প্রকাশ: 12/01/2024
আমাজন রেইনফরেস্টে হারিয়ে যাওয়া প্রায় দুই হাজার বছরের পুরোনো কয়েকটি শহরসমৃদ্ধ এক উপত্যকার সন্ধান পেয়েছেন প্রত্নতাত্ত্বিকেরা। গতকাল বৃহস্পতিবার সায়েন্স জার্নালে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনের সূত্রে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ানের প্রতিবেদনে উঠে এসেছে এ খবর। গবেষকদের বলছেন, প্রচীন এই শহরটিতে প্রায় ১০ হাজার কৃষকের বসবাস ছিলো।
গবেষকেরা বলছেন, এই শহরগুলো ইউরোপের রোমান সাম্রাজ্যের প্রায় সমসাময়িক। এই উপত্যকায় ছয় হাজারেরও বেশি মাটির ঢিবির ওপর নির্মিত আবাসিক এবং অনুষ্ঠানের জন্য নির্মিত ভবনগুলো ড্রেনেজ খালসহ কৃষিক্ষেত্র দ্বারা বেষ্টিত ছিল। শহরগুলোর সবচেয়ে বড় রাস্তাগুলো ছিল ৩৩ ফুট (১০ মিটার) প্রশস্ত এবং ৬ থেকে ১২ মাইল (১০-২০ কিলোমিটার) পর্যন্ত প্রসারিত।
মানুষের আগ্রহ ও কৌতূহলের শেষ নেই রহস্যে ঘেরা আমাজন বন নিয়ে । সেই কৌতূহল মেটাতে বছরের পর বছর ধরে পৃথিবীর ফুসফুস খ্যাত এই বন নিয়ে বিস্তর গবেষণা চালাচ্ছে গবেষকরা। গবেষদের দাবি, এই শহর আমাজন নিয়ে মানুষের এতদিনের ধারণাই বদলে দেবে।
ইকুয়েডরে মাটির নিচে চাপা পড়া বেশ কয়েকটি ঢিবি এবং রাস্তার সন্ধান দুই দশক আগেই পেয়েছিলেন ফ্রান্সের ন্যাশনাল সেন্টার ফর সায়েন্টিফিক রিসার্চ দ্বারা পরিচালিত এই গবেষণার প্রধান ও প্রত্নতাত্ত্বিক স্টিফেন রোস্টেইন। কিন্তু সেগুলো একসঙ্গে কীভাবে থাকতে পারে, তা তখন বুঝতে পারেননি তিনি।
তবে লেজার সেন্সর প্রযুক্তি দ্বারা সম্প্রতি করা এক ম্যাপিং থেকে প্রাপ্ত তথ্য বলছে, মাটির ঢিবিগুলোর সঙ্গে সংযোগকারী রাস্তাগুলো ছিল একটি বিস্তৃত জনবসতির অংশ। আন্দিজ পর্বতের পাদদেশে অবস্থিত বনভূমির মাঝে এই জনবসতি টিকে ছিল প্রায় এক হাজার বছর। স্টিফেন রোস্টেইন বলেন, ‘এটা ছিল হারিয়ে যাওয়া শহরগুলোর উপত্যকা। এটা অবিশ্বাস্য!’
লেজার ইন দ্য স্কাই প্রযুক্তিতে হেলিকপ্টার, ছোট বিমান বা ড্রোনের সঙ্গে যুক্ত একটি লেজার স্ক্যানার দিয়ে আকাশ থেকেই ভূখণ্ড জরিপ করে দেখা হয়। এই লেজারের স্ক্যানিংয়ের ফলে ওই ভূখণ্ডের একটি ডিজিটাল মডেল কম্পিউটারের পর্দায় ধরা পড়ে।
বিবিসির প্রতিবেদন অনুযায়ী, আমাজনের ইকুয়েডরের উপানো এলাকায় এই শহর আবিষ্কার করেছেন গবেষকরা। শহরটি এত প্রাচীন হলেও এর বাড়িঘর বিভিন্ন সড়ক ও খালের মাধ্যমে একে অন্যের সঙ্গে সংযুক্ত ছিল।
প্রাচীন এই শহর আবিষ্কার দলের প্রধান ফ্রান্সের ন্যাশনাল সেন্টার ফর সায়েন্টিফিক রিসার্চের গবেষণা অধ্যাপক স্টিফেন রোস্টেন বলেন, আমাজনে আবিষ্কৃত অন্য যে কোনো এলাকার চেয়ে এটি পুরোনো। সভ্যতা নিয়ে আমাদের মাঝে ইউরোপকেন্দ্রিক একটি দৃষ্টিভঙ্গি রয়েছে। তবে পুরোনো এই শহর আবিষ্কারের ফলে সংস্কৃতি ও সভ্যতা নিয়ে আমাদের ধারণা পাল্টাতে হবে।
সহ-লেখক অ্যান্টোইন ডরিসন বলেন, আমরা এতদিন আমাজনীয় সংস্কৃতিকে যেভাবে দেখে এসেছি এটি তা পরিবর্তন করে দিয়েছে। এতদিন আমাদের ধারণা ছিল সেখানকার বেশিরভাগ মানুষ ছোট ছোট দলে বসবাস করেছেন। সম্ভবত নগ্ন হয়েই। তারা কুঁড়েঘরে বসবাস করতেন এবং জমি চাষাবাদ করতেন। তবে পুরোনো এই শহর আবিষ্কার আমাদের দেখিয়েছে প্রাচীন লোকেরা জটিল শহুরে সমাজেও বাস করতেন।
ইউনিভার্সিটি অব এক্সেটারের প্রত্নতাত্ত্বিক হোসে ইরিয়ার্তে বলেছেন, রাস্তা এবং হাজার হাজার মাটির ঢিবি নির্মাণের জন্য সংগঠিত শ্রমের একটি সুবিন্যস্ত ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল। তিনি বলেন, ইনকা এবং মায়ানরা পাথর দিয়ে শহর তৈরি করেছিল। কিন্তু আমাজনের মানুষের সাধারণত নির্মাণের জন্য পাথর পাওয়ার কথা নয়। তারা মাটি দিয়েই এসব তৈরি করেছিল। এটি যেকোনো সময়ের জন্যই ব্যাপক শ্রমের ব্যাপার।
তিনি আরও বলেন, আমাজনকে এমন এক গহিন বনভূমি মনে করা হয়, যেখানে শুধু ছোট ছোট গোষ্ঠীর মানুষই থাকত। কিন্তু সাম্প্রতিক আবিষ্কারগুলো দেখিয়েছে, অতীতেও সেখানে জটিল সমাজব্যবস্থার অস্তিত্ব ছিল।
প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান
বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭