কালার ইনসাইড

দর্শক চাহিদায় বাংলা নাটকের গ্রহণযোগ্যতা


প্রকাশ: 13/01/2024


Thumbnail

টেলিভিশন কিংবা সোশ্যাল মিডিয়া বা ওটিটি প্লাটফর্মে বাংলা নাটক এখন দর্শকদের মাঝে একটি পূর্ণরূপ বিনোদন সম্পূর্ণ হয়েছে। রোমান্টিক, হাস্য, প্রেম, ও জীবনের সমস্ত মৌলিক দিকগুলি বাংলা নাটকে সংযুক্ত করা হয় কেননা বিনোদনের উৎস হিসেবে  বাংলানাটক বহুভাবে জনজীবনকে নানাভাবে আন্দোলিত ও প্রভাবিত করেছে। আপামর মানুষকে কখনো হাসিয়েছে, কাঁদিয়েছে, কখনোবা সমাজ ব্যবস্থা সম্পর্কে ভাবনা জুগিয়েছে।

প্রতিটি ঈদ-আনন্দে যেমন দর্শকদের নাটক দেখা চাই, তেমনি বিজয় দিবস, শহীদ দিবসের মতো জাতীয় দিবসগুলোতেও নাটক দর্শকদের কাছে বিশেষ অনুষঙ্গ হিসেবে রয়েছে। সেজন্যেই নাটক শুধুমাত্র বিনোদনের মাধ্যম হয়ে থাকেনি, অনেক সময় হয়ে উঠেছে প্রতিবাদের হাতিয়ার। বিনোদনের গণ্ডি পেরিয়ে বাংলা নাটক মানুষের মন ও বোধের জগৎ শক্তিশালী করতে ভূমিকা রেখেছে। সেইসঙ্গে সামাজিক অসঙ্গতি ও কুসংস্কারের দেয়ালও ভেঙেছে। দিন দিন নাটকের প্রয়োজনীয়তা বৃদ্ধি পেয়েছে দর্শক চাহিদায়।

একটু পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, বর্তমানে দর্শক চাহিদার শীর্ষ বিনোদন গুলোর মধ্যে বাংলা নাটকের গ্রহণযোগ্যতা আকাশচুম্বী। এর প্রমাণ স্বরূপ প্রতি বছরই নির্মিত হচ্ছে অসংখ্য নাটক। নির্মাতা এবং অভিনয়শিল্পীরা তাদের আদর্শ বৈচিত্র্যে এবং আত্মবিশ্বাসে সাথে প্রতিটি বিষয়ে দৃষ্টিকোন সমৃদ্ধি নিয়ে পরিপূর্ণ একটি নাটক নির্মাণ করতে পারে। এতে দর্শকদের মাঝে আরও বেশি গ্রহণযোগ্য হয়ে উঠবে। যেমন, গল্প ও লেখনীর গুনগত উন্নতি থেকে শুরু করে দর্শক চাহিদার প্রাধান্য দেওয়া।

বাংলা নাটক আরও  উন্নত এবং সৃষ্টিশীল করে প্রবল কাহিনী, উচ্চ স্তরের অভিনয় এবং মৌলিক প্রদর্শনের মাধ্যমে দর্শকদের জীবনের বিভিন্ন মুহূর্ত উপহার দিতে পারে। যা দর্শকদের মধ্যে চাহিদা তৈরি করে সৃজনশীল এবং আত্মবিশ্বাসী অভিজ্ঞতা হওয়ার সম্ভাবনা আছে। সমগ্র প্রজন্মের লোকদের আগ্রহ জন্মাতে সাহায্য করতে পারে কারণ একটি ভাল নাটকের মনোরম এবং গভীর কাহিনি দর্শকদের হৃদয়ের কেন্দ্র বিন্দু পর্যন্ত চলে যায়। ভাল নাটকে সৃষ্টি হওয়া চরিত্রগুলি দর্শকদের মাঝে আসক্ত করতে সাহায্য করে এবং তাদের সাথে জড়ো মোলিক কাঠামো জড়ো করে। উচ্চ স্তরের নাটক সৃষ্টির সাথে সাথে প্রদর্শনের ভারী বাজেট, সুসংস্কৃত পরিচালনা, এবং উত্কৃষ্ট অভিনয়, জোরদার প্রদর্শন, অতিরিক্ত প্রসন্ন এবং সৃষ্টি, নাটকে মডার্ন তত্ত্ব এবং প্রযুক্তি প্রবৃদ্ধি করার জন্য উপযুক্ত হতে পারে।

তবে গল্প এবং প্রদর্শনের সাথে মিশে দেওয়ার জন্য নতুন এবং নতুন ধরনের কমিউনিকেশন প্রয়োজন। যার মাধ্যমে দর্শকদের আগ্রহ তৈরি করতে সাহায্য করে। দেখা যায়, সোশ্যাল ইস্যু, সামাজিক বৈচিত্র্য, এবং তার মধ্যে ঘটনার স্বভাবে সম্বোধন সবকিছু বাংলা নাটকে আবৃত্তি পায়। এক কথায় স্বাধীন ভাবে মন্তব্যমূলক এবং তার কাহিনীগুলি আধুনিক সময়ের চোখ দিয়ে দর্শকদের নাটকের প্রতি আগ্রহ করে তুলতে পারে।

দর্শকের জায়গা থেকে দেখা যায়, নাটক নিয়ে সচেতন দর্শকের রয়েছে নানান অভিযোগ। শিল্প আর ভাঁড়ামির মধ্যে অনেক নাট্যনির্মাতা পার্থক্য বুঝতে পারছেন না। তারা নাটক প্রিয় দর্শকের কাছে ভাঁড়ামিকেই বিনোদনের মাধ্যম হিসেবে তুলে ধরছেন। যেখানে দর্শকরুচি উপর  নাটক নির্মাণে কাজ করার কথা, সেখানে এখন অনেক নাটকই দর্শকরুচিকে নিম্নদিকে ধাবিত করছে।

যদি বিগত দিনের নাটক পর্যালোচনা করা হয় তাহলে, বাংলাদেশে দেখা যায় এক শ্রেণির নাটকের ভাষা বিকৃতি করছে। নাটক নির্মাণকারীর অসাবধানতার কারনে ক্রমেই বেড়ে যাচ্ছে এর প্রকার। এক কথায়, জোর করে দর্শক হাসানোর প্রবণতার মত। এটি খুবই দুঃখজনক বিষয়। নাট্যকার থেকে শুরু করে নাটকের সাথে সংশ্লিষ্ট সবাই সাধারণ মানুষ নন। তাদের সামাজিক দায়িত্ব অনেক বেশি। প্রত্যেক শিল্পীরই তাদের কাজের প্রতি দায়বদ্ধ থাকা উচিত।

কেউ কেউ হয়তো বলে, সাধারণ দর্শক তো এসব নাটক নিচ্ছে। তারা উপভোগ করছে। তাহলে সমস্যা কী?

আমাদের কথা হলো, দর্শক যা দেখতে চায় তা দেখানো কি নাট্যকারের কাজ? নাটকের অভিপ্রায়? নাকি নাট্যকার ও নাটকের নিজস্ব গতিপথ এবং অভিরুচি রয়েছে? নাট্যকারের রুচিই যদি দর্শক রুচি হয়, তবে সেখানে দর্শক বা নাটকপ্রেমীদের বলার কিছু থাকে না। কেননা, এ দৃষ্টিতে নাট্যকার ও জনতা একই কাতারের মানুষ। দর্শকের একাংশ ভাঁড়ামি নিচ্ছে বলে নাট্যকার সেদিকে দৃষ্টি দিচ্ছেন, অনেক দর্শক অশ্লিল বিষয়ও দেখতে আগ্রহী। তাহলে নাট্যকার বা নির্মাতা কি সেগুলোও দেখাবেন? দর্শক দেখতে চায় বলে দায়িত্ব এড়ানো যায় না। এতে নাট্যকারের সক্ষমতা নিয়েও প্রশ্ন ওঠে। নাট্যকারের ভাবা উচিত, দর্শক যা দেখতে চায় আমি কি তাদের সেটা দেখাবো নাকি আমি কী দেখাতে চাই তা দর্শকদের সামনে উপস্থাপন করবো।



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭