ইনসাইড বাংলাদেশ

‘গণতান্ত্রিক দেশে যেভাবে নির্বাচন হওয়া উচিত সেভাবেই হয়েছে’


প্রকাশ: 08/01/2024


Thumbnail

গতকাল এ দেশে সাধারণ নির্বাচন হয়েছে এবং অত্যন্ত সুস্থ নির্বাচন বলতে যা বোঝায়, সম্পূর্ণ স্বচ্ছ নির্বাচন বলতে যা বোঝায়, সেটিই হয়েছে। মানুষ, বিশেষ করে প্রমাণ ছাড়া হলেও লোকের ভিতরে একটা পার্সেপশন কিন্তু গ্রো করেছিল, এটা অস্বীকার করার উপায় নেই ২০১৪ এবং ১৮ সালের নির্বাচন সম্পর্কে যে, এই নির্বাচন সঠিকভাবে হয়নি। এখন আমি এটা নিয়ে এনালাইসিস করতে চাই না, এটা লোকের পারসেপশন। আর এবারের পারসেপশন হচ্ছে দেশ এবং বিদেশে যে, সবচেয়ে স্বচ্ছ নির্বাচন হয়েছে। একটি গণতান্ত্রিক দেশে যেভাবে নির্বাচন হওয়া উচিত সেভাবেই হয়েছে। 

নির্বাচনে বিএনপি একটি শক্তিশালী বিরোধী দল এটা সত্য। তাদের নেতৃত্ব নাই কিন্তু বগি আছে। মানে ইঞ্জিনের অভাব আর কি, সেটা আলাদা বিষয়। কিন্তু অনেক সময় দুর্বল ইঞ্জিন নিয়েও কিন্তু গাড়ি চলতে পারে। যাই হোক দুর্ভাগ্যবশত তাদের রাজনৈতিক দর্শনের অভাব আছে। এইখানেই হল দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনার সাথে মূল পার্থক্য দেশের এবং বিদেশের বহু রাজনীতিবিদদের। 

তিনি একজন দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক। তার প্রত্যেকটি কাজে একটি দর্শন থাকে যে, আপনারা লক্ষ্য করে থাকবেন নির্বাচনের আগে পরের সব সময় তাদের মিডিয়ায় দেখেছেন। মনে হয় যেন, তার ভিতরের সামান্য কোনও চিন্তা নেই। সবকিছু যদি সত্যিই চলতে কারণ কি? কারণ হচ্ছে, তিনি দার্শনিক একটি দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে করেন। তাতে কী রেজাল্ট হবে, সেটি নিয়ে তার কোনও কনসার্নই না। জনগণ চাইলে তিনি নিজে ক্ষমতায় আসবে, না হলে চলে যাবেন এবং টুঙ্গিপাড়ায় যাবেন জায়গাও ঠিক করেছেন। সুতরাং, তার চিন্তার কোনও কারণই নেই। এইভাবেই তিনি করেন এবং আগামী নির্বাচন আল্লাহর রহমতে তিনিই করবেন এবং একইভাবে করবেন। এটা বলা যায়, পার্থক্য এই যে আগামীবার যাদেরকে তিনি লায়াবিলিটি হিসেবে টেনে নিয়ে বেড়ান, এবারও কিছু কিছু টানতে হয়েছে, এগুলো থাকবে না, ঝেরে ফেলে দেবেন। 

আমি ছয় মাসেরও আগে বাংলা ইনসাইডারে একটা আর্টিকেলে লিখেছিলাম যে, এবার জাতীয় পার্টির তৃতীয় হবে। তখন অনেকে পরে হাসাহাসি করেছিল। কিন্তু, প্রমাণ হয়ে গেল জাতীয় পার্টি নিয়ে আমি যেটা বলেছিলাম সেটিই। এবং, কয়েকদিন আগে গল্পে গল্পে আমি বলছিলাম যে, ৬ থেকে ৮টি আসন বোধ হয় জাতীয় পার্টি পাবে। তো দেখা গেল ১১ টি সিট পেয়েছে। এটা হচ্ছে, লোকে বলে ইনটিউশন। একটা জিনিস বুঝতে হবে যে, ইনটিনশনটা কিন্তু শূন্যের উপরে হয় না। এক্সপিরিয়েন্স লাগে এবং বিভিন্ন জিনিস অ্যানালাইসিসের উপরে। সুতরাং, একটা জিনিস বললাম এটা হয়ে যাবে, এটা হয় না। যেমন অনেক আওয়ামী লীগের দুর্বল ক্যান্ডিডেটদের জায়গায় দার্শনিক শেখ হাসিনার মিটিং করতে গেলেন। আমি শুধু বললাম যে, পপুলারিটি তো যেহেতু ট্রান্সফারেবল না সুতরাং মুশকিল হচ্ছে যে, দেশের অধিকাংশ লোকজন চায় যে, জননেত্রী শেখ হাসিনাই আবার দেশ চালাক। কিন্তু কাদের দিয়ে দেশ চালাবেন সেটা ওনার বিষয়। আর যেহেতু এবার যারা ইন্ডিপেন্ডেন্ট দাঁড়াচ্ছেন তারা এবং আওয়ামী লীগের নৌকা সব যেহেতু তাদের আদর্শের দিকে এক। সুতরাং, জনগণের কাছে এইখানে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বলবেন আমার এই ক্যান্ডিডেটকে আপনারা সমর্থন করলে আমি হব, তাতে কিন্তু সেই ক্যান্ডিডেটকেই তারা সমর্থন করবে এটার নিশ্চয়তা নেই৷ কেননা তার বিরুদ্ধে যে সেও তো নেত্রীর আদর্শে বিশ্বাস করে। সেও তো পারলে নেত্রীর ফোটো দেয়, সেও তো পারলে নৌকাটা দেয়। নৌকা না পারলে তো অন্য কিছু দিয়েছে। সুতরাং, আমি বললাম যে যেখানেই যাচ্ছেন আমার মনে হয় না তাতে তাদের পপুলারিটির পরিবর্তন হবে। তাই-ই হয়েছে। তারা অধিকাংশই নির্বাচনে জিততে পারেননি। এখন এটা কী বোঝায়? এটা বোঝায়, দার্শনিক নায়ক শেখ হাসিনা কারও ব্যক্তিগত দায় দায়িত্ব নিতে রাজি নয়। বারবার তিনি বলেছেন যে, জনগণের ম্যান্ডেট নিয়ে আসতে হবে। হ্যাঁ, তিনি দলীয় প্রধান হিসেবে অনেক দুর্বল প্রার্থী, যে রকম এক মায়ের ভিতরে বিশেষ করে থাকে, যে ছেলে-মেয়েটি দুর্বল হয় বা পঙ্গু বা কোনো কিছু, তার প্রতি মায়ের একটু মায়া বেশি থাকে। ওনার সেই মায়া ছিল। কিন্তু, তাতে তো নির্বাচনের ফলাফল পরিবর্তন হয় না। 

নির্বাচনে এবার তিনি দেখিয়ে দিলেন যে, এই গণতন্ত্রের মানসকন্যা তাকে নাম দেওয়া হয়েছিল। তিনি এদেশে এসেছিলেন তার ভাই, ভাইয়ের বউ, মা-বাপ সব নিকট আত্মীয় হারিয়ে চাচা, মামাতো ভাই। তিনি বলেছিলেন, বাংলাদেশের সমস্ত জনগণই আমার পরিবার। তিনি সেটা অক্ষরে অক্ষরে প্রমান দিলেন। এজন্য প্রথমেই গণতান্ত্রিক অধিকার প্রতিষ্ঠা করলেন। তিনি দেশের আসার পরও তখন কারফিউ ছিল, সেটা তুলে দিলেন। তারপর দেখলেন, স্বৈরাচারী শাসককে এদেশ থেকে বিতারণ করে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে হবে, ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে। যার ভোট সে দিবে যাকে খুশি তাকে দেবে। ভাতের অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে। থাকার জন্য একটু ঘর লাগবে, এবং বাড়ির কোন এক ইঞ্চি জমিও ফাঁকা থাকবে না, যেন কেউ খাবার কষ্ট না পায়। কমিউনিটি ক্লিনিক করলেন, তাতে যেন বাড়ির কাছে বসেই প্রাথমিক চিকিৎসা পায়। প্রত্যেকটাই জনগণের। তিনি জনগণের সাথে যেভাবে মিশে গেছেন এবং জনগণের ভাষা বোঝেন তাতে কত দল নির্বাচনে আসলো, কি হলো তাতে তো কিছু আসে যায় না। তারা এই দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনাকেই পছন্দ করবে, তাকেই নির্বাচিত করবে। 

অনেকে কত কিছু বলেছিল যে, ইলেকশনের পরে এটা দেবে, সেটা দেবে অন্য দেশে। কিছুই করবে না। আমি তখন বলেছিলাম এবং লিখেছিলামও। বিশ্ব চলে এখন যার যার স্বার্থের ওপর নির্ভর করে। আমেরিকার স্বার্থও এখানে আছে, এখানে ফ্রেন্সদের স্বার্থ আছে, ব্রিটেন-রাশিয়ারও আছে, চাইনিজদের আছে; সবারই স্বার্থ আছে। এই স্বার্থের ভেতরে যার যার স্বার্থ বাদ দিয়ে, আর ভারত তো আমাদের প্রমাণিত প্রতিবেশি এবং চিরকালই তাদের সঙ্গে আমাদের সুসম্পর্ক থাকবে। না থাকা দুই দেশের জন্যই খারাপ এবং সেটা হবে না। সরকার কোন দেশে কে আসলো না আসলো তা আমাদের জন্য কিছু ম্যাটার করে না, ভারতের জন্যও না। তারা চায় সুসম্পর্ক থাকবে এবং এক দেশে অন্য দেশের সম্পূরক হিসেবে অনেক বিষয়ে কাজ করবে। আমরা সেই ভাবেই এগিয়েছি। 

সুতরাং, এখন বলতেই হয় যে, এখন নির্বাচন হয়েছে নতুন ক্যাবিনেট হবে, মন্ত্রীপরিষদ হবে, এটা দেখলেও আপনারা অবাক হবে না। কিছু কিছু লোক আগের কেবিনেটের থাকবে, কারণ তারা প্রমাণ করেছে এবং তারা নেত্রীর টিমমেট হিসেবে যোগ্যতা রাখেন। কিন্তু, অনেক জায়গায় যারা নতুন তিনি তাদেরকে সুযোগ দেবেন যেন সঠিক নেতৃত্ব গড়ে তোলা যায়। তিনি ট্রায়াল এন্ড এরর দেন, অর্থাৎ সবাইকে সুযোগ দেন। যদি সেই সুযোগ কেউ প্রমাণ করতে না পারেন তাহলে কি করবেন? এবারও তো অনেককেই নমিনেশন দিয়েছিলেন। দেখা গেছে, তার পরিবর্তে আওয়ামী লীগেরই বিদ্রোহী প্রার্থীরা জিতে গেছে। তাও আবার একজন দুইজন না, ৬০ জনের ওপরে সেই সংখ্যা। সুতরাং, এই জায়গায় যার জন্য আগেকার অনেক নেতারা যারা বয়স্ক এবং তাদেরও অনেক অবদান, তাদের সম্পর্কে বারবার বলা উচিৎ না, কিন্তু তারা অনেকেই বলতেন যে, আমাদের তো নেত্রী কোন দায়িত্ব দেন না। তো, যখন তারা এক এগারোতে দায়িত্ব পেল তারা প্রথম দায়িত্ব পালন করলো সংস্কারবাদী হয়ে। অর্থাৎ, কি করে নেত্রীকে বাদ দেওয়া যায়। 

আমি বিশ্বাস করি, এখানে নেত্রীর দুটি ভিত্তি রয়েছে। একটি হচ্ছে তিনি কিছু লোকজনকে বিশ্বাস করে, তারা তার বিশ্বাসযোগ্য। আর কিছু লোককে মনে করেন তারা কাজের লোক, তাদেরকে কাজের প্রয়োজন। সেইখানে কাজের জন্য যতটুকু বিশ্বাস সেটাই যথেষ্ট, এর বেশি-কম নয়। আর কিছু আছে বিশ্বস্ত, তাদের কোন দায়িত্ব দেন বা না দেন, কিন্তু, তার বিশ্বস্ততা নেত্রীর কাজে লাগে। সুতরাং, নেত্রী সমস্তই রিল্যাক্স ওয়েতে চলছেন এবং আজকে রাতের ভেতরে দেখবেন বহু দেশ ইনফরমালি তারা সব জানাচ্ছে। কারণ, তিনি প্ল্যান করে চলেন, তাতে হয়তো শুক্রবারের মধ্যে নতুন সরকারও গঠন হবে। এবং উনি যেসব কমিটমেন্ট করেছিলেন, সেই স্মার্ট বাংলাদেশকে রুপান্তরিত করে যাবেন এবং আমাদের জীবদ্দশায় আমরা নতুন বাংলাদেশ দেখতে সক্ষম হবো।



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭