ইনসাইড বাংলাদেশ

যুক্তরাষ্ট্রের ইউটার্ন এবং পিটার হাসের অভিমান ভঙ্গ


প্রকাশ: 12/01/2024


Thumbnail

মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার ডি হাস অবশেষে অভিমান ভাঙলেন। অভিমান ভেঙ্গে তিনি বঙ্গভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে টানা চতুর্থবারের মতো প্রধানমন্ত্রী হওয়ায় অভিনন্দন জানালেন। এটি বাংলাদেশের রাজনীতিতে একটি বড় টার্নিং পয়েন্ট হিসেবে বিবেচিত হতে পারে। যদিও কূটনৈতিক পরিভাষায় এটাকে বলা যেতে পারে স্রেফ সৌজন্যতা। পিটার হাস যেহেতু বাংলাদেশে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত তিনি বঙ্গভবনে শপথ অনুষ্ঠানে গিয়েছিলেন, শপথ অনুষ্ঠানে গিয়ে নবনিযুক্ত প্রধানমন্ত্রীকে অভিনন্দন জানানো একটা স্বাভাবিক সৌজন্যতা। এর মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান বা স্বীকৃতির কোন ইঙ্গিত খুঁজে পাওয়া উচিত হবে না। কিন্তু কূটনৈতিক পরিভাষায় বলা হয় যে, ছোট্ট একটা শুভেচ্ছাও অনেক সময় মহামূল্যবান মহা গুরুত্বপূর্ণ। 

মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার ডি হাস ২৮ অক্টোবর থেকে অভিযানে ছিলেন। বিশেষ করে বিএনপির জ্বালাও পোড়াও সহিংসতার পর  তার চাঞ্চল্য অনেকটাই স্তিমিত হয়ে গিয়েছিল। তিনি ২৮ অক্টোবরের পর নির্বাচন কমিশনে গিয়েছিলেন। এরপর ডোনাল্ড লু'র চিঠি নিয়ে তিনি গিয়েছিলেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদেরের কাছে এবং নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার দিন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের সঙ্গে তার অফিস সচিবালয়ের অফিসে সাক্ষাৎ করেন মার্কিন রাষ্ট্রদূত।এরপর নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা হলে তিনি শ্রীলঙ্কা যান। সেখান থেকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ছুটি কাটিয়ে তিনি দেশে ফিরেও তার নীরবতা ভঙ্গ করেননি। এর মধ্যেই নির্বাচন হয়ে যায়। নির্বাচনের পর পিটার ডি হাসকে তেমন কোন কথা বলতে দেখা যায়নি। বিশেষ করে নির্বাচন কমিশন যখন কূটনীতিকদের ব্রিফিং করছিল তখন পিটার ডি হাস সেখানে উপস্থিত ছিলেন না।

তবে বিদায়ী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন যখন কূটনীতিকদেরকে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন, সেখানে তিনি উপস্থিত হয়েছিলেন। তবে সেখানে তিনি নির্বাচন সংক্রান্ত ব্রিফিং নোট পেয়েই চলে যান। তখন সকলে মনে করেছিল যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের হয়তো নির্বাচন নিয়ে একটি নেতিবাচক অবস্থা রয়েছে। আর এই নেতিবাচক অবস্থার কারণেই পিটার ডি হাস মুখ খুলছেন না বা সবকিছুকে এড়িয়ে যাচ্ছেন। তবে গতকাল শপথ অনুষ্ঠানে তার উপস্থিতি পুরো বিষয়টিকে নিয়ে নতুন করে ভাবাচ্ছে। 

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে গত দু বছর ধরে যে ধরনের অবস্থানে ছিল নির্বাচনের পর সেই অবস্থান থেকে স্পষ্টতই সরে এসেছে। এ কথা ঠিক যে নির্বাচনের পর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের পক্ষ থেকে একটি বিবৃতি দেওয়া হয়েছে। সেই বিবৃতিটি একটি মামুলি এবং খুবই নরম ভাবে নির্বাচন নির্বাচনের সমালোচনা করা হয়েছে। তবে ওই বিবৃতিতে বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার বার্তাটিও দেওয়া হয়েছে। 

এখান থেকে বোঝা যায় যে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের নির্বাচনকে পরোক্ষ ভাবে মেনে নিয়েছে। বিশেষ করে কম্বোডিয়া, নাইজিরিয়ার ক্ষেত্রে নির্বাচনের পরপরই যে রকম ভাবে ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছিল, বাংলাদেশের ক্ষেত্রে তেমনটি করা হয়নি। ফলে বাংলাদেশের নির্বাচন এক ধরনের বৈধতা পেয়েছে বলেই ধারণা করা হচ্ছে। এটাকে যুক্তরাষ্ট্রের ইউটার্ন হিসেবে বিবেচনা করা হয়। বিশেষ করে যারা বিএনপিপন্থি বুদ্ধিজীবী বিদেশে বসে সরকারের বিরুদ্ধে প্রতিনিয়ত নানা রকম বিষেদগার করছেন তারা এটিতে অত্যন্ত হতাশ হয়ে পড়েছেন। এই হতাশা প্রকাশ করে লেখালেখির মাধ্যমকে এখন সামাজিক মাধ্যমে ঘোরাফেরা করছে। যুক্তরাষ্ট্রের এই ইউটার্নের অন্যতম প্রধান হলো যে, তারা বাংলাদেশের সাথে সম্পর্ক অব্যাহত রাখতে চায়। এই অঞ্চলে ভারতকে সাথে নিয়ে কাজ করতে চায়। আর এ কারণেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের ব্যাপারে নমনীয়। আর এই নমনীয় বার্তাটি সম্ভবত পিটার ডি হাস পেয়েছেন এবং এ কারণেই তিনি মান ভাঙলেন।


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭