ইনসাইড ইকোনমি

বিশ্বজুড়ে কমেছে খাবারের দাম, পিছিয়ে বাংলাদেশ


প্রকাশ: 09/01/2024


Thumbnail

বিশ্বজুড়ে খাবারের দাম কমলেও বাংলাদেশে বেড়েছে। অন্যদেশগুলোর তুলনায় খাবারের দামে পিছিয়ে আছে বাংলাদেশ । সম্প্রতি প্রকাশিত জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (এফএও) তথ্যের সঙ্গে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্য বিশ্লেষণে এ চিত্র দেখা গেছে। এই হিসেবে গত বছর (২০২৩) বিশ্বব্যাপী খাবারের দাম আগের বছরের তুলনায় ১৩ দশমিক ৭ শতাংশ কমেছে। যেখানে একই সময় বাংলাদেশে খাবারের দাম ১০ দশমিক শূন্য ৬ শতাংশ বেড়েছে।

গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনসূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। প্রতিবেদনটি বলছে, বছরজুড়েই বাজারে জিনিসপত্রের দাম ছিল বেশ চড়া। কখনো ডিম, কখনো আবার পেঁয়াজ বা আলুর দাম বেড়েছে। শাক-সবজি, মাছ-মাংসের দামও ছিল সাধারণের নাগালের বাইরে। এছাড়া তেল, ডাল, চিনি, আটা ও ময়দার মতো নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দামও ছিল অস্বস্তির পর্যায়ে। এর মূল কারণ হিসেবে ধরা হয়েছে বাজার সিন্ডিকেটকে।

এফএওর খাদ্য মূল্যসূচক ২০২৩ প্রতিবেদন এবং বিবিএসের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা গেছে, বাংলাদেশের খাদ্য মূল্যস্ফীতি (পয়েন্ট-টু-পয়েন্ট) জানুয়ারিতে সর্বনিম্ন ৭ দশমিক ৭৬ শতাংশ থেকে আগস্টে সর্বোচ্চ ১২ দশমিক ৫৪ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। ২০২৩ সালে গড় খাদ্য মূল্যস্ফীতি কখনো ১০ দশমিক শূন্য ৬ শতাংশের কম ছিল না।

তথ্যসূত্রগুলো বলছে, ২০২৩ সালের শুরু থেকেই খাদ্য মূল্যস্ফীতি ছিল ঊর্ধ্বমুখী। বছরের শেষ ভাগে এসে তা আরও বেড়েছে। সরকারের নানান পদক্ষেপেও খাদ্যপণ্যের দামে লাগাম টানা যায়নি। বেড়েছে ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম্য। গত আগস্ট মাসে হঠাৎ খাদ্য মূল্যস্ফীতি প্রথমবারের মতো দুই অঙ্কের ঘরে উঠে যায়, যা ছিল গত এক দশকের মধ্যে সর্বোচ্চ। পরের তিন মাস খাদ্য মূল্যস্ফীতি ছিল ১২ শতাংশের ওপরে। অক্টোবরে মূল্যস্ফীতি ছিল ১২ দশমিক ৫৬ শতাংশ, যা গত ১১ বছর ৯ মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ।

নির্ভরযোগ্য সূত্রগুলো বলছে, গত ২০২৩ সাল দ্রব্যমূল্যের অস্বস্তি নিয়েই পার হয়েছে। নিত্যপণ্যের দাম নিয়ে বছরজুড়েই নাভিশ্বাস ছিল মানুষের। সীমিত আয়ের মানুষেরা পুরো বছরে সংসার চালাতে বিশেষত খাদ্য ব্যয় মেটাতে হিমশিম খেয়েছে। অনেকে বাধ্য হয়ে খাওয়া-দাওয়া সীমিত করেছেন। খাদ্যপণ্য কেনার পরিমাণ কমিয়ে দিয়েছেন। অনেক পরিবার আকাশচুম্বী দামের কারণে বছরজুড়ে মাছ, মাংস, ডিম, দুধের চাহিদা মেটাতে পারেনি।

অন্যদিকে গত এক বছরে বেশ কয়েকটি নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম সামান্য কমেছে। তবে দাম বেড়েছে এমন পণ্যের তালিকাই দীর্ঘ। সরকারি বিপণন সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) নিয়মিত বাজার দরের হিসাব রাখে।সংস্থাটির তথ্যানুযায়ী, গত এক বছরে শুধু চাল ও আটা-ময়দার দাম কমেছে। অন্যদিকে ডাল, তেল, চিনি, পেঁয়াজ, আদা, রসুন, আলু, ডিমসহ মসলা, মাছ, মাংসের দাম বেড়েছে।

রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে বছরের শুরুতে জ্বালানি তেল ও গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধি, ডলারের ঘাটতি, পণ্য ও কাঁচামাল আমদানিতে ডলার সংকট, পরিবহন ব্যয় বৃদ্ধিসহ বেশকিছু কারণে দ্রব্যমূল্যের সরবরাহ সংকটও ছিল। তারপরও এ বছর গম, চিনি ও ভোজ্যতেলের মতো বিভিন্ন আমদানিভিত্তিক নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম আন্তর্জাতিক বাজারে কমেছে। কিন্তু ডলার সংকট এবং জ্বালানির দাম বাড়ায় উচ্চতর আমদানি ব্যয়ের কারণে আমদানিকারকরা পণ্যের দাম কমায়নি। এতে বাংলাদেশের স্থানীয় বাজারে এর সুফল পাননি ভোক্তারা।

কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সহ-সভাপতি এস এম নাজের হোসেন গণমাধ্যমকে বলেন, বাজারে সুশাসনের ঘাটতির কারণেই সমস্যা হচ্ছে। ব্যবসায়ীরা যেমন খুশি দাম নির্ধারণ করছেন, সরকারের কোনো বিধি-বিধানের তোয়াক্কা করা হচ্ছে না। যেসব পণ্যের দাম বেঁধে দেওয়া হয়েছে সেগুলো কাগজে-কলমেই সীমাবদ্ধ ছিল। মাঝেমধ্যে ভোক্তা অধিদপ্তর কিছু জরিমানা করছে। এতে ব্যবসায়ীদের টনক নড়ছে না। তাদের কিছু যায়-আসেও না।



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭