ওয়ার্ল্ড ইনসাইড

কে ঘটালো ইরানে ভয়াবহ এই বোমা বিস্ফোরণ?


প্রকাশ: 04/01/2024


Thumbnail

ইরানের ইসলামিক বিপ্লবী গার্ডের চৌকস ইউনিট কুদস ফোর্সের সাবেক কমান্ডার কাসেম সোলাইমানির চতুর্থ মৃত্যুবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে ভয়াবহ জোড়া বোমা বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। কাশেম সোলাইমানির কবরের কাছে সংঘটিত ওই বিস্ফোরণের ঘটনায় শতাধিক মানুষের প্রাণহানি ঘটেছে। প্রথমে এই বোমা হামলা আত্মঘাতী বলা হলেও পরবর্তীতে স্যুটকেসের ভেতর বোমা রেখে দূর থেকে রিমোট কন্ট্রোলের সাহায্যে বিস্ফোরণ ঘটানোর কথা শোনা যায়। কিন্তু এই ঘটনায় কারা জড়িত সে বিষয়ে এখন পর্যন্ত পরিষ্কারভাবে কোনও তথ্য জানায়নি ইরান। তবে এই ভয়াবহ বোমা হামলা এমন সময়েই ঘটলো যখন গাজায় চলমান হামাস-ইসরায়েল যুদ্ধে ইসরায়েলি আগ্রাসন থামবার কোনো নাম নেই। আর ইরানে প্রাণঘাতী এই হামলায় ইসরায়েলের হাত থাকবার আশঙ্কা বিদ্যমান আছে বলেই ধারণা করা হচ্ছে।

গাজায় যুদ্ধের নামে ইসরায়েলিদের বর্বর হামলার শুরু থেকেই গোটা মধ্যপ্রাচ্য এ যুদ্ধের বিরোধিতার পাশাপাশি নানাভাবে হামাসকে সাহায্য করেছে। তবে গত ৭ই অক্টোবর যখন প্রথমবারের মত হামাস ইসরায়েলি সীমানায় ঢুকে অভূতপূর্ব এক হামলা চালায়। বলা হয়, ওই হামলায় ইরানের সম্পৃক্ততার ব্যাপকতা ছিল সবচেয়ে বেশি। হামাসের যোদ্ধাদের ওই হামলায় নিহত হন ১ হাজার ২০০ জন ইসরায়েলি ও অন্যান্য দেশের নাগরিক। পাশাপাশি ইসরায়েলের ভূখণ্ড থেকে ২৪২ ইসরায়েলি ও অন্যান্য দেশের নাগরিককে সেদিন জিম্মি হিসেবে ধরে নিয়ে যায় হামাস যোদ্ধারা।

হামাস যোদ্ধাদের ওই হামলার পরিকল্পনায় ইরানের সরাসরি সম্পৃক্ততার কথা তারা অস্বীকার করলেও, সশস্ত্র সাহায্য যে তারা করেছিল সে প্রমাণ অবশ্য মিলেছিল।

এদিকে ইরানে এই ভয়ংকর বোমা হামলার পেছনে মূল হোতা কারা, এমন প্রশ্নে তেহরান বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যপ্রাচ্য অধ্যয়ন বিভাগের অধ্যাপক হাসান আহমেদিয়ান কাতার-ভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আলজাজিরাকে বলেন, ‘‘প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি অবশ্যই এই হামলা যারা চালিয়েছে, তাদের বিরুদ্ধে প্রতিশোধ নেওয়ার কথা বলবেন। কিন্তু এখন প্রশ্ন হলো, কারা এটা করেছে?

তিনি বলেন, ‘‘অতীতে জঙ্গিগোষ্ঠী ইসলামিক স্টেট (আইএস) বিশালসংখ্যক বেসামরিক মানুষকে হত্যার ইচ্ছা দেখিয়েছে। ইসরায়েল হয়তো ইরানের বিরুদ্ধে উত্তেজনা বাড়াতে চায়, যাতে তেহরান এমন কিছু করতে বাধ্য হয়, যা ইরানের বিরুদ্ধে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে (সংঘাতে) টেনে আনবে।

তবে তিনি এও বলেন যে এগুলো সবই সম্ভাবনা।


মধ্যপ্রাচ্যে যে কোনো সময়েই যুদ্ধ:

এদিকে গত মঙ্গলবার (২ জানুয়ারি) ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী গোষ্ঠী হামাসের রাজনৈতিক শাখার উপপ্রধান সালেহ আল অরৌরি ইসরায়েলি ড্রোন হামলায় নিহত হন। তার এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় ইসরায়েলকে সন্দেহাতীতভাবে শাস্তি পেতে হবে বলে হুমকিও দিয়েছিল লেবাননের ইরান-সমর্থিত শক্তিশালী সশস্ত্র গোষ্ঠী হিজবুল্লাহ। মঙ্গলবার হিজবুল্লাহর এক বিবৃতিতে অরৌরি হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় প্রতিশোধ নেওয়ার এই হুমকি দেওয়া হয়।

এই প্রসঙ্গে, আলজাজিরার জ্যেষ্ঠ রাজনৈতিক বিশ্লেষক মারওয়ান বিশারা বলেছেন, কয়েক দিনের আঞ্চলিক উত্তেজনা বৃদ্ধির পর মধ্যপ্রাচ্যে এখন ‘‘যুদ্ধের কালো মেঘ’’ জড়ো হচ্ছে।

তিনি বলেন, ‘‘এই অঞ্চলে এখন যে কোনও কিছু ঘটতে পারে। এখানে অনেক বেশি হিংস্রতা, উত্তেজনা, অনেক দ্বন্দ্ব চলমান রয়েছে। লোহিত সাগর থেকে শুরু করে ইরান-ইরাকের সীমান্ত, ইয়েমেন উপসাগর পর্যন্ত অর্থাৎ এই অঞ্চলের সর্বত্রই এখন আরও উত্তেজনা তৈরি হতে পারে।’’

বলাই বাহুল্য, লোহিত সাগরে হুতি বিদ্রোহীরা একের পর এক মার্কিনি বা ইসরায়েলিদের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বাণিজ্যিক জাহাজে হামলা করে বেশ উত্তেজনা জমিয়ে রেখেছে সেখানে।

আর এমনি করেই ইসরায়েলি ড্রোন হামলায় তার মৃত্যুর পর হামাস-ইসরায়েলের চলমান যুদ্ধ ওই অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়ার ঝুঁকি তৈরি হয়েছে।

তবে যুদ্ধের আশঙ্কার জেরে প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে উল্টো ইসরায়েলই কি প্রথম ঝোপ বুঝে কোপ মেরে ইরানে এই ব্যাপক প্রাণঘাতির বোমা হামলা চালালো কিনা সেটিই এখন দেখার বিষয়।



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭