ওয়ার্ল্ড ইনসাইড

একটানা ক্ষমতায় থাকা রাষ্ট্রপ্রধান যারা


প্রকাশ: 09/01/2024


Thumbnail

একটানা দীর্ঘ সময় ধরে ক্ষমতায় থাকা প্রধানমন্ত্রী বা প্রেসিডেন্টের সংখ্যা নেহায়েত কম নয়। সারা বিশ্বে এমন অনেক প্রেসিডেন্ট বা প্রধানমন্ত্রী আছেন যারা দীর্ঘ সময় ধরে ক্ষমতাসীন ছিলেন বা আছেন। একটানা কোনো প্রেসিডেন্ট বা প্রধানমন্ত্রী ক্ষমতায় থাকার সুফল বা কুফল দুটোই আছে। তবে কুফলের চেয়ে এর সুফলই বরং বেশি। কোনো সরকার একটানা ক্ষমতায় থাকার ফলে একটি দেশের উন্নয়নের ধারা অব্যাহত থাকে। একটি সরকারের আমলে বিভিন্ন উন্নয়নের যে প্রকল্প হাতে নেয়া হয়, সরকার বদল না হলে তাতে কোনো ব্যাঘাত ঘটে না।

চলুন এক পলকে দেখে নেয়া যাক সে সব ক্ষমতাধর ব্যক্তিদের সম্পর্কে যারা দীর্ঘ সময় নিজ দেশে প্রধানমন্ত্রী বা প্রেসিডেন্ট পদে অধিষ্ঠিত ছিলেন বা আছেন।

 

টিওডোরো ওবিয়াং, গিনি:

মধ্য আফ্রিকার ছোট্ট দেশ ইকুয়েটরিয়াল গিনির প্রেসিডেন্ট টিওডোরো ওবিয়াং। সেই ১৯৭৯ সালে তার চাচা ও দেশের প্রথম রাষ্ট্রপ্রধান ফ্রানথিসকো মাথিয়াস এনগুয়েমাকে ক্ষমতাচ্যুত করে অভ্যুত্থানের মাধ্যমে তিনি প্রেসিডেন্ট পদ গ্রহণ করেন। এর পর থেকে এখন পর্যন্ত তিনিই সে দেশের সর্বময় ক্ষমতার অধিকারীবর্তমানে এ রাষ্ট্রপ্রধানের বয়স ৭৮ বছর৷

এদিকে টিওডোরোর চাচা ফ্রানথিসকো মাথিয়াস ছিলেন স্বৈরাচারী। আর বর্তমানে টিওডোরো নিজেও আগামীতে তার বংশধরদের ক্ষমতায় থাকার বন্দোবস্ত করে ফেলেছেন। তিনি নিজের ছেলে টিওডোরো এগুয়েমা ওবিয়াং মাংগুয়েকে ভাইস প্রেসিডেন্ট পদে বসিয়েছেন, যাতে তার পর তার ছেলে দেশের পরবর্তী প্রেসিডেন্ট হতে পারেন।

রবার্ট মুগাবে, জিম্বাবুয়ে:

রবার্ট মুগাবে, জিম্বাবুয়ের ইতিহাসে স্বাধীনতার পর থেকে একচ্ছত্র ক্ষমতার অধিকারী ব্যক্তি ছিলেন তিনি- যিনি ঈশ্বর তুলে নেয়ার আগ পর্যন্ত ক্ষমতায় টিকে থাকার ঘোষণা দিয়েছিলেন। টানা ৩৭ বছর ক্ষমতায় থাকার পর জিম্বাবুয়ের সেনাবাহিনীর জন্য ক্ষমতা ছাড়তে বাধ্য হন মুগাবে। আফ্রিকা থেকে ঔপনিবেশিক শাসন ব্যবস্থা দূর করাতে মুগাবে বড় ভূমিকা পালন করেছিলেন বলে যাকে পুরো আফ্রিকায় নায়কের সম্মান দেয়া হতো- সেই মুগাবেই পরিণত হয়েছিলেন স্বৈরশাসকে। ক্রমাগত মানবাধিকার লঙ্ঘন করে একসময়কার সমৃদ্ধশালী জিম্বাবুয়েকে তলাবিহীন ঝুড়িতে পরিণত করেছিলেন তিনি।

আফ্রিকা মহাদেশের দক্ষিণাঞ্চলের এই দেশটি স্বাধীনতা লাভ করে ১৯৮০ সালে৷ স্বাধীনতার পর থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত এই দীর্ঘ সময় মুগাবে জিম্বাবুয়েতে ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত ছিলেন। অবশেষে সেনা অভ্যুত্থানের মুখে পদ থেকে সরে দাঁড়াতে হয় রবার্ট মুগাবেকে৷

আলি খামেনি, ইরান:

ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা সায়িদ আলি হোসেইনি খামেনি হলেন ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা৷  মধ্য প্রাচ্যের অন্যতম সবচেয়ে ক্ষমতাশালী ও গুরুত্বপূর্ণ একটি দেশ ইরানের রাজনৈতিক ক্ষমতার শীর্ষে আছেন ৮৩ বছর বয়সের এই নেতা। ১৯৮১ সালে দেশটির প্রেসিডেন্ট হিসেবে ক্ষমতায় আসেন তিনি৷ পরবর্তীতে ১৯৮৯ সাল থেকে তিনি সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন৷ দীর্ঘ ৪১ বছর ধরে দেশটির সর্বোচ্চ পদে আছেন আলি খামেনি৷

হুন সেন, কম্বোডিয়া:

ক্ষমতাসীন কম্বোডিয়ান পিপলস পার্টির (সিপিপি) নেতা হুন সেন। সেই ১৯৮৫ সাল থেকে কম্বোডিয়া শাসন করছেন তিনি। বিগত ৩৮ বছর ধরে ৭০ বছর বয়সী এই হুন সেন কম্বোডিয়ায় ক্ষমতায় আছেন। গত বছরের ২৩ জুলাই কম্বোডিয়ার সপ্তম জাতীয় নির্বাচনে কম্বোডিয়ার প্রধান বিরোধী দল ‘ক্যান্ডেল লাইট পার্টি’ নির্বাচনে অনুপস্থিত থাকায় বেশ সহজেই এবারও প্রধানমন্ত্রী হুন সেনই ক্ষমতার মসনদ নিশ্চিত করেন। ১৯৮৫ সাল থেকে ৩৩ বছর ধরে কম্বোডিয়ার প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্বে আছেন হুন সেন।

পল বিয়া, ক্যামেরুন:

পল বিয়া গত ৩৬ বছর ধরে ক্যামেরুনের প্রেসিডেন্ট৷ প্রথমবার প্রেসিডেন্ট হয়েছিলেন ১৯৮২ সালে৷ তার পর থেকে এ পর্যন্ত তাকে ক্ষমতা থেকে সরাতে দুটি অভ্যুত্থানের চেষ্টা হয়েছে৷ দুটিকেই ব্যর্থ করে ক্ষমতা আগলে রেখেছেন ৮৫ বছর বয়সি পল বিয়া৷

ওমর আল-বাশির, সুদান:

১৯৮৯ সালে ব্রিগেডিয়ার ওমর আল বশির আরো কিছু ইসলামপন্থী সেনাকর্মকর্তাকে সাথে নিয়ে সুদানের সর্বময় ক্ষমতা দখল করেন। সুদানের ওমর আল-বাশিরই রক্তপাতহীন অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতায় এসেছিলেন। তিনিই হচ্ছেন দেশটির ইতিহাসে সবচেয়ে দীর্ঘকাল ক্ষমতায় থাকা প্রেসিডেন্ট। ক্ষমতাসীন হওয়ার পর তাকে উৎখাতের চেষ্টা এর আগেও হয়েছে - তবে তা সফল হয় নি। তবে অবশেষে ২০১৯ সালে সুদানের গণবিক্ষোভের মুখে প্রেসিডেন্ট ওমর আল বশিরকে সেনাবাহিনী উৎখাত এবং গ্রেফতার করেছে।

শেখ হাসিনা, বাংলাদেশ:

এর আগে তিন মেয়াদে ১৫ বছর দায়িত্ব পালনের পর এবার চতুর্থবারের মতো প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন শেখ হাসিনা৷ যদিও সারাবিশ্বে সবচেয়ে বেশি সময় ক্ষমতায় থাকা প্রেসিডেন্ট এবং প্রধানমন্ত্রীদের তুলনায় শেখ হাসিনা এখনও অনেক পিছিয়ে৷ তবে এই চতুর্থ মেয়াদ শেষ করলে তারও একটানা ক্ষমতায় থাকার ২০ বছর পূর্ণ হয়ে যাবে।



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭