ইনসাইড থট

‘চমকের মন্ত্রিসভা দেশবাসীকে চমক দেখাবেন’


প্রকাশ: 13/01/2024


Thumbnail

হাতের পাঁচটি আঙুল যেমন সমান হলে কোনো কিছু আমরা হাত দিয়ে ধরতে পারি না, সুতরাং এটা ছোট-বড় হওয়াই নিয়ম। ঠিক তেমনিভাবে বর্তমান যে মন্ত্রিসভা দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা করেছেন, সেটি তিনি একটি দর্শন নিয়েই একজনকে একটা মন্ত্রণালয় দিয়েছেন। আসলে জনগণের পারসেপশন, এমনকি অনেক মন্ত্রীদেরও পারসেপশন এবং লেখাপড়া জানা মন্ত্রীদেরও একটা পারসেপশন আছে যে, অমুক মন্ত্রণালয় গুরুত্বপূর্ণ, অমুকটা গুরুত্বপূর্ণ না। আমি যেহেতু পাঁচ বছর মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছি এবং বিভিন্ন কারণে নেত্রীর আকাঙ্খা অনুযায়ী ঠিক নির্দেশ দিয়েছেন তা নয়, আকাঙ্খা অনুযায়ী প্রত্যেকটি মন্ত্রণালয়ের কাজই আমি বিভিন্নভাবে দেখেছি। যেমন, ধর্ম মন্ত্রণালয় সম্বন্ধেও আমার কাজে এসেছেন যে তিনি দেখতেন এবং আমি সেগুলি সম্বন্ধে আমার কাছে একদম ফাস্টহ্যান্ড ইনফরমেশন আছে। তাতে প্রতিটি মন্ত্রণালয় একই ধরনের গুরুত্বপূর্ণ। শুধু কর্মক্ষেত্র আলাদা। মন্ত্রণালয় কোনটি গুরুত্বপূর্ণ বেশি, গুরুত্বপূর্ণ কম, এটা বোঝায় না। মন্ত্রণালয় হচ্ছে জনগণের জন্য। 

এবার আওয়ামী লীগ যে মেনিফেস্টো দিয়েছে তার মূল কথা হচ্ছে যে, স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে হবে এক কথায়। সব দেশেই দেখা যায় ম্যানিফেস্টো দিলে তার সামান্য কিছু করে আর অধিকাংশই করতে পারে না, এটা সমগ্র বিশ্ব অনুযায়ী। একমাত্র ব্যতিক্রমী হচ্ছেন দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা। কারণও আছে। কারণ হচ্ছে এই যে, তিনি একটি দর্শন নিয়ে একটি মন্ত্রণালয়ে একজন মন্ত্রীকে বসান। অনেক সময় তার দর্শন অনেক মন্ত্রী বুঝতে পারে, অনেকে বুঝতে পারে না। কিন্তু যখন প্রয়োজন হয় তখন নেত্রী মাইক্রো ম্যানেজমেন্টও দেখেন। এই কারণের জন্যে দেশবাসী বা সাধারণ লোকজন আমরা কিন্তু সরকারের সার্বিক উন্নতিটাই দেখি। এবং যতই পত্রপত্রিকায় কোন ইনডিভিজুয়াল মন্ত্রণালয়ের বিরুদ্ধে লেখুক, যা হোক; উনি হাসেন অনেক সময় আমি দেখেছি। গুরুত্ব দেন না এই জন্যে যে, আসলে এই বিষয়গুলি মন্ত্রীকে ক্রিটিসাইজ করা হয় না, করা হয় দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনাকে। কেননা, তার কিছু কিছু জায়গা আছে সেটা এত মাইক্রো লেভেলে যে, ওই পর্যন্ত হয়তো স্বাভাবিকভাবেই তার সেটা সম্ভব নয়। সে দায়িত্ব মন্ত্রণালয়ের ও ঠিক মন্ত্রীরই পরে। কিন্তু মন্ত্রীরও তার কর্মীবাহিনী দিয়ে ওটা কাজটা করাতে হয়। সেই পয়েন্টটা যদি বাদ দিই তাহলে মোটা দাগের কাজ কোন মন্ত্রণালয় করে না, যেটা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সাথে আলাপ করা ছাড়া করা হয় বা করার কারও সাহস আছে বা সেই ধরনের মনোবল আছে যে, এটা আমি করি তারপরে নেত্রী বলুক। তবে, এর ভিতরে দুই একজন মন্ত্রী এবার যারা এসেছেন তার মধ্যে করতে পারবেন। আমি ইচ্ছা করে নাম বলছি না। কারণ, নাম বললে তারা ভুল বুঝবে। 

আর অনেকের খুব চ্যালেঞ্জিং মন্ত্রণালয় আছে। সব মন্ত্রী এবার যে সমানভাবে তার মন্ত্রণালয় সঠিকভাবে চালাতে পারবেন, আমি এটা বিশ্বাস করি না। আমার বিশ্বাস হল যে, সব মন্ত্রীদের প্রতি আমি এই বয়সে জীবনের প্রায় সায়ান্যে এসে একটি জিনিস গুরুত্ব সহকারে বলতে চাই, তাদের আমার বক্তব্য শোনার ইচ্ছে থাকুক আর না থাকুক তবুও বলবো, তাদের মনে রাখতে হবে, তারা তুলনা করবে নিজের কর্মের সাথে নিজের। তার আগে কে মন্ত্রী ছিল তার কাজের সাথেও না, অন্য মন্ত্রণালয় মন্ত্রী কি করছে তাও না। তার নিজের যে সর্বোচ্চ দেওয়ার ক্ষমতা সেটুকু যদি ব্যবহার করেন তাহলে মন্ত্রণালয়ের তার ভালো কাজের বিকল্প হচ্ছে আরও ভাল কাজ করা। সুতরাং, কোনো মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী কোনও কাজে আমি ফেল করার সম্ভাবনা দেখি না। আর প্রত্যেক মন্ত্রণালয় ইচ্ছা করলে এখানে অনৈতিক হওয়ার সুযোগ আছে, এটা কিন্তু মনে রাখতে হবে। বাইরের পাবলিক পারসেপশন জানুক আর না জানুক আমি জেনে বলছি। সুতরাং, ওই সব বাদ দিয়ে এবং নেত্রী একটি পিপড়া কোথা থেকে কোথায় যায় তাও জানেন। সুতরাং, কেউ যদি মনে করেন যে কোন কিছু করে তারা আগের মতো পার পেয়ে যাবেন, এবার মন্ত্রণালয় আগের মন্ত্রণালয়ের সাথে এক নয়। মন্ত্রীদের কাজকর্ম দেখার ব্যাপারে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে আমি ৬২ বছরের বেশি সময় চিনি, আমি জানি, এবার অন্যরকমভাবে হবে। কেউ যেন না মনে করেন যে, পাচ বছর পর্যন্ত তাকে জমিদারির লিজ দেওয়া হয়েছে। প্রয়োজন হলে যে কোন সময় তারা এতদিনকার যে নেত্রী শেখ হাসিনাকে দেখেছেন, এখন কিন্তু সেই একই শেখ হাসিনা নয়। এখন দার্শনিক শেখ হাসিনা হচ্ছেন ঠিকই যে, তার দেশকে উন্নতির দিকে নিতে হবে এবং তিনি টাইমফ্রেম দিয়ে দিয়েছেন, যে কোন সালের ভিতর কি করতে হবে, তাতে কতদূর আগাচ্ছে সেই মন্ত্রী যদি অনৈতিকও হন কতদূর পর্যন্ত হচ্ছেন, তার কাজের পরিধি কি, প্রত্যেকটা জিনিস বিচার করবেন এবং যেখানে প্রয়োজন হবে, প্রথমে হয়তো উপদেশ দিবেন, অনেক জায়গায় উপদেশ না দিয়ে সোজাসুজি আস্সালামু আলাইকুমও (বিদায়) বলে দিতে পারেন, এটা কিন্তু মনে রাখতেই হবে। 

আমার বিশ্বাস, যে মন্ত্রণালয় তিনি করেছেন তাদের একজন ছাড়া প্রায় সবাইকে আমি ভালোভাবে চিনি। তাতে তারা যোগ্যতা রাখেন এবং তাদের একটি দায়িত্ব হবে এই মিডিয়াতে কম কথা বলা। প্রথম থেকেই সেই অভ্যাস করতে হবে। তাদের মিডিয়াকে বলতে হবে যে, আমি কাজ করি তারপর বলবো। প্রথম ৯০ দিন একমাত্র মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এবং তিনি যাকে দায়িত্ব দিবেন, এখন তো পার্টির সাধারণ সম্পাদকই করেন। এবং যে যে মন্ত্রী মন্ত্রণালয় আছে সেখান তার মন্ত্রণালয়ের রেলিভেন্ট যে সকল কথাবার্তা আছে তা বলবেন। কিন্তু, আগে থেকে এটা করবো, ওটা করবো, ওইটা আনবো এটা আনবো এসব যে খামাখা বলে প্রথম দিকেই জনগণকে একটা ভুল ম্যাসেজ না দেন, এদিকে খেয়াল রাখতে হবে। কারণ, তাদেরকে কথা বলার জন্য মন্ত্রী করা হয় নাই, কাজের জন্য মন্ত্রী করা হয়েছে। তাদের সততা এবং কাজের যোগ্যতা দেখেই করা হয়েছে। দীর্ঘ বিচার বিবেচনা করেই তিনি করেছেন। 

অনেকেই বলেছিলেন যে তিনি চমক দেখাবেন, উনি চমক দেখিয়েছেন। কিন্তু, মন্ত্রীরা তাদের অপদার্থ কাজের দ্বারা যেন আবার তাদের উল্টো চমক না দেখায় যে, নেত্রী চমক দেখালেন দেশের উন্নতির জন্য, আর তারা এমন কথাবার্তা শুরু করলেন, কাজ শুরু করলেন যে নেত্রীকেই চমক দিলেন যে, আপনি তো সুযোগ দিয়েছিলেন এখন দেখেন আপনাকে শেষ করলাম। এটাও আমি খুব বু্ঝেই বলছি। আমি একটা রাস্তার লোকের মতো আন্দাজে বলছি না। তো আমি যে মন্ত্রীপরিষদ গঠিত হয়েছে আমি তাতে মনি করি খুবই ভালো মন্ত্রিসভা এবং এই মন্ত্রিসভায় যদি সঠিকভাবে যে যার দায়িত্ব পালন করেন, প্রত্যেকটি মন্ত্রণালয় উজ্জল আকাশের তারার মতো সেখানে উজ্জলতা দেখাতে পারবেন। এখানে এমন কোন মন্ত্রণালয় নাই যে মন্ত্রণালয়ের নাকি নতুনভাবে করার কিছু নাই। 

আমি একটা মন্ত্রণালয়ের কথাই বলি, যেটা হয়তো মানুষের আলোচনায় আসে না। ধর্ম মন্ত্রণালয়। ধর্ম মন্ত্রণালয়ে অনেক কিছু করার আছে। কিন্তু, এটা বুঝতে হবে। মন্ত্রীকে প্রথম কিছুদিন বুঝতে হবে। আর, আমলাদের সম্বন্ধে আমি বলবো যে, মন্ত্রীদের বুঝতে হবে, আমলারা কিন্তু প্রথম কিছুদিন খুব তীক্ষ্মভাবে তাদের ট্রেনিংয়ের কারণে দৃষ্টি রাখেন যে, এই মন্ত্রীর ডেপথ অব নলেজ কতটুকু। এটা বুঝে তারা সেইভাবে মন্ত্রীদের সাথে নোটও পাঠায়, সেইভাবেই তারা কাজকর্ম করে। সুতরাং, এটাও তাদের একটা চ্যালেঞ্জ। সেই চ্যালেঞ্জটা হচ্ছে আমলাদের বুঝানো যে, আমরাই হচ্ছি রাজনৈতিকভাবে আমাদের যে ম্যান্ডেট দেওয়া হয়েছে, আমরা যে ম্যান্ডেটে এসেছি, সেই ম্যান্ডেটকে পরিপূর্ণ করবো এবং আমরা রাজনৈতিক দিকনির্দেশনা দিবো এবং তোমরা সেটার প্রতিপালন করবা। মন্ত্রী এবং সচিব একইসাথে যদি সততার সাথে এবং একইভাবে যদি যেটা যেহেতু ম্যান্ডেট পেয়েছেন পাচ বছর যদি সেইভাবে কাজ না করেন তাহলে শুধু কাজের শুধু গতি কমে যাবে তা না, আসল যে কাজটা যে কারণে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী মন্তিসভা গঠন করেছেন সেটি অর্থহীন হয়ে দাড়াবে । 

সুতরাং, আমার বিশ্বাস এই মন্তিসভা যে রকম চমকের মন্ত্রিসভা হয়েছেন এবং তাদের কাজের মাধ্যমে দেশবাসীকে চমক দেখাবেন। এবং, সেই চমক দেখাবার ক্ষমতা প্রত্যেক মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীর আছে। এবং আমি বিশ্বাস করি এবং একজন মুরুব্বি হিসেবে দোয়া করি, তারা যেন শুধু সফলকামী হন এবং ভবিষ্যত বংশধরদের জন্য ইতিহাস রচনা করে যান। এবং মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর প্রতি তাদের যে সত্যিকারের শ্রদ্ধাবোধ তার প্রমাণ দেন। জাতির পিতা যিদি দেশটা স্বাধীন করে গেছেন, তাঁর প্রতিও তাদের দায়িত্ববোধ। সুতরাং, দেশবাসীর প্রতি দায়িত্ববোধ পালন করলেই বাকি দুইজনের প্রতি দায়িত্ববোধ স্বাভাবিকভাবেই পালন করা হবে।


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭