এডিটর’স মাইন্ড

বাংলাদেশ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের রহস্যময় ‘না’


প্রকাশ: 19/01/2024


Thumbnail

গতকাল বৃহস্পতিবার মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়েছিলেন। সেখানে বিভিন্ন বৈশ্বিক পরিস্থিতির সঙ্গে বাংলাদেশের পরিস্থিতি নিয়েও কথা হয় এবং ম্যাথিউ মিলার বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন। যেমনটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন মহল থেকে বলা হচ্ছে ম্যাথিউ মিলার তেমনই বলেছেন, নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হয়নি। নির্বাচনে সহিংসতা হয়েছে, বিরোধী দলের বিভিন্ন নেতাকে গ্রেপ্তার ব্যাপারটিও তুলে ধরেন ম্যাথিউ মিলার। কিন্তু এখানে একটি প্রশ্ন রাজনৈতিক অঙ্গনে আলোচিত হচ্ছে এবং চাঞ্চল্য সৃষ্টি করেছে।

ম্যাথিউ মিলারকে প্রশ্ন করা হয়েছিল যখন আপনারা বলছেন, বাংলাদেশের এই নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হয়নি তাহলে যুক্তরাষ্ট্র কি টানা চতুর্থ মেয়াদে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে স্বীকৃতি দেবে না? জবাবে ম্যাথিউ মিলার ইংরেজিতে দুটি শব্দ উচ্চারণ করেন, তা হল ‘নো নো’। ম্যাথিউ মিলারের এই ‘নো’ এর অর্থ কী তা নিয়ে কূটনৈতিক অঙ্গনে এখন নানা বিশ্লেষণ চলছে। এর দুই ধরনের অর্থ নিয়ে কথা বলছেন এবং দুই ধরনের অর্থের পক্ষেই বিশ্লেষকরা নানা যুক্তি দিচ্ছেন। 

প্রথম পক্ষের বিশ্লেষকরা বলছেন, এই ‘নো নো’ এর অর্থ হল, এই নির্বাচনকে যেহেতু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের স্বীকৃতি দেয়নি, তাই এই সরকারকেও তারা স্বীকৃতি দেবে না। কিন্তু কিছু কিছু কূটনীতিক বলছেন, এই প্রশ্নটি যে ভাবে করা হয়েছে তাতে এই নো নো এর অর্থ হল স্বীকৃতি না দেওয়ার বিষয়টি ম্যাথিউ মিলার নাকচ করে দিয়েছেন। প্রশ্নটিতে বলা হয়েছিল, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে কি স্বীকৃতি দেবে না? প্রশ্নটি ছিল না সূচক। না সূচকের বদলে ম্যাথিউ মিলার ইংরেজিতে বলেছেন ‘নো নো’ অর্থাৎ স্বীকৃতি না দেওয়ার বিষয়টিকে তিনি নাকচ করে দিয়েছেন। 

কূটনেতিক বিশ্লেষকরা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলারের নো এর দ্বিতীয় অর্থটিকেই গুরুত্বপূর্ণ মনে করছেন। তারা বলছে, ইতোমধ্যে পিটার ডি হাস বঙ্গভবনে শপথ অনুষ্ঠানে গিয়েছিল। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যদি নতুন সরকারকে স্বীকৃতি না দিত, তাহলে পিটার ডি হাস কোন অবস্থাতেই বঙ্গভবনের শপথ অনুষ্ঠানে যেতেন না। শপথের পরেও দেখা যাচ্ছে মার্কিন রাষ্ট্রদূত পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন এবং দুই দেশের সম্পর্ককে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন। এছাড়াও তিনি ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রীর সঙ্গেও সাক্ষাৎ করেছেন। এটিকে কূটনীতিক ভাষায় বলা হয় হয় ডি ফ্যাক্টো অর্থাৎ পরোক্ষ ভাবে এই নির্বাচন এবং সরকারকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র মেনে নিয়েছে। সে জন্যই মার্কিন রাষ্ট্রদূত সকলের সঙ্গে সাক্ষাৎ করছেন। তবে দুটি অবস্থানের মাঝামাঝি তৃতীয় একটি ধারণা জন্ম হয়েছে যেখানে কিছু কিছু কূটনীতিক বিশ্লেষক মনে করছেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আসলে বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে এবং নতুন সরকারের সাথে সম্পর্ক কি নেবে তা পর্যবেক্ষণ করছে। এখন পর্যন্ত এনডিআই এবং আইআরআই সমন্বয়ে গঠিত মার্কিন নির্বাচনী পর্যবেক্ষক দলের চূড়ান্ত রিপোর্ট তৈরি হয়নি। তারা এক মাস এই রিপোর্ট নিয়ে কাজ করবে বলে জানিয়েছে। কাজেই পূর্ণাঙ্গ বিপোর্ট পর আসলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সুস্পষ্ট অবস্থান বুঝা যাবে। 

বিভিন্ন দেশের নির্বাচন নিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান ভিন্ন ভিন্ন ছিল। কম্বোডিয়া বা নাইজেরিয়ায় যেমন নির্বাচনের পরপরই ওই দেশের কতিপয় ব্যক্তি এবং প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র ভিসা নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিল আবার অনেক দেশে এটি বিলম্ব করেছে। কোথাও কোথাও ছয় মাস বা এক বছর পর ভিসা নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে।

কূটনীতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আসলে এই সময়টিতে বাংলাদেশ বিশ্ব কূটনীতিতে কি ভূমিকা রাখে, চীনের সঙ্গে কি ধরনের সম্পর্ক বজায় রাখে এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থ এখানে কতটুকু সংরক্ষিত হয় সেটি দেখবে। আর এ কারণেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এই ‘নো’ এর অর্থ এখনও অস্পষ্ট এবং রহস্যময়।


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭