ইনসাইড বাংলাদেশ

লক্ষীপুরে পৌষের শেষে কনকনে শীতে জনজীবন স্থবির


প্রকাশ: 14/01/2024


Thumbnail

পৌষের শেষে হাড় কাঁপানো হিমেল বাতাসে বেড়েছে শীতের তীব্রতা। দেশের বিভিন্ন স্থানের মতো জেঁকে বসা পৌষের হাড় কাঁপানো শীত। 

বিপর্যস্ত  উপকূলীয় অঞ্চলের লক্ষ্মীপুর জেলা  রামগতি ও কমল নগর, রায়পুর, রামগঞ্জ ও লক্ষীপুর সদর উপজেলার জনজীবন। হিমেল বাতাসের সাথে চলছে কুয়াশার দাপট। রাতে ঘন কুয়াশার কারণে রাস্তায় যানবাহন চলাচল করতে হচ্ছে কষ্ট করে। প্রয়োজন ছাড়া ঘরের বাইরে বের হচ্ছে না কেউ। বিপাকে পরেছে ছিন্নমূল ও খেটে খাওয়া লোকজন। শুক্রবার সন্ধ্যায় শীতের তীব্রতার কারণে উন্মুক্ত স্থানে আগুন জ্বালিয়ে উষ্ণতার ছোঁয়া নিচ্ছেন জনসাধারণ। 

এদিকে শীত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে শীত নিবারণের জন্য বাড়ছে গরম কাপড়ের চাহিদা। ছিন্নমূল ও খেটে খাওয়া লোকজন জেলা/ উপজেলা শহরসহ বিভিন্ন হাট বাজারের পুরনো কাপড়ের দোকানে ভিড় করছেন শীতের পোশাক কিনতে। তাই সর্বত্রই জমে উঠেছে শীত বস্ত্র  গরম কাপড় বেচাকেনা।

সরেজমিনে দেখা গেছে, ক্রেতারা দোকান ঘুরে দরদাম করে পুরনো এসব শীত বস্ত্র কিনছেন। সকল বয়সী এবং সকল শ্রেণি-পেশার ক্রেতাদেরই দেখা যাচ্ছে পুরানো কাপড়ের দোকানে। লক্ষীপুর পৌরসভার   এক ব্যবসায়ী বলেন নভেম্বর মাসে তাদের কেনাবেচা শুরু হয়েছে, চলবে ফেব্রুয়ারি মাস পর্যন্ত।

কথায় বলে ‘মাঘ মাসে বাঘ কাঁপে’। তবে এবার বোধ হয় পৌষেই বাঘ কাঁপতে শুরু করেছে। বাঘ কাঁপা মাঘ আসতে এখনো বাকি ১০ দিন। কয়দিন ধরে রামগঞ্জে শীত অনুভূত হলেও এর প্রভাব ছিল মূলত রাতে। দিন থেকেছে রৌদ্রকরোজ্জ্বল। ফলে শীতটা সেভাবে টের পাওয়া যায়নি। কিন্তু গত শুক্রবার সকালে থেকে সূর্যের মুখ দেখিনি কেউ।  রাত থেকে রামগঞ্জেও কনকনে শীত অনুভূত হচ্ছে। কুয়াশা ও মেঘের কারণে রোদের দেখা মিলছে না। কিন্তু এরই মধ্যে শুরু হয়ে গেছে কনকনে ঠান্ডা বাতাস। মূলত উত্তর দিক থেকে আসা বাতাসে শীতে কাঁপছে সারা দেশ। ঠান্ডায় জুবুথুবু হয়ে পড়েছেন কর্মমুখী সাধারণ মানুষ। কেউ কেউ আগুন জ্বালিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা করছেন।

পৌষের শেষে এসে শীতে কাঁপছে সারাদেশ। রাতে বৃষ্টির মতো ঝরছে শিশির। রামগঞ্জে বয়ে যাচ্ছে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ। সঙ্গে রয়েছে ঘন কুয়াশাও। তীব্র শীত ও ঘন কুয়াশায় ব্যাহত হচ্ছে স্বাভাবিক জীবনযাত্রা। গত শুক্রবার- শনিবার এবং রবিবার  সকাল থেকে সূর্যের দেখা মেলেনি দেশের অধিকাংশ স্থানে। শীতে থেমে থাকেনি স্কুল-কলেজসহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরাও। হতদরিদ্র ও নিম্নআয়ের লোকজন শীতবস্ত্রের অভাবে এবং শীতের দাপটে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন। পাড়া-মহল্লা ও রাস্তাঘাটের লোকজন আগুন জ্বালিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা করছেন।

সরেজমিনে রামগঞ্জে বিভিন্ন ইউনিয়ন ঘুরে দেখা গেছে, রাত থেকে সকাল পর্যন্ত ঘনকুয়াশা এবং দিনভর উত্তর-পশ্চিম থেকে বয়ে আসা হিমেল হাওয়ায় কনকনে শীতে সাধারণ মানুষের বেহাল দশা। শীতের কারণে জরুরি কাজ ছাড়া মানুষ বাড়ি থেকে বের হচ্ছে না। এতে বিপাকে পড়েছেন দরিদ্র ও নিম্নআয়ের মানুষ। তবে পরিবারের চাহিদা মেটাতে অনেকেই শীত উপেক্ষা করেই কাজের সন্ধানে ছুটছেন। দিনের বেলা সূর্যের দেখা না মেলায়  উত্তাপ না থাকায় কনকনে শীতের তীব্রতা বাড়ছে। ভোরে ঘনকুয়াশা থাকার কারণে অধিকাংশ সড়কে যানবাহনগুলো হেডলাইট জ্বালিয়ে চলাচল করছে। ফলে দুর্ভোগের পড়ছেন যাত্রীরা।    

লক্ষ্মীপুর সদর, কমলনগর, রামগতি, রায়পুর ও রামগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সসহ সব হাসপাতালের চিত্র এখন একই রকম। শীতের তীব্রতা বেড়ে যাওয়ায় পাল্লা দিয়ে হাসপাতালগুলোতে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। 

প্রচন্ড শীতে বেশি আক্রান্ত হচ্ছে শিশু ও বয়স্করা। শীতে হাসপাতালগুলোতে ঠান্ডাজনিত রোগীর সংখ্যা অস্বাভাবিক বাড়ছে। 

ফসলের বীজতলা ঠিকমতো পরিচর্যা করা যাচ্ছে না। দরিদ্র ও নিম্নআয়ের লোকজন খড়-কুটো জ্বালিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা করছেন। গরম কাপড়ের অভাবে অনেক দরিদ্র ও নিম্নআয়ের লোকজন বাড়ি থেকে বের হতে না পারায় কাজেও যোগ দিতে পারছেন না তারা। কাজ করতে না পারায় তারা চরম দুর্ভোগে পড়েছে।

দিনমজুর কাওসার  বলেন, গত কয়েকদিন ধরে ঠান্ডা অনেকটাই বেড়েছে। বাতাসের কারণে হাত-পা অবশ হয়ে যাচ্ছে। রাস্তায় চলাচল করা যাচ্ছে না। পেটের তাগিদে শীতের মধ্যে আমাদের প্রতিদিন কাজের জন্য বের হতে হয়।

রিক্সাচালক নবী হোসেন বলেন, ঠান্ডায় অনেকেই বাড়ি থেকে না বের হাওয়ায় লোকজন তেমন পাওয়া যাচ্ছে না। তবে যে হারে ঠান্ডা বাতাস তাতে সবার চলাচল করতে খুব সমস্যা হচ্ছে।

শুক্রবার দুপুরে সরেজমিন লক্ষ্মীপুর সদর হাসপাতাল ঘুরে দেখা যায়, তৃতীয় তলার শিশু ওয়ার্ডে প্রতিটি বেডে দুজন করে রোগী। ৮টি বেডের বিপরীতে মেঝেতেসহ মোট ২৫ জন রোগী চিকিৎসা নিচ্ছেন ওই ওয়ার্ডে। তারা ঠাণ্ডাজনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছে। এদের কেউ জ্বর, ঠাণ্ডা, আবার কেউ সর্দি-কাশি, নিউমোনিয়া এবং শ্বাসকষ্টে ভুগছেন বলে জানান রোগীর স্বজনরা। ভর্তিকৃত রোগীদের কিছুটা উন্নতি হলেও প্রতিদিনই হাসপাতালে আসছেন নতুন নতুন রোগী। এতে করে হিমশিম খাচ্ছেন হাসপাতাল সংশ্লিষ্টরা। 

হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, প্রতিদিন ২০-২৫ জন রোগী ঠাণ্ডাজনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হন। ইনডোর ও আউটডোরে প্রতিদিন শতাধিক রোগীকে চিকিৎসা দেওয়া হয়। গত কয়েকদিন থেকে এমন পরিস্থিতি চলছে বলে জানায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, লক্ষ্মীপুর সদর, কমলনগর, রামগতি, রায়পুর ও রামগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সসহ সব হাসপাতালের চিত্র এখন একই রকম। শীতের তীব্রতা বেড়ে যাওয়ায় পাল্লা দিয়ে হাসপাতালগুলোতে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। বিশেষ করে বয়স্কদের তুলনায় উদ্বেগজনক হারে শিশুরা বেশি আক্রান্ত হচ্ছে।

লক্ষ্মীপুর সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. আনোয়ার হোসেন বলেন, রোগীর চাপে হিমশিম খেতে হচ্ছে। বর্তমানে শিশুদের পাশাপাশি বয়স্করাও শীতকালীন রোগে আক্রান্ত হওয়ার বড় ঝুঁকিতে রয়েছেন। বিশেষ করে শিশুদের গরম কাপড় পরানো, ঘন ঘন মায়ের দুধ সেবন করাসহ তাদের প্রতি বাড়তি নজর রাখা এবং সবাইকে সচেতন হওয়ার পরামর্শ দেন তিনি।

অনেকেই দাবী করেন সমাজের বিত্তবান শ্রেণি ও বিভিন্ন এনজিও, মানবিক সংগঠন গুলো যদি এগিয়ে আসে তাহলে গ্রামের খেটে খাওয়া মানুষ গুলোর জন্য অনেক বেশি উপকার হবে। যদিও অনেকে এগিয়ে আসছে সেটিও চাহিদার তুলনায় অপ্রতুল।



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭