ইনসাইড পলিটিক্স

আলোচিত পরাজিতদের রাজনৈতিক ভবিষ্যত কী হবে?


প্রকাশ: 08/01/2024


Thumbnail

আলোচিত যারা পরাজিত হয়েছেন তাদের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ কী এটি নির্বাচনের পর বড় আলোচনার বিষয়। আওয়ামী লীগের তিনজন প্রতিমন্ত্রী, কেন্দ্রীয় সম্পাদকমণ্ডলীর চারজন সদস্য সহ ১৯ জন এমপি এবার পরাজিত হয়েছেন। যারা পরাজিত হয়েছেন তাদের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ কী। যদিও রাজনীতিতে একজন নেতার বা একজন প্রার্থীর জয় পরাজয়ে থাকতেই পারে। এটি কোন গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নয়। কিন্তু এবার এমন একটি পরিস্থিতিতে এবং এমন এক বাস্তবতায় নির্বাচন হয়েছে যেখানে একজন প্রার্থীর পরাজয় মানে তার রাজনৈতিক জীবনের যবনিকা পাত বলেও অনেকে মনে করছেন। 

তবে নির্মোহ ভাবে বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, যারা পরাজিত হয়েছেন তাদের রাজনীতিতে ইতি টানার কোন সম্ভাবনা না থাকারই কথা। কারণ রাজনীতিতে উত্থানপতন একটি স্বাভাবিক নিয়ম। যারা রাজনীতি করেন, তারা পরাজিত হতেই পারেন। শুধু বাংলাদেশ নয়, বিশ্বের রাজনীতিতে এ রকম পরাজয়ের ঘটনা রয়েছে৷ তবে কিছু কিছু ব্যক্তির এমন ভাবে বিপর্যয় ঘটেছে যেখানে তাদের রাজনীতিতে ঘুরে আসার সম্ভাবনা খুবই কম। যেমন ফরিদপুর থেকে আওয়ামী লীগের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির কো চেয়ার কাজী জাফরউল্লাহ কথাই ধরা যাক। জাফরউল্লাহ আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য এবং হেভিওয়েট নেতা। তিনি এর আগে দুবার নির্বাচনে মুজিবর রহমান চৌধুরী নিক্সনের কাছে পরাজিত হয়েছিলেন। এই নিয়ে তিনি টানা তৃতীয়বারের মতো পরাজিত হলেন। 

মুজিবুর রহমান চৌধুরী নিক্সনও আওয়ামী লীগের একজন সদস্য এবং তিনি আওয়ামী যুবলীগের প্রেসিডিয়ামের সদস্য বটে। কাজেই এই পরাজয়ের পর কাজী জাফরউল্লাহ আর যাই হোক নির্বাচনের রাজনীতি করতে পারবেন কিনা সেটি নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। তাছাড়া যে বয়স হয়েছে এই বয়সে কারণে তিনি রাজনীতিতে আর কতটুকু সক্রিয় থাকবে সেই প্রশ্ন অনেকে করছেন। 

আওয়ামী লীগের আরেকজন প্রভাবশালী নেতা প্রচার সম্পাদক আবদুস সোবহান গোলাপ মাদারীপুর থেকে পরাজিত হয়েছেন। আব্দুস সোবহান গোলাপের রাজনীতিতে উত্থান ছিল যেমন নাটকীয়তাপূর্ণ। এলাম, দেখলাম, জয় করলাম এর মতো ঠিক তেমনই তার পরাজয় ছিল অতি নাটকীয়তায় ভরা। আওয়ামী লীগের  স্বর্গরাজ্য বলে পরিচিত মাদারীপুর থেকে তিনি পরাজিত হয়েছেন। আব্দুস সোবহান গোলাপের বিরুদ্ধে এর আগেও নানা রকম অভিযোগ ছিল। তার এই পরাজয় তার রাজনীতির হিসাব নিকেশ পাল্টে দিতে পারে। তার রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়তে পারে। তবে তিনি যদি প্রকৃত রাজনীতিবিদ হন তাহলে এই পরাজয় থেকে তিনি শিক্ষা নেবেন। তার যে রাজনৈতিক ভুল ক্রুটিগুলো ছিল, সেগুলো তিনি শুধরে নিয়ে এগোবেন এবং নতুন করে নিজেকে গড়ে তোলার চেষ্টা করবেন।  

একই রকম পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে আওয়ামী লীগের মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক সম্পাদক মৃণাল কান্তি দাস এবং অসীম কুমার উকিলের ক্ষেত্রে। এই দুজনই পোড় খাওয়া রাজনীতিবিদ এবং আওয়ামী লীগের দুঃসময়ের ত্যাগী নেতা হিসেবে পরিচিত। তাদের এই পরাজয় তাদের রাজনৈতিক গতিধারাকে খুব একটা বিঘ্নিত করবে না বলে মনে করেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। কারণ তারা এরকম পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে অতীতেও গেছেন। আবার নতুন করে ঘুরে দাঁড়ানোর জন্য যে দৃঢ়তা, ধৈর্য এবং রাজনৈতিক প্রজ্ঞা দরকার, সেটি তাদের আছে। এখন দেখার বিষয় কখন, কীভাবে তারা রাজনীতিতে আবার ফিরে আসে নতুন করে। 

যে তিনজন প্রতিমন্ত্রী এবার পরাজিত হয়েছেন তাদের মধ্যে অন্তত দুজন রাজনৈতিক পরিবারের সন্তান। মাহবুব আলী এবং স্বপন ভট্টাচার্য দুজনই রাজনৈতিক আবহ থেকে বেড়ে উঠেছেন। এই ধরনের পরিস্থিতির মুখোমুখি তাদের জন্য খুব স্বাভাবিক৷ তারা আবার নতুন করে ঘুরে দাঁড়ানোর জন্য চেষ্টা করলে ঘুরে দাঁড়াতে পারবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। কিন্তু দুর্যোগ প্রতিমন্ত্রী এনামুর রহমান ছিলেন আগন্তুক। তিনিও এলাম, দেখলাম, জয় করলাম এর মতো আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে এসেই এমপি হয়েছিলেন, প্রতিমন্ত্রী হয়েছিলেন এবং আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে অতীতে তার কোন অবদান ছিল না না। আর এই কারণেই ডা. এনামুল রহমানের রাজনীতিতে ফিরে আসা এক জটিল এবং কঠিন সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে বলেই মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭