ওয়ার্ল্ড ইনসাইড

কথায়-কাজে অমিল এ কেমন যুক্তরাষ্ট্র?


প্রকাশ: 15/01/2024


Thumbnail

বর্তমান বিশ্ব রাজনীতিতে যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকাণ্ড খুবই প্রশ্নবিদ্ধ। বৈশ্বিক রাজনীতিতে একরকম হযবরল অবস্থায় পৌঁছেছে তাদের অবস্থান। বিভিন্ন সময় বিভিন্ন ইস্যুতে তাদের দেয়া বক্তব্যের সাথে গৃহীত পদক্ষেপের কোনো রুপ মিল না থাকায় বৈশ্বিক রাজনীতিতে অনেকটাই হাস্যরসে পরিণত হয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। কথা এবং কাজে মিল না থাকায় তারা কখন কি করছে বা কেন করছে এছাড়া ভবিষ্যতে কি করতে পারে সেটাও আচ করা মুশকিল হয়ে পড়ছে। বলা যায় অদ্ভুত এক ম্যাসাকার অবস্থানে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের বৈশ্বিক রাজনীতি।

সম্প্রতি তাইওয়ানের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বিজয়ী হয়েছেন চীনা বিরোধী নেতা লাই চিং তে। আর এ ঘটনা চীনের জন্য মোটেও সুখকর কিছু নয়। শুরু থেকেই এ নির্বাচনে জয়ী ক্ষমতাসীন ডেমোক্রেটিক প্রগ্রেসিভ পার্টির (ডিপিপি) প্রার্থী লাই চিং তে’র পরাজয় চেয়েছিল বেইজিং। তাইওয়ানের প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী ও বর্তমান ভাইস প্রেসিডেন্ট লাই চিং-তেকে একজন ‘বিপজ্জনক বিচ্ছিন্নতাবাদী’ হিসেবেই অভিহিত করেছে চীন। এ ছাড়াও চীনের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় তাইওয়ানিদের স্বাধীনতার লক্ষ্যে অভিযাত্রাকে গুঁড়িয়ে দেওয়ার কথাও জানিয়েছে।

এমনই যখন পরিস্থিতি তখন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আনুষ্ঠানিক কূটনৈতিক সম্পর্ক না থাকা সত্ত্বেও ডিপিপি নির্বাচনে লাই চিং তে জয়ী হওয়ার পর মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার তাইওয়ানের জনগণকে অভিনন্দন জানিয়েছেন। এ ছাড়াও লাই এর জয়ে তাকে অভিনন্দন জানিয়েছেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেনও। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্র তাইওয়ান প্রণালিজুড়ে শান্তি ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। যুক্তরাষ্ট্র চায় মতবিরোধের শান্তিপূর্ণ সমাধান। চায় জবরদস্তি ও চাপমুক্ত পরিবেশ।

কিন্তু অপরদিকে গতকালই লাই চিং তের এই জয়ের পর এক সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেছেন, “আমরা তাইওয়ানের স্বাধীনতাকে সমর্থন জানাই না।”

মূলত, তাইওয়ানের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের কোনও কূটনৈতিক সম্পর্ক নেই। তা সত্ত্বেও দেশটিকে সামরিক সহায়তা দেয় যুক্তরাষ্ট্র। চীনের আশঙ্কা মার্কিনিদের সহায়তায় একটা সময় স্বাধীনতা চেয়ে বসবে তাইওয়ান। আর চীনা বিরোধী নেতা লাই এর জয় পাওয়ার এ আশঙ্কা আরও স্পষ্ট হয়েছে আর সে থেকেই সাংবাদিকের ওই প্রশ্ন, যার জবাবে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বাইডেন এমন মন্তব্য করেন। যা ম্যাথিউ মিলার এবং ব্লিঙ্কেনের বক্তব্যের সাথে একদমই সাংঘর্ষিক। একই সাথে একই দেশের দুজন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি একটি চলমান ইস্যুতে মন্তব্য করলেন যা দুটি ভিন্ন অর্থ প্রকাশ করে।

এ ছাড়াও ইসরায়েল এবং গাজার সংঘাতের মাঝে একমাত্র যুক্তরাষ্ট্রই ইসরায়েলের পরম বন্ধু। সময়ে সময়ে ইসরায়েলকে সব রকম সামরিক সহায়তা দিয়ে আসছে তারা। তাদের কল্যাণেই এ যুদ্ধ দিনের পর দিন আরও বেগবান হচ্ছে।

কিন্তু সেই ইসরায়েলের বিরুদ্ধেও প্রায়শ নানা রকমের বেফাঁস মন্তব্য করে বসে বাইডেন প্রশাসন। এইতো সম্প্রতি ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) গাজায় ব্যাপক অভিযান চালানোর সময় ইসরায়েলের সেসব সরকারি কর্মকর্তা অভিযানকে সহিংস করার নির্দেশ দিচ্ছেন, তাদের ওপর ভিসা বিধিনিষেধ আরোপের হুমকি দিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন।

এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমি ইসরায়েলের নেতাদের জোরালোভাবে বলছি, ‘পশ্চিম তীরে ব্যাপক সহিংসতা চলছে এবং অবশ্যই তা বন্ধ করতে হবে। যদি তা না হয়, সেক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্র তার নিজস্ব বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়ার প্রস্তুতি শুরু করতে বাধ্য হবে। সেসব পদক্ষেপের মধ্যে ভিসা নিষেধাজ্ঞাও অন্তর্ভুক্ত।‘

কিন্তু এদিকে আবার সম্প্রতি গাজায় হামলার প্রতিবাদে লোহিত সাগরে বাণিজ্যিক জাহাজে হুতিদের বারবার ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলার প্রতিক্রিয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক বাহিনী ইয়েমেনের হুতি নিয়ন্ত্রিত এলাকায় বেশ কয়েকটি লক্ষ্যবস্তুতে ব্যাপক হামলা চালিয়েছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের নির্দেশেই লোহিত সাগরে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যিক জাহাজগুলোতে হুতিদের নজিরবিহীন হামলার সরাসরি প্রতিক্রিয়া হিসেবে এই হামলা চালানো হয়।

অর্থাৎ, মুখে এক কিন্তু কথায় কাজে আরেক যুক্তরাষ্ট্রের আসল উদ্দেশ্য যে কি দিনে দিনে তা বোঝা বড়ই মুশকিল হয়ে দাঁড়িয়েছে। আর এ সকল বিচ্ছিন্ন কারণেই বিশ্ব রাজনীতিতে যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকাণ্ড খুবই প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে দাঁড়িয়েছে আজকাল।



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭