ইনসাইড বাংলাদেশ

টিআইবি কার ইশারায় চলে?


প্রকাশ: 18/01/2024


Thumbnail

ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বার্লিন ভিত্তিক একটি আন্তর্জাতিক সংগঠন। যার প্রধান উদ্দেশ্য হল দুর্নীতি প্রতিরোধ করা এবং দুর্নীতির বিরুদ্ধে জনজাগরণ তৈরি করা। সেই ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের বাংলাদেশ প্রশাখা ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ মূলত বিএনপি-জামায়াত নিয়ন্ত্রিত একটি প্রতিষ্ঠান। তবে বিএনপি-জামাতের স্বার্থের চেয়েও এই প্রতিষ্ঠানটি দেখে সুশীল সমাজের স্বার্থ। এক-এগারোর সময় এই প্রতিষ্ঠানটির আসল স্বরূপ উন্মোচিত হয়েছিল। সেই সময় ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল অগণতান্ত্রিক, অনির্বাচিত এবং সংবিধান পরিপন্থি সরকারকে সমর্থন জানিয়েছিল। এই সময় টিআইবি ড. ফখরুদ্দীন আহমদের সরকারকে বৈধতা দেওয়ার জন্য এক ধরনের রাজনৈতিক প্রচার যন্ত্রে পরিণত হয়েছিল। সেই টিআইবি এবারের নির্বাচনে প্রায় দুই সপ্তাহ পর গতকাল একটি রিপোর্ট প্রকাশ করেছে। এই রিপোর্টের বিষয়বস্তু নিয়ে কথা বলার আগে জানা দরকার যে টিআইবির এই ধরনের ম্যান্ডেট আছে কি না? 

নির্বাচন একটি স্বচ্ছতা সুশাসনের বিষয়। এটির সাথে সরাসরি ভাবে দুর্নীতির সম্পর্ক নেই। টিআইবির প্রধান ম্যান্ডেট এবং এনজিও ব্যুরোতে যে নিবন্ধন নিয়েছে তার মূল বিষয়বস্তু হল দুর্নীতি, স্বচ্ছতা এবং দুর্নীতি বিরোধী জনজাগরণ তৈরি করা। কিন্তু এই প্রতিবেদনটি রাজনৈতিক এবং একটি দলের মুখপত্র হিসেবেই টিআইবি দিয়েছে। টিআইবি এই সময় কেন এই প্রতিবেদন প্রকাশ করলো—এ নিয়ে বিতর্ক তৈরি হয়েছে। 

যখন বাংলাদেশের নির্বাচনকে বিরোধী দলের অংশগ্রহণ ছাড়াও বিভিন্ন আন্তর্জাতিক মহল সুষ্ঠু গ্রহণযোগ্য বলে বর্ণনা করছে, যে সময় মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস পর্যন্ত টানা চতুর্থবারের মতো প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হওয়ায় শেখ হাসিনাকে অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা জানিয়েছেন, ঠিক সেই সময়ে টিআইবি’র এই রিপোর্টের উদ্দেশ্য কী? কার স্বার্থ হাসিলের জন্য টিআইবি এই প্রতিবেদনটি তৈরি করেছে? 

প্রথমত, টিআইবির এই ধরনের প্রতিবেদন করার কোন  ম্যান্ডেট নেই। এটি তাদের কার্যপরিধির বাইরে। কার্যপরিধির বাইরে গিয়ে এ ধরনের দূরভিসন্ধিমূলক প্রতিবেদন করার এখতিয়ার তাদের আছে কিনা এবং স্বাধীন দেশে এটি করতে পারে কি না—এ নিয়ে প্রশ্ন আছে। এ রকম বহু উদাহরণ দেখা যায়, একটি দেশে একটি এনজিও যে সমস্ত শর্ত এবং অঙ্গীকার করে তার কার্যক্রম পরিচালনা করে সেই শর্ত এবং অঙ্গীকার ভঙ্গ করলে তার নিবন্ধন বাতিল হয়ে যায়। এখন টিআইবি নিবন্ধন বাতিল হওয়া উচিত কি না—সেই প্রশ্নটি জনমনে উঠেছে। কারণ এ ধরনের রাজনৈতিক বক্তব্য দিয়ে একটি নির্বাচন সম্পর্কে মনগড়া প্রতিবেদন দেওয়ার এখতিয়ার এরকম একটি বেসরকারি সংস্থা থাকতে পারে কিনা—সেই প্রশ্ন উঠেছে। 

দ্বিতীয় বিষয় হল, টিআইবি যে রিপোর্টটি তৈরি করেছে সেই রিপোর্টের তথ্য উপাত্ত বা কোন কিছুরই যথার্থতা নেই। টিআইবি যেমন ভোটের হার নিয়ে বিতর্ক আছে বলে মন্তব্য করেছে, এই বিতর্ক টিআইবি কোথা থেকে পেলেন? টিআইবি কি কোন গবেষণা করেছে? টিআইবি’র কোন নিজস্ব জরিপ আছে? তারা কি জরিপ করে দেখেছে আসলে ভোটের হার কত? টিআইবি’র যদি নিজস্ব জরিপ থাকত, তাদের যদি কোন বিজ্ঞান ভিত্তিক তথ্য উপাত্ত থাকত সেই তথ্য উপাত্ত দিয়ে তারা নির্বাচন কমিশনের জরিপকে চ্যালেঞ্জ করত তাহলে একটি কথা ছিল। কিন্তু শুধুমাত্র বিতর্কিত বলে টিআইবি কার স্বার্থ রক্ষা করল। 

তৃতীয়ত, টিআইবি’র এই তথাকথিত গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পাতানো প্রতিদ্বন্দ্বিতা। আবার এই রিপোর্টেই বলা হয়েছে, আচরণ বিধির লঙ্ঘন হয়েছে। নির্বাচন সম্পর্কে ন্যূনতম জ্ঞান যদি টিআইবি’র তথাকথিত গবেষকদের থাকত তাহলে তারা এ ধরনের মন্তব্য করত না। কারণ একটি পাতানো নির্বাচন হলে এ ধরনের সহিংসতা এবং আচরণ বিধি লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটে না। নির্বাচন যদি পাতানোই হবে তাহলে সহিংস হবে কেন? 

যে সমস্ত স্বতন্ত্র প্রার্থীরা বিজয়ী হয়েছেন এবং যে সমস্ত আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা পরাজিত হয়েছেন তাদের বক্তব্য থেকে বুঝা যায় নির্বাচন হয়েছে তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ। বিএনপি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেনি জন্যই কি টিআইবি’র এই মর্ম বেদনা নাকি টিআইবি এখন সুশীল অনির্বাচিত অসাংবিধানিক সরকারকে ক্ষমতায় আনার জন্য শেষ চেষ্টা করছে? কারণ টিআইবি যে গণতন্ত্রের বিরুদ্ধে এবং সাংবিধানিক ধারাবাহিকতার বিরুদ্ধে এটি এখন প্রমাণিত। কাজেই টিআইবি’র উদ্দেশ্য কি—এই নিয়েই একটি গবেষণা হওয়া উচিত বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭