আবারও যুক্তরাষ্ট্রের মালিকানাধীন জাহাজে হুতিদের হামলা

আবারও যুক্তরাষ্ট্রের মালিকানাধীন জাহাজে হামলা চালিয়েছে ইয়েমেনের সশস্ত্র গোষ্ঠী হুতি। ওয়াশিংটন বলেছিল আবারও ‘বৈশ্বিক সন্ত্রাসী সংগঠন’ হিসেবে ইরানপন্থি এই সশস্ত্র গোষ্ঠীকে ঘোষণা করা হবে। এই ঘোষণার পরই হুতিরা এডেন উপসাগরে মার্কিন মালিকানাধীন জাহাজে এ হামলা চালায়।

বৃহস্পতিবার (১৮ জানুয়ারি) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি।

এর আগে ইয়েমেনের ইরানপন্থি সশস্ত্র গোষ্ঠী হুতি বিদ্রোহীদের ‘সন্ত্রাসী সংগঠন’ হিসেবে ঘোষণা করা হবে বলে জানায় যুক্তরাষ্ট্র। হুতিদের নতুন এই উপাধির জন্য মার্কিন আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে হুতি তহবিল স্থগিত করতে হবে এবং গোষ্ঠীটির সদস্যদের যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ থেকে নিষিদ্ধ করা হবে বলে জানা যায়।

সশস্ত্র এই গোষ্ঠীটি বলেছে, তারা ‘জেনকো পিকার্ডি’ নামের একটি বাল্ক ক্যারিয়ারকে লক্ষ্য করে ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করে এবং সেটি লক্ষ্যবস্তুতে ‘সরাসরি আঘাত’ হানে। মার্কিন সেনাবাহিনী বলছে, বুধবার সন্ধ্যায় ওই জাহাজটিতে ড্রোন হামলা হয়েছে।

এদিকে লোহিত সাগরে ইসরায়েল সংশ্লিষ্ট সব জাহাজকে লক্ষ্যবস্তু করছে সশস্ত্র গোষ্ঠী হুতি। এর জেরে ইরান-সমর্থিত এই গোষ্ঠীর অবস্থানে দফায় দফায় হামলা চালাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। এমন অবস্থায় ফিলিস্তিনের গাজার বাইরেও নতুন করে যুদ্ধ ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে।

ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী গোষ্ঠী হামাস এবং ইসরায়েলের যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে ওই অঞ্চলে সংঘাত ছড়িয়ে পড়ার ক্রমবর্ধমান ঝুঁকি তৈরি হয়েছে। ওই অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম বিরোধী ইরানের মিত্ররাও লেবানন, সিরিয়া এবং ইরাক থেকে মার্কিন স্বার্থকে লক্ষ্যবস্তু বানানোয় এতে নতুন করে উত্তেজনা দেখা দিয়েছে।

এর মাঝেই হুতিদের সাথে যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা জোটের হামলা-পাল্টা হামলার ঘটনায় ব্যাপক উদ্বেগ বৃদ্ধি পেয়েছে।

সম্প্রতি গাজায় ইসরায়েলি আগ্রাসন শুরু হওয়ার পর হামাসের সমর্থনে লোহিত সাগরে ইসরায়েল সংশ্লিষ্ট বা ইসরায়েলগামী জাহাজগুলোতে ধারাবাহিক হামলা চালিয়ে আসছে হুথিরা। জবাবে গত বৃহস্পতিবার ইয়েমেনে হুতিদের অন্তত ২৮টি অবস্থানে আকাশ ও নৌপথে যৌথ হামলা চালায় যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য। এতে অন্তত পাঁচজন নিহতও ছয়জন আহত হয়। এর একদিন পর যুক্তরাষ্ট্র একাই আরেকবার হুথিদের বিরুদ্ধে হামলা করে।

হুতিরা মূলত ইয়েমেনের শিয়া মুসলিম সংখ্যালঘু জাইদি নামের উপ-সম্প্রদায়ের সশস্ত্র গোষ্ঠী। বেশিরভাগ ইয়েমেনি হুতিদের নিয়ন্ত্রণাধীন এলাকায় বসবাস করে। পাশাপাশি সানা এবং ইয়েমেনের উত্তরে হুথিরা লোহিত সাগরের উপকূলরেখাও নিয়ন্ত্রণ করে থাকে।

চলতি মাসের শুরুর দিকে যুক্তরাজ্য এবং যুক্তরাষ্ট্র ইয়েমেনে কয়েক ডজন হুতি লক্ষ্যবস্তুতে বিমান হামলা চালায়। এরপর আরও কয়েক দফায় হুতিদের বিরুদ্ধে মার্কিন হামলার ঘটনা ঘটে।

বুধবার সন্ধ্যায় হুতি গোষ্ঠীর একজন মুখপাত্র বলেছেন, তারা সফলভাবে জেনকো পিকার্ডি জাহাজে হামলা করেছে এবং এই আক্রমণটি ‘আমাদের দেশের বিরুদ্ধে আমেরিকান-ব্রিটিশ আগ্রাসনের’ প্রতিক্রিয়ায় করা হয়েছে।

মার্কিন সামরিক বাহিনী জানিয়েছে, ইয়েমেনের হুতি নিয়ন্ত্রিত এলাকা থেকে উৎক্ষেপণ করা ড্রোন জাহাজটিতে আঘাত হেনেছে। তারা বলেছে, হামলায় কিছু ক্ষতি হয়েছে, কিন্তু কেউ আহত হয়নি এবং জাহাজটি সমুদ্রে চলাচলের উপযোগীই রয়েছে।

উভয়পক্ষের এই সংঘাতের কারণে গাজা-ইসরায়েল যুদ্ধের জেরে মধ্যপ্রাচ্যে শুরু হওয়া বিস্তৃত যুদ্ধের আশঙ্কা আরো বাড়িয়েছে।

উল্লেখ্য, ইসরায়েলি আগ্রাসন শুরুর পর থেকে গত প্রায় তিন মাস ধরে লোহিত সাগরে ইসরায়েল সংশ্লিষ্ট ও ইসরায়েলগামী জাহাজে অব্যাহতভাবে হামলা চালিয়ে আসছে হুতি বিদ্রোহীরা। ইরান সমর্থিত সশস্ত্র এই গোষ্ঠী জানিয়েছে, যতদিন গাজায় ইসরায়েলের বর্বরতা চলবে ততদিন তারা হামলা চালিয়ে যাবে।

পরে যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য একত্রে ইয়েমেনে হামলা চালানোর পর যুক্তরাষ্ট্রের হামলার জবাবে লোহিত সাগরে যুক্তরাজ্য ও মার্কিন সৈন্যবাহিনীকে লক্ষ্য করে রকেট হামলা চালায় হুতিরা। যা থেকে থেকে এখনও অব্যাহত রেখেছে হুতি গোষ্ঠী।