ওয়ার্ল্ড ইনসাইড

প্রেসিডেন্ট হবার পথে ট্রাম্প, কেন এত জনপ্রিয়তা?


প্রকাশ: 16/01/2024


Thumbnail

দিনকে দিন বেড়েই চলেছে ট্রাম্পের জনপ্রিয়তা। এত এত আইনী ঝামেলা, ফৌজদারি মামলায় অভিযুক্ত হবার পরও ডোনাল্ড ট্রাম্পের জনপ্রিয়তায় এতটুকু ভাটা পড়েনি। বরং বেশ কয়েকটি ফৌজদারি মামলায় অভিযুক্ত হবার পর যেন তার অবস্থান আরো শক্তিশালী হয়েছে। ২০২৪ সালের মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের জন্য রিপাবলিকান প্রার্থীদের মধ্যে তার জনপ্রিয়তা বর্তমানে সবচেয়ে বেশি দেখা যাচ্ছে। অন্য সব মনোনয়নপ্রত্যাশীদের চেয়ে তিনি অনেক অনেক এগিয়ে। কিন্তু ডোনাল্ড ট্রাম্প এত জনপ্রিয় কেন? মার্কিনিদের মধ্যে কেন এত ট্রাম্প প্রীতি? বহু বিতর্কের পরও কেন বেড়েই চলেছে ট্রাম্পের জনপ্রিয়তা? এর কারণ কি?

বিতর্ক আর ডোনাল্ড ট্রাম্প যেন একই সূত্রে গাঁথা, এটা কমবেশি সবাই স্বীকার করে। জনসম্মুখে বেফাস কথাবার্তা, উদ্ভট সব কর্মকাণ্ড, মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনকে প্রকাশ্যে ‘নিকৃষ্টতম প্রেসিডেন্ট’ অ্যাখ্যা দেয়া, এসব যেন কেবল ট্রাম্পের পক্ষেই সম্ভব। কিন্তু শত সমালোচনা আর বিতর্ক সত্ত্বেও ট্রাম্পকেই পছন্দ করছে আমেরিকান জনগণ। আর এর প্রমাণ মিললো আরও একবার।

গতকাল সোমবার (১৫ ডিসেম্বর) যুক্তরাষ্ট্রের আগামী প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে আইওয়া ককাস অঙ্গরাজ্যের মধ্য দিয়ে রিপাবলিকান পার্টির প্রার্থী বাছাইয়ের প্রথম ধাপ শুরু হয়। আর এই প্রথম ধাপে বেশ বড় ব্যবধানে জয় পেয়েছেন ট্রাম্প।

আইওয়া ককাসে জাতিসংঘে যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক রাষ্ট্রদূত নিকি হ্যালি ও ফ্লোরিডার গভর্নর রন ডিস্যান্টিসকে অনেক বড় ব্যবধানে পরাজিত করেছেন ট্রাম্প। আর এই জয়ের মাধ্যমে প্রেসিডেন্ট পদে রিপাবলিকান পার্টির প্রার্থী হিসেবে টানা তৃতীয় দফায় মনোনয়ন পাওয়ার ক্ষেত্রে এক ধাপ এগিয়ে গেলেন ট্রাম্প। একই সঙ্গে ট্রাম্পের এই বিজয় রিপাবলিকান পার্টির ওপর তার অব্যাহত আধিপত্যকেই নির্দেশ করছে। জনপ্রিয়তায় এতটুকুও ভাটা পড়েনি সাবেক এই মার্কিন প্রেসিডেন্টের।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, জনপ্রিয়তা অর্জনে নিজস্ব কিছু ফর্মূলা রয়েছে ট্রাম্পের। যেগুলো অনুসরণ করে সাধারণের সমর্থন যোগানোর চেষ্টা করেন সাবেক এই মার্কিন প্রেসিডেন্ট।

যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকদের উদ্বেগের বিষয় হলো দেশের টালমাটাল অর্থনীতি, সামাজিক নিরাপত্তাহীনতা, বন্দুক সহিংসতা ও নারী অধিকারের মতো বিষয়গুলো। আর ট্রাম্প জনগণের নৈরাশ্য, অনিশ্চয়তা, হুমকি ও ভয়কে জনপ্রিয়তা অর্জনের কৌশল হিসেবে ব্যবহার করেন। সমস্যার সমাধান হোক বা না হোক, তিনি এসব সংকট কাটিয়ে ওঠার ক্ষেত্রে সমর্থকদের মধ্যে আশা জাগাতে সক্ষম। যেটাকে বলা হয়, ‘সাংস্কৃতিক হতাশাবাদের’ সুযোগ নেয়া। আর এটিই ট্রাম্পের সবচেয়ে বড় সাফল্য।

এ ছাড়াও ব্যক্তি হিসেবে ডোনাল্ড ট্রাম্পের নিজস্ব কিছু স্টাইল রয়েছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, ট্রাম্পের মধ্যে নিজেকে হিরো হিসেবে উপস্থাপনের প্রবণতা আছে। ২০১৬ সালের নির্বাচন থেকেই ট্রাম্প ‘আমেরিকান শত্রুদের’ বিপরীতে নিজেকে হিরো দাবি করে আসছেন। যেকোনো জনসমাবেশে তার আগমনও ঘটে সেভাবেই। এগুলো মানুষকে খুব সহজে প্রভাবিত করে।

এছাড়া বাইডেনের এই ক্ষমতাকালে বিশ্ব ইতোমধ্যেই বড় বড় দুইটি যুদ্ধ দেখে ফেলেছে, ট্রাম্পের সময়কালে এসব যুদ্ধ বিগ্রহ ছিল না বা হয়নি। অর্থনীতিতেও বেশ চাঙা ছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র।

এখন পর্যন্ত ট্রাম্পের বিরুদ্ধে ৯১টি ফৌজদারি মামলা হয়েছে। কখনো অর্থ সংক্রান্ত অপরাধের অভিযোগ, কখনো ফেডারেল আদালতে গোপনীয় দলিলপত্র নিজের কাছে রাখা এবং এর তদন্তে বাধা সৃষ্টির অভিযোগ, আবার কখনো ২০২০ সালের নির্বাচনের ফলাফল উল্টে দেবার জন্য ষড়যন্ত্র করার অভিযোগ। কিন্তু এতো কিছুর ভেতর দিয়েও ট্রাম্পের নির্বাচনী প্রচারাভিযান থামেনি। বরং তাতে আরো গতিসঞ্চার হয়েছে।

এ বিষয়ে ক্লিফোর্ড ইয়ং, যুক্তরাষ্ট্রে ইপসসের শীর্ষস্থানীয় একজন কর্মকর্তা বলেন, রিপাবলিকান ভোটারদের ৪০ থেকে ৪৫%-ই ট্রাম্প সমর্থক এবং তারা ট্রাম্পের চোখ দিয়েই দুনিয়াকে দেখে।

ইয়ং আরও বলেন, ‘তারা বিশ্বাস করে মি. ট্রাম্পের প্রতি অন্যায় করা হচ্ছে এবং তার বিরুদ্ধে এসব অভিযোগ রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।’

যার প্রমাণ বিভিন্ন জরিপ এবং কিছু রিপাবলিকান ভোটারের সাথে কথা বলার পরই মেলে, তারাও একই রকম মতামত দেয়।
আরিজোনার ৬১ বছর বয়সী ট্রাম্পের এক সমর্থক বলেন, ‘এটা হচ্ছে ট্রাম্পকে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন করতে না দেবার এক নির্লজ্জ চেষ্টা।’

এমনকি লুক গর্ডনের মত ট্রাম্প সমর্থক নন এমন রিপাবলিকানও এসব অভিযোগকে সন্দেহের চোখে দেখছেন। তিনি বলেন, তিনি দাবির বৈধতা নিয়ে সন্দেহ করছেন না বা ট্রাম্পকে সমর্থন করছেন না, কিন্তু এসব মামলা-তদন্তের পেছনের উদ্দেশ্য নিয়ে গভীর উদ্বেগ রয়েছে বলে তার ধারণা।

গত বছরের ৩১ জুলাই একাধিক জনমত জরিপের এক গড় থেকে দেখা যায়, ডোনাল্ড ট্রাম্প এসব জরিপে তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ফ্লোরিডার গভর্নর রন ডিসান্টিসের চাইতে ৩৭ পয়েন্টের বড় ব্যবধানে এগিয়ে ছিলেন, যার বর্তমান ফলাফল আইওয়া ককাস অঙ্গরাজ্যে ট্রাম্পের এই প্রাথমিক ধাপের বিজয়।

এই বছর হয়তো এটাই সবচেয়ে বড় প্রশ্ন হয়ে দাঁড়াবে যে- ট্রাম্পের মামলার বিচার ও দোষী সাব্যস্ত হওয়ার সম্ভাবনার ফলে রিপাবলিকান পার্টির ভেতরে ট্রাম্পের পক্ষে সমর্থনে ভবিষ্যতে কোনো পরিবর্তন হয় কি না। এই বছর ট্রাম্পকে একদিকে প্রচারাভিযানের সময়সূচি এবং আরেকদিকে আদালতে হাজিরা দেওয়া - এ দুটিই সামাল দিতে হবে। 

যদিও ট্রাম্প বলেছেন, তিনি দোষী সাব্যস্ত হলেও বা দণ্ডিত হলেও প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা থেকে সরে দাঁড়াবেন না।

অর্থাৎ, মার্কিন রাজনীতিতে এক অভূতপূর্ব পরিস্থিতি তৈরি হবে। ইয়ংএর মতে - এটাই হবে দেখার বিষয় যে ট্রাম্পের 'জনমত জরিপে এগিয়ে থাকা' আর 'ইলেক্টেবিলিটি অর্থাৎ ভোট পাবার উপযুক্ত হওয়া' - এ দুই সূচকে কোন পরিবর্তন হয় কি না।
আপাতত যা দেখা যাচ্ছে তা হলো, ট্রাম্প জনসমর্থনের দিক থেকে বর্তমান প্রেসিডেন্ট বাইডেনের বেশ কাছাকাছিই আছেন।


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭