ইনসাইড বাংলাদেশ

ট্রেনে আগুন: মানুষ হত্যা করেও থামছে না দুর্বৃত্তরা


প্রকাশ: 06/01/2024


Thumbnail

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঠেকাতে বিএনপিসহ বেশ কয়েকটি বিরোধীদল এক দফা আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে। গত বছরের ২৮ অক্টোবরের পর থেকে অবরোধ-হরতালের মতো কর্মসূচি দিচ্ছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) এবং সমমনা দলগুলো। এরপর থেকে দেশজুড়ে শুরু হয়েছে সহিংসতা-অগ্নিসংযোগের মতো কর্মকাণ্ড। মূলত, নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর থেকে আসন্ন ৭ জানুয়ারির নির্বাচন ঠেকানোর লক্ষ্যে বেড়েছে অগ্নিসংযোগের ঘটনা। ট্রেনের আগুনে পুড়ে প্রাণহানিও ঘটছে।

আজ শনিবার (৬ জানুয়ারি) রাজধানীতে আবার ট্রেনে আগুন দিয়েছে দুর্বৃত্তরা। এতে চারজনের প্রাণহানি ঘটেছে, পেট্রোলবোমাসহ আটক করা হয়েছে তিনজনকে। এর আগেও রাজধানীর তেজগাও এলাকায় ট্রেনে আগুন দেওয়া হয়। সেখানেও মৃত্যু ঘটনা ঘটে। এছাড়াও দেশের বিভিন্নস্থানে রেললাইন কেটে নাশকতা সৃষ্টি করেছে দুর্বৃত্তরা। তাদের থামানো যাচ্ছে না কোনভাবেই। 

৫ জানুয়ারি গোপীবাগে ট্রেনে আগুন:

রাজধানীর গোপীবাগ এলাকায় ভারত থেকে আসা বেনাপোল এক্সপ্রেস ট্রেনে দুর্বৃত্তদের দেওয়া আগুনে পুড়ে ৪ জন নিহত হয়েছেন। ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স কন্ট্রোল রুমের ডিউটি অফিসার ফরহাদুজ্জামান গণমাধ্যমকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। এ ঘটনায় বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন। তাদের রাজধানীর বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এর আগে, শুক্রবার (৫ জানুয়ারি) রাত ৯টার দিকে এই আগুনের ঘটনা ঘটে। আগুন নিয়ন্ত্রণে ফায়ার সার্ভিসের ৮টি ইউনিট কাজ করেছে।

২০ ডিসেম্বর হঠাৎ ট্রেনে আগুন:

রাজধানী ঢাকার ক্যান্টনমেন্ট এলাকায় ব্রহ্মপুত্র এক্সপ্রেস ট্রেনে আগুনের ঘটনা ঘটেছে। বুধবার (২০ ডিসেম্বর) সন্ধ্যা ৬টা ৪৫ মিনিটে এ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। জানা যায়, ট্রেনের ইঞ্জিনের সাইলেন্সার পাইপের উপরে একটি পুরাতন চটের বস্তা ছিল। ট্রেন চলার এক পর্যায়ে সাইলেন্সার পাইপের ধোঁয়া বের হতে বাধাগ্রস্ত হয়। এ সময় হঠাৎ করে ওই চটের বস্তায় আগুন ধরে যায়। বিষয়টি তাৎক্ষণিক টের পেয়ে রেলওয়ে পুলিশ ক্যান্টনমেন্ট স্টেশনে ট্রেনটি দাঁড় করিয়ে আগুনে নেভায়। পরবর্তীতে ট্রেনটি পুনরায় গন্তব্যে ছেড়ে যায়।

১৯ ডিসেম্বর তেজগাঁওয়ে ট্রেনে আগুন:

রাজধানীর তেজগাঁওয়ে গত বছরের ১৯ ডিসেম্বর মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেস ট্রেনে আগুন দেয় দুর্বৃত্তরা। বগিতে আগুনের ঘটনায় চারজনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। সকাল ৭টার দিকে চার জনের মরদেহ ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে নিয়ে যায় রেলওয়ে থানা পুলিশ।

১৫ ডিসেম্বর জয়পুরহাটে ট্রেনে আগুন:

জয়পুরহাট রেলস্টেশনে পার্বতীপুরগামী উত্তরা এক্সপ্রেস ট্রেনে ১৫ ডিসেম্বর রাতে আগুন দেয় দুর্বৃত্তরা। ওইদিন রাত ১২টার দিকে জয়পুরহাটে রেলস্টেশনে ট্রেনটিতে হঠাৎ আগুন জ্বলতে দেখে যাত্রীরা আতঙ্কিত হয়ে পড়েন। ট্রেনের যাত্রী ও স্থানীয় ফায়ার সার্ভিসের কর্মীদের চেষ্টায় দ্রুত আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে। এতে একটি বগির চারটি সিট পুড়ে গেছে। এতে কোনো হতাহতের খবর আসেনি।

১৩ ডিসেম্বর গাজীপুরে ট্রেন দুর্ঘটনা:

গত ১৩ ডিসেম্বর ভোরে গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার প্রহল্লাদপুর ইউনিয়নের বনখড়িয়ার চিলাই ব্রিজ সংলগ্ন এলাকায় ঢাকাগামী মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেসের ইঞ্জিনসহ সাতটি বগি লাইনচ্যুত হয়। দুর্বৃত্তরা রেললাইন কেটে ফেলায় এ দুর্ঘটনা ঘটে। ওই দুর্ঘটনায় এক যাত্রী নিহত এবং ট্রেনের লোকোমাস্টার ও সহকারী লোকোমাস্টারসহ বেশ কয়েকজন যাত্রী আহত হন।

এদিকে, রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলেছেন, বিএনপি-জামায়াতের হরতাল-অবরোধের মতো কর্মকাণ্ডের কারণেই সহিংস হয়ে উঠেছে গোটা দেশ। ট্রেনে আগুন দিয়ে তারা থেমে নেই। রাজধানীসহ স্থানে স্থানে যাত্রীবাহী বাসে আগুন, চলন্ত ট্রাক এমনকি মোটরসাইকেলেও আগুন দেওয়া হচ্ছে। 

অন্যদিকে, পুলিশ প্রশাসনও এসব অগ্নিকান্ডের জন্য অবরোধ-হরতালের ডাক দেওয়া দলগুলোকেই দোষারোপ করেছে। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) অতিরিক্ত কমিশনার মহিদ উদ্দিন গতকাল গণমাধ্যমকে বলেছেন, তিনটি বগি কমবেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এখন বলা যাবে না, কী কারণে হয়েছে। এ অগ্নিকাণ্ড যে, নাশকতা সেটি স্পষ্ট। বোঝাই যাচ্ছে পরিকল্পিতভাবে এ নাশকতা করা হয়েছে। সাধারণ যাত্রীদের প্রতি এ ধরনের সহিংসতা ও আগুনে পুড়িয়ে মারা মেনে নেয়া যায় না।

গত ১৯ ডিসেম্বর ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার হাবিবুর রহমান বলেছেন, ‘আমি মনে করি যারা অবরোধ-হরতাল দিচ্ছে তারাই এই নাশকতা করেছে। এর আগেও তারা এভাবে ট্রেনে নাশকতা করেছে।’



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭