ইনসাইড পলিটিক্স

ত্রিমুখী সংকটে জি এম কাদের


প্রকাশ: 13/01/2024


Thumbnail

জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদের ত্রিমুখী সংকটে পড়েছেন। একদিকে সরকারের সঙ্গে তার টানাপোড়েন, অন্যদিকে দলের অভ্যন্তরে বিরোধ আর তার চেয়ে বড় কথা বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে তিনি পরিত্যক্ত ঘোষিত হয়েছেন। সব মিলিয়ে জি এম কাদেরের রাজনীতি এখন গভীর সংকটে। এখান থেকে তিনি বেরিয়ে আসতে পারবেন কিনা সেটাই দেখার বিষয়।

গত কয়েক বছর ধরে জি এম কাদেরের ভূমিকা ছিল রহস্যময়। তিনি মাঝে মাঝে বিএনপির চেয়েও বেশি সরকারের সমালোচক হয়ে উঠছিলেন। সুশীল সমাজের সঙ্গেও তার একটা সম্পর্কের কথা শোনা যাচ্ছিল। আর এই কারণেই তিনি এমন সব কথাবার্তা বলতেন যা বিব্রতকর এবং জাতীয় পার্টির জন্য অস্বস্তিকর ছিল। কিন্তু তারপরও তিনি জাতীয় পার্টিকে বোঝাতে চেয়েছিলেন যে জাতীয় পার্টির একটি স্বাতন্ত্র অস্তিত্ব থাকা দরকার। বিরোধী দল হিসেবে জাতীয় পার্টিকে আবার সক্রিয় থাকতে গেলে এবং জনগণের গ্রহণযোগ্যতা পেতে হলে সরকারের এরকম সমালোচনার বিকল্প নেই। কিন্তু সরকারের সমালোচনা করতে গিয়ে তিনি সুশীলদের মুখপাত্রে পরিণত হয়েছিলেন। এ রকম পরিস্থিতিতে জাতীয় পার্টিতে কয়েক দফা টানাপোড়েন সৃষ্টি হয়েছিল। বিশেষ করে রওশন এরশাদের সাথে তার বৈরীতা একটা প্রকাশ্য ব্যাপার দাঁড়িয়েছিল জাতীয় পার্টিতে। এই সমস্ত কিছু পেরিয়ে তিনি নির্বাচনে যাবেন কি না তা নিয়েও তৈরি হয়েছিল এক ধরনের অনিশ্চয়তা। কিন্তু শেষ পর্যন্ত জি এম কাদের নির্বাচনে যান। 

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন যে, তার নির্বাচনে যাওয়াটা ছিল তা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিপক্ষকে সামাল দেওয়ার কৌশল। তার নিজের নির্বাচনে যাওয়ার ইচ্ছা ছিল না। এই নির্বাচনে যাওয়া নিয়েও তিনি রওশন এরশাদের সাথে চূড়ান্ত বিরোধে জড়িয়ে পড়েন। ফলে সরকারের সঙ্গে তার একদিকে যেমন আস্থার সংকট দেখা দেয়, সরকার তাকে বিশ্বাস করতে পারছিল না। অন্যদিকে জাতীয় পার্টিতেও রওশনপন্থিরা তার প্রতি বিরাগভাজন হন। অনেকে ধারণা করেছিল যে জাতীয় পার্টি নির্বাচনে ৩০ টির বেশি আসন পাবে এবং সরকার এই আসনগুলো পেতে তাদেরকে সহযোগিতা করবে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত জাতীয় পার্টি পেয়েছে মাত্র ১১ টি আসন। 

আওয়ামী লীগ অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন করার একটা নীতিগত অবস্থান গ্রহণ করেছিল। ফলে জাতীয় পার্টির প্রার্থীদের ভরাডুবি হয়। এমনকি যে সমস্ত আসনে আওয়ামী লীগ জাতীয় পার্টিকে ছেড়ে দিয়েছিল সেই সমস্ত আসনেও স্বতন্ত্রদের কাছে তারা পরাজিত হয়। এরকম বাস্তবতায় নির্বাচনের পর জাতীয় পার্টির ভিতরে এখন বিদ্রোহ দেখা দিয়েছে। জাতীয় পার্টির প্রতি এখন যেমন আওয়ামী লীগের আগের সেই সহানুভূতি নেই, তেমনি সরকারও মনে করছে জাতীয় পার্টিকে বিরোধী দল করলে লাভের চেয়ে ক্ষতি বেশি। আর ১১ টি আসন নিয়ে জাতীয় পার্টি আপনাআপনি বিরোধী দল হতে পারবে না। 

অন্যদিকে জাতীয় পার্টিতে যারা নির্বাচন করেননি বা নির্বাচনে পরাজিত হয়েছেন, তারা মনে করছেন যে জি এম কাদেরের অবস্থানের কারণে সরকার জাতীয় পার্টির ওপর নাখোশ হয়েছে এবং জাতীয় পার্টির অস্তিত্ব সংকটে পড়েছে। এ কারণে তারা এখন জি এম কাদেরের নেতৃত্ব পরিবর্তন চাইছেন। ইতোমধ্যে কাজী ফিরোজ রশীদ, সুনীল শুভ রায় সহ কয়েক জনকে বহিষ্কার করা হয়েছে। আগে রওশনপন্থি হিসেবে পরিচিত মশিউর রহমান রাঙ্গা জাতীয় পার্টি থেকে। এই পরিস্থিতিতে জাতীয় পার্টি একটি বড় ধরনের ভাঙনের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে বলে অনেক রাজনৈতিক বিশ্লেষক মনে করেন। জি এম কাদেরের সে সময় রাজনৈতিক প্রজ্ঞা এবং ক্যারিশমাটিক নাই যে তিনি তার ব্যক্তিগত ক্যারিশমায় দলকে ঐক্যবদ্ধ রাখতে পারেন। 

সবচেয়ে মজার ব্যাপার হলো বিভিন্ন সময় সুশীল সমাজের সাথে তার প্রকাশ্য এবং গোপন বৈঠক হয়েছে। বিভিন্ন দূতাবাসগুলো জি এম কাদেরকে অনেক বেশি প্রশ্রয় দিয়েছে। তারা এখন জি এম কাদেরকে সুবিধাবাদী মনে করছেন। তিনি কোনো অবস্থানেই স্থির থাকতে পারেননি। এ জন্য তাকে নিয়েও সুশীলদের মধ্যে এক ধরনের অনীহা তৈরি হয়েছে। সব কিছু মিলিয়ে ত্রিমূখী সংকটে জি এম কাদেরের রাজনৈতিক ভবিষ্যতই এখন দ্বারপ্রান্তে।


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭