আগামীকাল বহুল আলোচিত প্রতীক্ষিত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। এই নির্বাচন নিয়ে বাংলাদেশের জনগণের যেমন আগ্রহ তার চেয়ে বেশি আগ্রহ পশ্চিমা বিশ্বের। পশ্চিমা বিশ্ব এই নির্বাচন মনিটরিং করছে, এই নির্বাচন কতটুকু অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হচ্ছে তা নিয়ে সতর্ক নজরদারি রাখছে। এই নির্বাচন কীভাবে হয় তার ওপর নির্ভর করছে অনেক কিছু। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলো নির্বাচনের পরে বাংলাদেশের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিতে পারে এমন শঙ্কার কথা শোনা যাচ্ছে। এই শঙ্কার কথা উড়িয়ে দেননি ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগও। নিষেধাজ্ঞার শঙ্কা মাথায় রেখেই নির্বাচনের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করছে আওয়ামী লীগ।
আওয়ামী লীগের মতে, এটি একটি সাংবিধানিক ধারাবাহিকতা। অনির্বাচিত এবং অসাংবিধানিক ধারাকে রুখতে এর কোনো বিকল্প নেই। তবে এই নির্বাচন যদি শেষ পর্যন্ত অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হয়, ভোটারদের উপস্থিতিও সন্তোষজনক হয় তাহলে নির্বাচন নিয়ে কোন নিষেধাজ্ঞার শঙ্কা নেই এমনটাই মনে করছেন কূটনৈতিক বিশ্লেষকরা।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলো দেখতে চাচ্ছে বাংলাদেশের নির্বাচন কীভাবে হচ্ছে এবং কতটুকু সুষ্ঠু হচ্ছে। আর শেষ পর্যন্ত যদি সুষ্ঠু নির্বাচন করা যায় তাহলে বাংলাদেশে নিষেধাজ্ঞার কোন ভয় নেই বলে মনে করছেন কূটনৈতিক বিশ্লেষকরা। তবে যে কয়েকটি ঘটনা ঘটলে বাংলাদেশ নিষেধাজ্ঞার আওতায় আসতে পারে তা তার মধ্যে রয়েছে;
১. যদি নির্বাচনে যথেচ্ছ কারচুপি এবং ভোট জালিয়াতি হয়: এই নির্বাচনে যদি কোন প্রার্থী জয়ী হওয়ার জন্য যথেচ্ছ কারচুপি, ভোট জালিয়াতি করে তাহলে সেক্ষেত্রে এই নির্বাচন গ্রহণযোগ্যতা পাবে না। এই নির্বাচনে যারা এই ধরনের কারচুপি এবং জালিয়াতির সঙ্গে যুক্ত থাকবেন তাদের বিরুদ্ধে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নিষেধাজ্ঞা দিতে পারে। ইতোমধ্যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের ব্যাপারে ভিসা নীতি ঘোষণা করেছে। গত বছর ঘোষিত এই ভিসা নীতিতে বলা হয়েছে যে, অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের পথে যারা বাধা সৃষ্টি করবে তাদের ওপর ভিসা নীতি প্রয়োগ করা হবে। সেক্ষেত্রে এ ধরনের কারচুপির ঘটনা ঘটলে ভিসা নীতির আওতায় আসতে পারে বলে ভোট বিশ্লেষকরা মনে করেন।
২. প্রশাসনের হস্তক্ষেপ এবং কোন প্রার্থীকে জিতিয়ে দেওয়ার চেষ্টা: প্রশাসন যদি নির্বাচনে হস্তক্ষেপ করে, কোনো বিশেষ প্রার্থীকে জিতিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে, একটি সাজানো ফলাফল নির্বাচনের মাঠে বাস্তবায়নের চেষ্টা করে সেক্ষেত্রে নির্বাচন গ্রহণযোগ্যতা সঙ্কটে পড়বে এবং এ ধরনের নির্বাচন শেষ পর্যন্ত আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি বিশেষ করে পশ্চিমা বিশ্বের স্বীকৃতি পাবে না।
৩. আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এবং প্রার্থীদের মধ্যে সহিংসতার ঘটনা ঘটে এবং জোরপূর্বক কেন্দ্র দখলের ঘটনা ঘটে: এই নির্বাচনে যদি আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটে, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে প্রতিপক্ষের প্রার্থীর বলপ্রয়োগ এবং সহিংসতার ঘটনা ঘটে এবং এর ফলে জনমতের প্রতিফলন ঘটা ব্যাহত হয় বা নির্বাচনে পক্ষপাতপূর্ণ হয় সেক্ষেত্রে এই নির্বাচন আন্তর্জাতিক গ্রহণযোগ্যতার সঙ্কট সংকটে পড়তে পারে। এই ধরনের নির্বাচনকে আন্তর্জাতিক মহল বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা বিশ্ব স্বীকৃতি নাও দিতে পারে।
৪. নির্বাচন কমিশনের প্রশ্নবিদ্ধ ভূমিকা: নির্বাচন কমিশন যদি নির্বাচনে বিতর্কিত সিদ্ধান্ত নেয়, যেকোনো পক্ষপাত এবং অনিয়ম, স্বেচ্ছাচারিতা ইত্যাদিকে মুখ বুজে হজম করে, শেষ পর্যন্ত কোনরকম প্রতিবাদ না করে একটি যেনতেন প্রকারে নির্বাচন আয়োজনের চেষ্টা করে সেক্ষেত্রে এই নির্বাচন গ্রহণযোগ্যতা সঙ্কটে পড়বে। আন্তর্জাতিক মহল এই ধরনের নির্বাচনকে স্বীকৃতি দেবে না।
৫. ভোটার উপস্থিতি কম থাকা: যদি নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি উল্লেখযোগ্য হারে না হয়, ভোটার উপস্থিতি যদি ১০ শতাংশ বা তার নিচে হয় সেক্ষেত্রে এই নির্বাচন গ্রহণযোগ্যতার সঙ্কটে পড়তে পারে। এই কয়েকটি ঘটনা এড়িয়ে যদি শেষ পর্যন্ত একটি উৎসবমুখর অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন করা যায়, তাহলে এই নির্বাচন আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পাবে বলে মনে করছেন কূটনীতিক বিশ্লেষক।