ইনসাইড বাংলাদেশ

নির্বাচন নিয়ে পশ্চিমাদের পাঁচ প্রশ্ন


প্রকাশ: 31/12/2023


Thumbnail

আগামী ৭ জানুয়ারি নির্বাচনের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হল আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি। এই নির্বাচন পশ্চিমা দেশগুলোর কাছে বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং যুক্তরাজ্যের কাছে গ্রহণযোগ্য হবে কি না সেটাই এই নির্বাচনের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। জয় পরাজয় নয়। তবে নির্বাচন নিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলো এখন পর্যন্ত কোন রকম আনুষ্ঠানিক মন্তব্য করেনি। তারা পুরো পরিস্থিতির ওপর নজর রাখছে। বিভিন্ন মহলের সঙ্গে কথা বলছে। ৭ জানুয়ারি ভোট কীভাবে হয় তার ওপর নির্ভর করছে এই নির্বাচনের স্বীকৃতির অনেক কিছু। তবে নির্বাচনের আগে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল এবং গোষ্ঠীর সঙ্গে পশ্চিমা দেশের কূটনীতিকরা আনুষ্ঠানিক অনানুষ্ঠানিক ভাবে আলাপ আলোচনা করছেন। নির্বাচনের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে জানার চেষ্টা করছেন। খুঁটিনাটি প্রসঙ্গে খোঁজখবর নিচ্ছেন। আর এই সমস্ত খোঁজ খবর নেওয়ার ক্ষেত্রে পশ্চিমাদের কাছে পাঁচটি প্রশ্ন বড় আকারে এসেছে এবং এই প্রশ্নগুলো সরকারের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি, বিরোধী দলের নেতা, নির্বাচন কমিশনসহ বিভিন্ন মহলকে কাজ করা হচ্ছে। আর এই প্রশ্নগুলোর উত্তরের ওপরই নির্ভর করবে আগামী ৭ জানুয়ারি নির্বাচনের পর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলো নির্বাচনের ব্যাপারে কী মনোভাব গ্রহণ করবে।

যে পাঁচটি প্রশ্ন নিয়ে পশ্চিমাদেরকে তৎপর দেখা যাচ্ছে। তার মধ্যে রয়েছে;

১. বিরোধী দল কে: মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলোর প্রধান প্রশ্ন হল এবার নির্বাচনে বিরোধী পক্ষ কে। সাধারণত নির্বাচনে একটি পক্ষ এবং প্রতিপক্ষ থাকে। এবার নির্বাচনে প্রতিপক্ষ কে-এই প্রশ্ন উঠেছে বিভিন্ন পশ্চিমা দেশের পক্ষ থেকে। ইউরোপিয় ইউনিয়ন ইতোমধ্যেই জানতে চেয়েছে, এবার নির্বাচনে বিরোধী পক্ষ কে? টেকনিক্যালি জাতীয় পার্টির এবার নির্বাচনে প্রধান প্রতিপক্ষ। কিন্তু যেহেতু জাতীয় পার্টির সঙ্গে আওয়ামী লীগ ২৬ টি আসনে আসন সমঝোতা করেছে, কাজেই জাতীয় পার্টিকে এখন আর আনুষ্ঠানিকভাবে বিরোধী দল বলা যাবে কি না সেই প্রশ্ন উঠেছে। তাছাড়া এবার নির্বাচনে প্রচুর স্বতন্ত্র প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তাদের গোষ্ঠীবদ্ধ পরিচয় থাকবে কি না, সে বিষয়টিও পশ্চিমা দেশগুলো জানতে চায়। 

২. বিএনপি কেন এলো না: এই নির্বাচন নিয়ে পশ্চিমাদের একটি বড় প্রশ্ন হল বিএনপি কেন নির্বাচনে এলো না? বিএনপি নেতাদের কাছেও এই বিষয় নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়েছে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন, যুক্তরাষ্ট্র, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন দেশ বিএনপির কাছে জানতে চেয়েছে যে, তারা কেন নির্বাচনে এলো না? বিএনপির পক্ষ থেকে অবশ্য বলা হচ্ছে, এমন একটি পরিস্থিতি তৈরি করা হয়েছিল যে পরিস্থিতিতে বিএনপির পক্ষে নির্বাচনে যাওয়া সম্ভব ছিল না। বিএনপি যেন নির্বাচনে না যায় সেটি ছিল সরকারের পরিকল্পনা এবং সেই পরিকল্পনা সরকার বাস্তবায়ন করেছে। তবে সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে যে, বিএনপি নির্বাচনে আসেনি তাদের নেতৃত্বের সঙ্কটের কারণে। কারণ তাদের কোন নেতা নেই। নির্বাচনে জয়ী হলে তাদের কে প্রধানমন্ত্রী হবে এটি যেমন অমিমাংসিত তেমনি নির্বাচনে তারা প্রার্থী বাছাই এবং অন্যান্য বিষয়গুলো কীভাবে করবে তা নিয়েও তাদের মধ্যে মতবিরোধ ছিল। এ কারণে তারা নির্বাচনে আসেনি। পশ্চিমা দেশগুলো দু পক্ষের বক্তব্য শুনেছে। কিন্তু তাদের নিজস্ব মতামত অর্থাৎ বিএনপিকে নির্বাচনে আসেনি এ সম্পর্কে তাদের ভাবনা তারা এখন পর্যন্ত বলেনি। 

৩. সংলাপ-সমঝোতা কেন হল না, দায় কার?: পশ্চিমা দেশগুলোর কাছে সবচেয়ে বড় প্রশ্ন নির্বাচনের আগে যে সংলাপের দরকার ছিল, যে সংলাপের উদ্যোগ গ্রহণের জন্য পশ্চিমা দেশগুলো আহ্বান জানিয়েছিল, সেই সংলাপটি হল না কেন? সংলাপ না হওয়ার দায় কার? যথারীতি এ ব্যাপারেও আওয়ামী লীগ-বিএনপি উভয় উভয়কে দোষারোপ করার চেষ্টা করছে। তবে বিএনপি যে শর্তহীন সংলাপে রাজি ছিল না প্রথমে এই বক্তব্যটি বিভিন্ন গণমাধ্যমে ভালোমতোই এসেছে। 

৪. ভোটাররা কি পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিতে পারবে?: এবারের নির্বাচনে একটি বড় প্রশ্ন হিসেবে পশ্চিমাদের পক্ষ থেকে এসেছে তা হল নির্বাচনে কি পর্যাপ্ত পছন্দের প্রার্থী আছে? পছন্দের বিকল্প প্রার্থী কি নির্বাচনে দাঁড়িয়েছেন? নির্বাচন কমিশনের কাছেও এই প্রশ্ন তুলেছিল পশ্চিমা দেশগুলো। অবশ্য নির্বাচন কমিশন মনে যে, জনগণের কারা পছন্দের কারা পছন্দের নয় সে বিষয়টি তাদের দেখার বিষয় নয়। এটি ভোটের দিন জনগণ যাকে পছন্দ করবেন তাকেই ভোট দেবেন।

৫. ভোটের পর সমঝোতা: যে প্রশ্নটি নিয়ে এখন কূটনীতিকরা বিভিন্ন জায়গায় কথাবার্তা বলছেন তা হলো ভোটের পর কি সমঝোতা সম্ভব? সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে এই নির্বাচন একটি সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা। আর সে কারণেই সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতার বিরুদ্ধে কেউই অবস্থান গ্রহণ করছেন না। কিন্তু কয়েক দেশ বিশেষ করে ইউরোপীয় ইউনিয়ন ইতোমধ্যে জানতে চেয়েছে যে, ভোটের পর কোনো ধরনের সমঝোতা হওয়ার সুযোগ আছে কি না বা ভোটের পর রাজনৈতিক মতভেদ দূর করার কোনো উদ্যোগ সরকার নেবে কিনা। সরকার অবশ্য বলেছে যে, তারা এখন নির্বাচন নিয়ে ব্যস্ত। নির্বাচনের পরে নতুন একটি সরকার নির্বাচিত হবে তারা এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে।


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭