ইনসাইড বাংলাদেশ

বাংলাদেশ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের কৌশল কী?


প্রকাশ: 10/01/2024


Thumbnail

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর যুক্তরাষ্ট্র অনেক কিছু করবে বলেই শোনা গিয়েছিল। বাংলাদেশের ওপর নিষেধাজ্ঞা আসবে, অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা আসতে পারে ইত্যাদি নানারকম আলোচনা ছিল বিভিন্ন মহলে। কূটনৈতিক পাড়ায় নিয়ে নানারকম গুঞ্জন ছিল। কিন্তু নির্বাচনের দুদিন পর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে একটি মামুলি বিবৃতি দিয়েছে। সেই বিবৃতিতে বাংলাদেশের নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য হয়নি বলে মন্তব্য করেছে। তবে বাংলাদেশের সঙ্গে ইন্দো প্যাসিফিক সম্পর্ক এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার অঙ্গীকার ব্যক্ত করা হয়েছে মার্কিন বিবৃতিতে। 

স্বাভাবিক ভাবে প্রশ্ন উঠেছে যে, বাংলাদেশ নিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কৌশল কী? মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কী বাংলাদেশ নিয়ে নতুন কোন পরিকল্পনা করছে? দুবছর ধরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশ নিয়ে যে অতি আগ্রহী ছিল সেই আগ্রহ হঠাৎ করে স্তিমিত হয়ে গেল কেন? নির্বাচন নিয়েই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এমন রক্ষণাত্মক এবং নমনীয় অবস্থানে গেল কেন?

দেখা গেছে যে, কম্বোডিয়া এবং নাইজেরিয়ার নির্বাচনের ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে ওই দেশগুলোতে বিভিন্ন ব্যক্তির ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। কিন্তু বাংলাদেশের নির্বাচনের পর এই ধরনের কোন নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়নি। বাংলাদেশ নিয়ে তাহলে যুক্তরাষ্ট্রের কৌশল কী? এরকম একটি প্রশ্নের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে বিভিন্ন কূটনৈতিক বিশ্লেষকরা একাধিক কারণ খুঁজে বের করেছেন।

প্রথমত, ভারতের অবস্থান। বৈশ্বিক বাস্তবতায় এই মুহূর্তে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ভারতের ওপরে অনেকখানি নির্ভর। কোন অবস্থাতেই ভারতের সঙ্গে সম্পর্কের অবনতি ঘটাতে চায় না মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। আর এই কারণেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের নির্বাচনটিকে নিয়ে ধরি মাছ না ছুঁই পানির মতো অবস্থানে নিজেদেরকে রেখেছে।

দ্বিতীয়ত, বাংলাদেশের বিরোধী দলগুলো যে আন্দোলন করেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নীতিগতভাবে এবং নৈতিক ভাবে সেই আন্দোলনকে সমর্থন করতে পারে না। কারণ জ্বালাপোড়া ও সহিংসতার রাজনীতির মার্কিন গণতন্ত্রের মূল চেতনার পরিপন্থী। আর এই কারণেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সামনে আর কোন বিকল্প ছিল না। নির্বাচন নিয়ে যে সমালোচনা সেটি একটি রুটিন দায়িত্ব। কিন্তু মন্দের ভাল হিসেবে নির্বাচনকে শেষ পর্যন্ত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র মেনে নিল।

তৃতীয়ত, বাংলাদেশের ব্যাপারে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কৌশলগত অবস্থান। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ভালোভাবেই বুঝতে পেরেছে যে বর্তমান রাজনৈতিক বাস্তবতায় আওয়ামী লীগের কোনো বিকল্প নেই এবং এই মুহূর্তে বিরোধী দল বা তৃতীয় শক্তির ক্ষমতা আসার কোন সম্ভাবনা নেই। আর এরকম বাস্তবতায় বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক এগিয়ে নেওয়া যাওয়া, বিশেষ করে অর্থনৈতিক এবং বাণিজ্যিক সম্পর্ক এগিয়ে নিয়ে যাওয়াটাই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জন্য সবচেয়ে ইতিবাচক হবে। আর এ কারণেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র একটি বিবৃতি দিয়ে সরকারকে চাপ দিয়ে রাখল, যেন ভবিষ্যতে সরকারের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নের ক্ষেত্রে এই চাপটা ব্যবহার করা যায়।

তবে কূটনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন যে বিষয়টি পুরোপুরি অর্থনৈতিক এবং বাণিজ্যিক। যদি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশের সঙ্গে ব্যবসায়িক সম্পর্ক উন্নতি করে, বাংলাদেশ যদি চীনের সঙ্গে সম্পর্কের ক্ষেত্রে একটা নির্দিষ্ট সীমারেখা টেনে দেয় সে ক্ষেত্রে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়ন করবে এবং নতুন ভাবে বাংলাদেশের সাথে অর্থনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন করতে আগ্রহী হবে। সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে যে, চলতি বছরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে নির্বাচন। এ নির্বাচন নিয়ে জো বাইডেন এমনিতেই কোণঠাসা অবস্থায় রয়েছেন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের একটা বড় ভোট ব্যাঙ্ক রয়েছে। এরকম পরিস্থিতিতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক অবনতি করে নতুন করে সংকট সৃষ্টি করতে চায়না। আর এ কারণেই হয়তো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের ব্যাপারে নমনীয় কৌশল নিয়েছে।



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭