এডিটর’স মাইন্ড

১৪ দল কী ভেঙে যাচ্ছে?


প্রকাশ: 09/01/2024


Thumbnail

১৪ দল শেষ পর্যন্ত থাকবে কী থাকবে না তা নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে একটি অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে। সদ্য সমাপ্ত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ১৪ দলের শরিকদের মহা বিপর্যয় ঘটেছে। এই বিপর্যয়ের কারণে ১৪ দলের অনেক শরিক অভিমান করেছে। অন্তত দুটি রাজনৈতিক দল ১৪ দল থেকে বেরিয়ে যাওয়ার ইঙ্গিত দিয়েছে। ১৪ দলের অন্তত একটি শরিক দল মনে করে নির্বাচনে পরিকল্পিতভাবে তাদেরকে পরাজিত করা হয়েছে। এরকম একটি বাস্তবতা ১৪ দল প্রথমবারের মতো সঙ্কটে পড়েছে।

২০০১ সালের নির্বাচনে বিপর্যয়ের পর মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে লালন ধারণ এবং এগিয়ে নেওয়ার লক্ষ্যে আদর্শিক জোট ১৪ দল গঠিত হয়েছিল। আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন এই জোটে জাসদ, ওয়ার্কার্স পার্টি, সাম্যবাদী দলসহ বেশকিছু উদার গণতান্ত্রিক এবং বাম প্রগতিশীল রাজনৈতিক দল জোটবদ্ধ হয়েছিল। এই ১৪ দলে ২০০৮, ২০১৪ এবং ২০১৮ নির্বাচনে ঐক্যবদ্ধ ভাবে অংশগ্রহণ করে। যদিও ২০০৮ থেকে ২০১৮ পর্যন্ত প্রতিটি নির্বাচনেই ১৪ দলের পাশাপাশি মহাজোট গঠিত হয়েছিল। ২০০৮ এর নির্বাচনে ১৪ দলের শরিকদের মধ্যে থেকে সাম্যবাদী দলের দিলীপ বড়ুয়াকে মন্ত্রী করা হয়েছিল। ২০১৪ নির্বাচনের আগেই হাসানুল হক ইনু মন্ত্রিসভায় অন্তর্ভুক্ত হয়েছিলেন। আর ২০১৪ নির্বাচনের পর হাসানুল হক ইনু এবং রাশেদ খান মেনন এবং আনোয়ার হোসেন মঞ্জুকে মন্ত্রিসভায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিল। কিন্তু ২০১৮-তে নির্বাচনে জয়ী হওয়ার পর আওয়ামী লীগ আর ১৪ দলের শরিকদের মন্ত্রিসভায় নেয়নি। তখন আওয়ামী লীগ একলা চলো নীতি গ্রহণ করে এবং মন্ত্রিসভা শুধু আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য নিয়ে গঠন করা হয়েছিল। 

এবার নির্বাচনের সময় ১৪ দলকে নিয়ে প্রথম সংকটের সৃষ্টি হয়। অবশ্য এই সংকটের আগেই গত তিন বছর ধরে ১৪ দল অনেকটা অপাঙ্ক্তেয় এবং গুরুত্বহীন হয়ে পড়ে। আওয়ামী লীগ ১৪ দলকে পাশ কাটিয়ে যাওয়ার নীতি গ্রহণ করে এগোতে থাকে। বিশেষ করে ১৪ দলের সমন্বয়ক মোহাম্মদ নাসিমের মৃত্যুর পর ১৪ অনেকটাই অকার্যকর হয়ে উঠেছিল। আমির হোসেন আমুকে ১৪ দলের সমন্বয়কের দায়িত্ব দেওয়ার পর দীর্ঘদিন পর্যন্ত ১৪ দলের কোনো কার্যক্রমই ছিল না। অবশ্য নির্বাচনের আগে আবার ১৪ দলের সঙ্গে বৈঠক করেন আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এই বৈঠকে তিনি আদর্শিক জোটকে এগিয়ে নেওয়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছিলেন। কিন্তু আসন ভাগাভাগির সময় দেখা যায় যে ১৪ দলের শরিকদেরকে আওয়ামী লীগ বেশি আসনে ছাড় দিতে অনাগ্রহ দেখায়। এ সময় আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে যুক্তি দেখানো হয় যে ১৪ দলের শরিকদের জনপ্রিয়তা এলাকায় কম এবং তারা নিজেদের শক্তিতে জয়ী হতে খুব একটা সক্ষমতা অর্জন করেনি। তাছাড়া আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে এটাও সাফ জানিয়ে দেওয়া হয় যে, তারা নির্বাচন প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ করতে চায়। আর এ কারণে নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থীরা থাকুক। স্বতন্ত্র প্রার্থীদেরকে বসিয়ে দেওয়ার কোনো চিন্তাভাবনা আওয়ামী লীগের নেই। আর এর ফলে ১৪ দল সংকটে পড়ে। শেষ পর্যন্ত ১৪ দলের সব শরিক মিলে ৬টি আসন পায়।

যদিও ১৪ দলের পক্ষ থেকে এতে অসন্তোষ প্রকাশ করা হয়। কিন্তু তারপরও ঐক্যের স্বার্থে তারা শেষ পর্যন্ত নির্বাচনে যায়। কিন্তু এবার নির্বাচনে সেই ৬ টি আসনের মাত্র দুটিতে ১৪ শরিকরা বিজয়ী হয়েছেন। একটি ওয়ার্কার্স পার্টির রাশেদ খান মেনন, অন্যটি জাসদের তানসেন। জাসদের সভাপতি এবং দলের গুরুত্বপূর্ণ নেতা হাসানুল হক ইনু কুষ্টিয়ায় তার আসনে পরাজিত হন। অন্যদিকে রাশেদ খান মেননের দলের জনপ্রিয় নেতা ফজলে হোসেন বাদশা রাজশাহী থেকে পরাজিত হন। এর ফলে ১৪ দলের মধ্যে ক্ষোভ অসন্তোষ প্রকাশ্যে রূপ লাভ করেছে। 

নির্বাচনের পরে হাসানুল হক ইনু অভিযোগ করেছেন যে প্রশাসন তাকে হারিয়ে দিয়েছে। যদিও আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে এই ধরনের অভিযোগকে অস্বীকার করা হয়েছে। কিন্তু সবকিছু মিলে ১৪ দলের মধ্যে অস্বস্তি এবং প্রকাশ্য দ্বন্দ্ব এখন দানা বেঁধে উঠেছে। এই অবস্থায় ১৪ দল থাকা না থাকা নিয়ে একটি সংকট তৈরি হয়েছে। অবশ্য আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে যে নির্বাচনে জয় পরাজয় থাকবেই। ১৪ দলের শরিকদের মান অভিমান থাকতেই পারে। এ নিয়ে অসন্তোষের কিছু নেই। তবে তারা মনে করে সময়ের সাথে সাথে ১৪ দল আবার আগের মতো ঐক্যবদ্ধ হবে।


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭