষ্ঠী। সেই গোষ্ঠী আসলে আওয়ামী লীগের শুভাকাঙ্ক্ষী ছিল কিনা সেই প্রশ্ন অনেকের মধ্যে।



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭