ইনসাইড বাংলাদেশ

যেভাবে নির্বাচিত হবেন সংরক্ষিত নারী আসনের এমপিরা


প্রকাশ: 17/01/2024


Thumbnail

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিজয়ীদের গেজেট ৯ জানুয়ারি প্রকাশ করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। পরের দিন ১০ জানুয়ারি জাতীয় সংসদে শপথ নিয়েছেন নবনির্বাচিত সদস্যরা। ১১ জানুয়ারি শপথ নিয়েছেন মন্ত্রিসভার সদস্যরাও। এবার সংরক্ষিত নারী আসনে নির্বাচনের পালা।

সংবিধান অনুযায়ী, নারীদের জন্য জাতীয় সংসদে ৫০টি আসন সংরক্ষিত রয়েছে। সাধারণ নির্বাচনের ফলের গেজেট প্রকাশের ৯০ দিনের মধ্যে এসব সংরক্ষিত আসনের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে হবে। এ হিসাবে চলতি বছরের ৯ এপ্রিলের মধ্যে ইসিকে সংসদের সংরক্ষিত নারী আসনের ভোট করতে হবে। দ্বাদশ সংসদের নবনির্বাচিত সদস্যদের ভোটে তারা নির্বাচিত হবেন। এরইমধ্যে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিয়ে এগোচ্ছে ইসি।
 
মঙ্গলবার (১৬ জানুয়ারি) দুপুরে এক ব্রিফিংয়ে নির্বাচন কমিশনের অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ জানান, চলতি বছরের ফেব্রুয়ারির মধ্যেই সংসদের সংরক্ষিত নারী আসনের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচনী তফসিল হতে পারে আগামী সপ্তাহেই। অর্থাৎ সংসদের প্রথম অধিবেশনেই ৫০টি সংরক্ষিত নারী আসনের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
 
সংরক্ষিত আসনে নির্বাচন প্রক্রিয়া
 
সংসদের আসনের সংখ্যানুপাতে নির্ধারিত নারী আসনে রাজনৈতিক দল বা জোটগুলো তাদের নির্ধারিত আসনের জন্য একক প্রার্থী মনোনয়ন দেয়ায় তারা বিনাভোটে নির্বাচিত হন। জাতীয় সংসদের সাধারণ নির্বাচনের মতো সংরক্ষিত মহিলা আসনের নির্বাচনে তফসিল ঘোষণার প্রয়োজন পড়লেও ভোটার ও আসনবণ্টনসহ কমিশনকে এই নির্বাচনের নানা প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যেতে হয়। এ বিষয়টি জাতীয় সংসদ (সংরক্ষিত মহিলা আসন) নির্বাচন আইনে বিস্তারিত তুলে ধরা হয়েছে।
 
এই আইন অনুযায়ী, নির্বাচিত সংসদ সদস্যদের মধ্যে যারা শপথ গ্রহণ করেছেন তাদের তথ্য তিন কার্যদিবসের মধ্যে সংসদ সচিবালয়ে নির্বাচন কমিশনে পাঠাবে। আর নির্বাচিতদের ফল গেজেট আকারে প্রকাশের পরবর্তী ২১ কার্যদিবসের মধ্যে নির্বাচন কমিশনে দল বা জোটগুলো বা স্বতন্ত্র প্রার্থীরা তাদের জোটের অবস্থান নির্বাচন কমিশনকে জানাতে হবে। এদিকে গেজেট হওয়ার ৩০ দিনের মধ্যে সংরক্ষিত মহিলা আসনে নির্বাচনের উদ্দেশে নির্বাচন কমিশন সাধারণ আসনে নির্বাচিত সদস্যদের রাজনৈতিক দল বা জোটওয়ারী সদস্যদের আলাদা আলাদা তালিকা প্রস্তুত করবে। সে অনুযায়ী দ্বাদশ সংসদের সংরক্ষিত নারী আসনের নির্বাচন অনুষ্ঠানে ৩০ জানুয়ারির মধ্যে দলগুলো ইসিতে জোটের তথ্য দেবে। ইসি ৮ ফেব্রুয়ারির মধ্যে তালিকা প্রস্তুত করবে।
 
তালিকা প্রস্তুতের পরের কার্যদিবসে সেই তালিকা নির্বাচন কমিশনে প্রকাশ্য কোনো স্থানে টাঙিয়ে দেয়া হবে। একইসঙ্গে সংসদ সচিবালয়কে সেই তালিকার প্রত্যায়িত কপি পাঠিয়ে তা টাঙানোর জন্য বলবে। নির্বাচনের আগে সেই তালিকার আর কোনো পরিবর্তন করা যাবে না। তবে কোনো করণিক ভুল হলে নির্বাচন কমিশন তা সংশোধন করতে পারবে।
  
আসনবণ্টন বিদ্যমান আইন অনুযায়ী সংরক্ষিত আসনের মহিলা সদস্যদের জন্য কোনো নির্ধারিত নির্বাচনী এলাকা নেই। তারা কেবল দলীয় বা জোটের সদস্য হিসেবে পরিচিত হবেন। এক্ষেত্রে দল বা জোটের প্রাপ্ত আসনের ভিত্তিতে মহিলা আসন বণ্টিত হবে।
 
সংবিধান অনুসারে বর্তমানে সংরক্ষিত নারী আসন সংখ্যা ৫০। আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব পদ্ধতিতে এবার আওয়ামী লীগ ৩৮টি (নৌকা প্রতীকে জয়ী জাসদ ও ওয়ার্কার্স পার্টির দুইজনসহ), জাতীয় পার্টি ২টি এবং স্বতন্ত্র প্রার্থীরা জোটভুক্ত হয়ে ১০টি সংরক্ষিত আসন পেতে পারেন।
 
সরাসরি নির্বাচনে ওয়ার্কার্স পার্টি, জাসদ, কল্যাণ পার্টি ১ টি করে আসন পাওয়ায় তারা সংরক্ষিত নারী আসন পাচ্ছে না। তবে স্বতন্ত্ররা কোথাও যোগ দিলে হিসাব পাল্টাতে পারে।
  
আইন অনুযায়ী শপথ নেয়া সংসদ সদস্যরাই সংরক্ষিত আসনের নির্বাচনে ভোটার হবেন এবং এই ভোটাররা কেবল নিজেদের দলের প্রাপ্ত আনুপাতিক আসনের সংসদ সদস্য নির্বাচনের জন্য ভোট দিতে পারবেন। এক্ষেত্রে বণ্টিত আসনে একক প্রার্থী হলে ভোটগ্রহণের প্রয়োজন পড়বে না। কিন্তু বণ্টিত আসনের তুলনায় ওই দল বা জোটের প্রার্থী বেশি হলে ভোট নিতে হবে। এক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ভোট পাওয়া প্রার্থীরাই নির্বাচিত বলে গণ্য হবেন।
 
তফসিল জাতীয় সংসদের সংরক্ষিত নারী আসন আইন-২০০৪ অনুযায়ী, সাধারণ নির্বাচনের মতো সংরক্ষিত আসনের নির্বাচনে তফসিল ঘোষণা করতে হয়। এক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশনের ঊর্ধ্বতন কোন কর্মকর্তা রিটার্নিং কর্মকর্তার নিয়োগপ্রাপ্ত হবেন। নির্বাচন কমিশন জোটের তালিকা প্রকাশ্যে টানানোর পর এ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করে রিটার্নিং কর্মকর্তা, সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা ও পোলিং কর্মকর্তা নিয়োগ করবে। একইসঙ্গে মনোনয়নপত্র দাখিল, বাছাই ও ভোটের দিন ঘোষণা করবে। এছাড়া ভোটগ্রহণের স্থান নির্ধারণ করবে। ভোটের প্রয়োজন পড়লে সংসদ ভবনে ভোটকেন্দ্র স্থাপন করা হবে।
 
এদিকে কোনো দল বা জোট যদি তাদের প্রাপ্য নারী সংসদ সদস্য পদে প্রার্থী না দেয় বা প্রাপ্য আসনের তুলনায় কম দেয় সেক্ষেত্রে ওই আসনগুলোতে সরাসরি ভোটের প্রয়োজন পড়বে। তবে এক্ষেত্রে দলভিত্তিক কোনো বণ্টন হবে না। সব দল বা জোট প্রার্থী দিতে পারবে।
 
উল্লেখ্য, ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত নির্বাচনে ২৯৯টি আসনের মধ্যে ২২২টিতে জয় পায় আওয়ামী লীগ। এছাড়া স্বতন্ত্রদের মধ্যে বিজয়ী হন ৬২ জন। আর জাতীয় পার্টি জয় পেয়েছে ১১টি আসনে। দুটিতে জয় পেয়েছে আওয়ামী লীগের শরিক দল জাসদ ও বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি এবং একটিতে জয় পেয়েছে কল্যাণ পার্টি। স্বতন্ত্র প্রার্থীর মৃত্যুতে নওগাঁ-২ আসনের ভোটগ্রহণ স্থগিত রয়েছে। ১২ ফেব্রুয়ারি ওই আসনে ভোটগ্রহণ হবে।



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭